• facebook
  • twitter
Saturday, 6 December, 2025

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক জীবন

বাংলায় বিপ্লবী আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ভূমিকা ছিল। তিনি গোপনে শিবপুর, ডোমজুড়, সালকিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে বিপ্লবীদের নানাভাবে সাহায্য করতেন। বিশিষ্ট বিপ্লবী নেতা বিপিন বিহারী গাঙ্গুলী সম্পর্কে শরৎচন্দ্রের মামা ছিলেন।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়

১৯২০ সালে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বাংলা সহ প্রদেশ কংগ্রেসের কমিটি গড়ে উঠলো। মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে এ সময় সারা ভারতবর্ষে অসহযোগ আন্দোলন সংগঠিত হয়। বাংলায় তখন নেতৃত্বে রয়েছেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস। আর হাওড়া জেলায় প্রদেশ কংগ্রেসের নেতৃত্ব গ্রহণ করলেন কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তিনি হাওড়া জেলা কংগ্রেস কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হলেন। পাশাপাশি শরৎচন্দ্র বঙ্গীয় প্রাদেশিক কমিটি এবং সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির সদস্য নির্বাচিত হলেন। হাওড়া জেলা থেকে (শিবপুর) প্রতিদিন রাজনৈতিক কাজে কলকাতায় আসতে হতো। ভবানীপুরে চিত্তরঞ্জনের বাড়িতে অথবা ওয়েলিংটনে নির্মল চন্দ্র চন্দ্রের বাড়িতে অথবা প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির দপ্তরে প্রত্যেকদিন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় আসতেন এবং কংগ্রেসের ভাবধারা যাতে সমগ্র জনগণের মধ্যে প্রসারিত হয় এবং ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন যাতে তীব্র হয় তার জন্য তিনি আলাপ আলোচনা সাংগঠনিক ক্রিয়াকলাপে লিপ্ত থাকতেন। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে এই সময় ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, নির্মল চন্দ্র, হেমন্ত কুমার সরকার, যতীন্দ্রমোহন দাশগুপ্তের সঙ্গে। শচীনন্দন চট্টোপাধ্যায় তাঁর ‘শরৎচন্দ্রের রাজনৈতিক জীবন’ নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ‘কোন জটিল ব্যাপারের গ্রন্থিমোচনের জন্য রথী কর্মীরা যখন বৃহৎ টেবিলের চারিদিকে জটলা পাকিয়ে বসে মাথা কোটাকুটি করতেন ও সমস্যার গোলকধাঁধার মধ্যে হাবুডুবু খেতেন শরৎচন্দ্র তখন একান্তে বসে পেয়ালার পর পেয়ালা চায়ের ধোঁয়া মুখ থেকে পেটে ঢোকাতেন এবং একটা মোটা বর্মা চুরুটের ধোঁয়া মুখ থেকে নাক দিয়ে বার করে দিতেন। সকলে যখন হয়রান ও দিশেহারা হয়ে পড়তেন তখন তিনি সহসা গা ঝারা দিয়ে উঠে একটি মোক্ষম পরামর্শে সমস্যার দফারফা করতেন।’ যদিও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় চরকায় সুতো কেটে স্বাধীনতা লাভ করা যাবে এই তত্ত্বে বিশ্বাস করতেন না। তবুও কংগ্রেসের নিয়মানুবর্তিতা মানার জন্য তিনি খদ্দরের পোশাক পরিধান করতেন। সরকারি খেতাব বর্জন তাঁর কাছে স্বাদেশিকতা আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হতো। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন নাইটহুড পরিত্যাগ করেছিলেন তখন তিনি অমল হোমকে একটি চিঠিতে লেখেন, ‘আর এক লাভ— দেশের বেদনার মধ্যে আমরা যেন নতুন করে পেলাম রবিবাবুকে। এবার একা তিনিই আমাদের মুখ রেখেছেন।’ অপরদিকে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়কে শ্রদ্ধা করলেও তিনি ইংরেজ প্রদত্ত সার উপাধি পরিত্যাগ না করলে, শরৎচন্দ্র উল্লেখ করেন, ‘চাঁদেও কলঙ্ক রয়ে গেল। ওর উচিত ছিল স্যার টাইটেলটা ত্যাগ করা। ওর মত এত বড় পেট্রিয়ট যে টাইটেলটা ছাড়লেন না এর ব্যথা আমার মন থেকে কিছুতেই যায় না।’ কিন্তু পক্ষান্তরে শরৎচন্দ্র সাধারণ দেশবাসী কর্তৃক নেতৃত্বকে উপাধি প্রদান খুবই পছন্দ করতেন। যেমন বাল গঙ্গাধর তিলককে ‘লোকমান্য’ উপাধি তাঁর খুবই পছন্দ ছিল। চিত্তরঞ্জন দাসের ‘দেশবন্ধু’ উপাধি সম্বন্ধে তিনি বলেছিলেন এক জায়গায় ‘না, আমার মুখে তাঁর আর কোনো নামই আসে না। ঐ তো ওঁর সত্য পরিচয়। কে জানে কে সর্বপ্রথম ওই একটি নামের মধ্যেই ওর ভেতরকার যথার্থ রূপ আমাদের চিনিয়ে দিয়ে গিয়েছেন। দেশবন্ধু সত্যই দেশবন্ধু। দেশের শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-দরিদ্র, ভালো-মন্দ, নর-নারী, পতিত তুচ্ছ ব্যথিত সকলের আকৃত্রিম বন্ধু তিনি। মানুষের এত বড় দরদী বন্ধু আমি কখনও কোথাও দেখিনি।’ হাওড়া জেলায় সহকর্মী হিসেবে তিনি যাঁদের পেলেন তাঁরা হলেন প্রবোধ চন্দ্র বসু, গুরুদাস দত্ত, সুশীল বন্দোপাধ্যায়, নারায়ণ চন্দ্র বসু, ডাক্তার অমৃতলাল হাজরা, ধীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।

