• facebook
  • twitter
Saturday, 6 December, 2025

জল যন্ত্রণার শহর

এই মৃত্যুর দায় কার, সে প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বিদ্যুৎ পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা সিইএসসি-র দিকেই আঙুল তুলেছেন।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

কয়েক ঘণ্টার প্রবল বৃষ্টিপাতে বানভাসি হলো গোটা কলকাতা শহর। দিনভর স্তব্ধ রইল জলজীবন। সোমবার মধ্যরাত থেকে বৃষ্টিপাত শুরু। মঙ্গলবার ভোররাত পর্যন্ত টানা বৃষ্টি চলেছে। প্লাবিত কলকাতা। জল কোথাও হাঁটু সমান, কোথাও বা কোমর ছাড়িয়েছে। জমা জলে বেহাল নাগরিক জীবন। এরই মধ্যে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গিয়েছেন ১০ জন। বৃষ্টিতে বিদ্যুতের তারের ছোঁয়ায় মৃত্যুর ঘটনা বিরল নয়। একই দিনে শুধু কলকাতাতেই আটজনের মৃত্যু নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন।

এই মৃত্যুর দায় কার, সে প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বিদ্যুৎ পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা সিইএসসি-র দিকেই আঙুল তুলেছেন। সিইএসসি-কে মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ এবং চাকরিও দিতে বলেছেন তিনি। মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে তদন্ত করা হবে বলে সিইএসসি জানিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে একথাও বলেছে, সিগন্যাল কিয়স্ক এবং বিদ্যুতের খুঁটির রক্ষণাবেক্ষণ তারা করে না। মুখ্যমন্ত্রীর কথাকে গুরুত্ব দিয়ে ক্ষতিপূরণ ও চাকরির ক্ষেত্রে তারা যা করার করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

Advertisement

শারদোৎসবের কয়েকদিন আগেই কলকাতার ৮ জন, বাঁকুড়া এবং উত্তর ২৪ পরগনার আরও ২ জন সহ সর্বমোট ১০ জন সহনাগরিকের মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ রাজ্য। জলবায়ু সহনশীল ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহনশীল নিকাশী ব্যবস্থায় গোটা শহরকে মুড়ে দেবার জন্য এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাঙ্ক থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ পেয়েছিল কলকাতা কর্পোরেশন। এর আগেও দূষণ কমাতে বেশ বড় অঙ্কের ক্লাইমেট লিটিগেশন ফান্ড পেয়েছে কলকাতা কর্পোরেশন। এইসব অর্থে কতটা কাজ হয়েছিল, তা পর্যালোচনা করে দেখা হয়নি।

Advertisement

২২ সেপ্টেম্বর রাতে বৃষ্টির যে হিসাব আবহাওয়া দপ্তর দিয়েছে, তাতে বৃহত্তর কলকাতায় বৃষ্টির পরিমাণ সবচাইতে কম ছিল দক্ষিণ দমদমে (৬১ মিমি) এবং সর্বোচ্চ ছিল বালিগঞ্জে (২৯৫ মিমি)। যে ২০টি জায়গায় বৃষ্টিপাতের হিসাব দেওয়া হয়েছে তার গড় করলে দাঁড়ায় ২০২.৬ মিলিমিটার। স্বাভাবিকের থেকে নিশ্চিতভাবেই তা অনেকটা বেশি। কিন্তু শহরবাসীর কাছে পূর্ব অভিজ্ঞতাবিহীন নয়, বিশেষত গত ৫০ বছরের নিরিখে। কলকাতা শহরে একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড হলো ৩৬৯.৬ মিলিমিটার, যা হয়েছিল ১৯৭৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর। তবে সাম্প্রতিক সময়েও কলকাতায় রেকর্ড বৃষ্টিপাত হয়েছে। যেমন, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একদিনে ২৫১.৪ মিমি বৃষ্টি হয়েছিল, যা গত ৩৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ একদিনের বৃষ্টিপাত ছিল।

ফলে ২২ সেপ্টেম্বরের ২০২,৬ মিমি গড় বৃষ্টিপাতের চাইতে বেশি বৃষ্টির অভিজ্ঞতা শহরবাসীর রয়েছে।
এই মৌসুমী প্রকৃতির জলবায়ু কখন কী রূপ নিতে পারে, তার ফলে কী মাত্রায় পৌঁছতে পারে এই সম্পর্কে আগাম সতর্কবার্তা ছিল। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের আগাম পূর্বাভাস গত কয়েকদিন ধরে টেলিভিশন আর খবরের কাগজের মাধ্যমে আমরা সকলেই জেনেছি। গত বাজেট অধিবেশনে ২০২৩ সালে প্রকাশিত ইন্টার গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জের ষষ্ঠ রিপোর্টটিকে আদৌ বিবেচনার মধ্যে আনা হয়নি। ২০২৩-এর ২০ মার্চ এই মূল্যায়ন প্রকাশিত হয়। সুইৎজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ইন্টার লাকেনের এই প্যানেলের ৫৮তম অধিবেশনে যে সতর্কবার্তা উচ্চারিত হয়েছিল, তা বৈজ্ঞানিক বোঝাপড়াকে ভিত্তি করে উষ্ণায়ন এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে বৃষ্টিপাতের বৈশিষ্ট্য যে বিপজ্জনক মাত্রা নিতে পারে সে সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল। ২০২৪ সালে আজারবাইজানের বাকুতে অনুষ্ঠিত ২৯তম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে তা পুনরুচ্চারিত হয়। সেখানে কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমারের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল উপস্থিত ছিলেন।

নদী-নালা, খাল-বিল সংস্কার করে জলধারণের ক্ষমতা না বাড়াতে পারলে, নিকাশী ব্যবস্থা নিয়মিত পরীক্ষা না করলে এই ধরনের পরিস্থিতিতে আগামী দিনেও নাগরিকদের ভুগতে হবে।

Advertisement