Advertisement

অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচির একটি অঙ্গ ছিল বিদ্যালয় স্কুল কলেজ বর্জন করা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই বিদ্যালয় বর্জনের বিষয়টি ভালোভাবে দেখতেন না। শরৎচন্দ্র রবীন্দ্রনাথের প্রতি প্রবল শ্রদ্ধা থাকলেও, এই বিষয়টিকে তিনি ভালোভাবে নিতে পারেননি। অধ্যাপক অজিত কুমার ঘোষ তাঁর ‘শরৎচন্দ্রের জীবনী ও সাহিত্য বিচার’ নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ‘অসহযোগ আন্দোলনকে তিনি সর্বতোভাবে গ্রহণ করিয়াছিলেন, সেজন্য তাঁহার বিশ্বাস ও সত্যের প্রতি অবিচল থাকিয়া তিনি কবি সহিত বাদপ্রতিবাদের প্রবৃত্ত হইলেন। শরৎচন্দ্র তখন প্রবল উদ্দীপনা লইয়া দেশের রাজনৈতিক আন্দোলনের সহিত নিজেকে জড়িত করিয়া ফেলিলেন। নিজে তিনি কখনো যশের আকাঙ্ক্ষী ছিলেন না। নিজের সকল প্রচার ও প্রকাশ্য তা হইতে প্রচ্ছন্ন রাখিয়া তিনি নিরলসভাবে দেশের কাজ করিয়া যাইতে লাগিলেন। রাজনৈতিক আন্দোলনে মাতিয়া তিনি নিজের অনেক অভ্যাস ও সখ বিসর্জন দিলেন। তাঁহার দাবা খেলা, মাছ ধরা বন্ধ হইল, আড্ডা ও মজলিসে তিনি বীতস্পৃহ হয়েছিলেন। আদরের ভেলু ও পোষা পাখিদের প্রতি উদাসীন হইয়া পড়িলেন। এই সময় সুরা পান তিনি বর্জন করিলেন।’

Advertisement

চৌরিচৌরার ঘটনায় গান্ধীজি অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করলে, অন্যান্য অনেক দেশবাসীর মত শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও কিছুটা ক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন। তিনি উল্লেখ করেছিলেন, ‘গোটাকত কনস্টেবল infuriated mob হাতে পুড়ে মরেছে তাতে কি হয়েছে? এতেই গোটা ভারতবর্ষের আন্দোলন বন্ধ করতে হবে? এত বড় বিরাট দেশের মুক্তির সংগ্রামে রক্তপাত হবে না? হবেই তো! রক্তের গঙ্গা বয়ে যাবে চারিদিকে সেই প্রবাহের মধ্যেই তো ফুটবে তো স্বাধীনতা রক্ত কমল। এতে ক্ষোভ কিসের, দুঃখ কিসের? কিসের অনুতাপ এতে? Non violence খুব Nobel idea, কিন্তু achievement of freedom is Nobler-hundred times nobler.’ চিত্তরঞ্জন দাস অসহযোগ আন্দোলনের সময় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তারপর কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করলে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় শ্রদ্ধানন্দ পার্কে দেশবন্ধুকে যে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করার জন্য অভিনন্দন পত্র লেখা হয়েছিল তা রচনা করেছিলেন সেটি হল, ‘বীর তুমি, দাতা তুমি, কবি তুমি, তোমার ভয় নাই, তোমার মোহ নাই— তুমি নির্লোভ, তুমি মুক্ত, তুমি স্বাধীন। রাজা তোমাকে বাঁধিতে পারে না। স্বার্থ তোমাকে ভুলাইতে পারে না। সংসার তোমার কাছে হার মানিয়াছে। বিশ্বের ভাগ্যবিধাতা তাই তোমার কাছেই দেশের শ্রেষ্ঠ বলি গ্রহণ করিলেন, তোমাকেই সর্বলোকচক্ষুর সাক্ষাতে দেশের স্বাধীনতার মূল্য সপ্রমাণ করিয়া দিতে হইল।’

দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস গয়া কংগ্রেসের সভাপতি হলেও তাঁর প্রস্তাবের সমর্থনে সদস্য সংখ্যা ছিল খুবই কম। গয়া কংগ্রেস থেকে ফেরবার পর চিত্তরঞ্জন দাসের অবস্থা কেমন ছিল শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বর্ণনা থেকে উপলব্ধি করা যায়, ‘গয়া কংগ্রেস হইতে ফিরিয়া আভ্যন্তরীণ মতভেদ ও মনোমালিন্য যখন চারিদিক আমাদের মেঘাচ্ছন্ন হইয়া উঠিল এই বাংলাদেশে ইংরেজি-বাংলা যতগুলি সংবাদপত্র আছে প্রায় সকলেই কণ্ঠ মিলাইয়া সমস্বরে তাঁহার স্তব গান শুরু করিয়া দিল। তখন একাকী তাহাকে ভারতের এক প্রান্ত হইতে অপর প্রান্ত পর্যন্ত যেমন করিয়া যুদ্ধ করিয়া বেড়াইতে দেখিয়াছি জগতের ইতিহাসে বোধকরি তাহার আর তুলনা নাই।’ বরিশালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কমিটির অধিবেশন বসে ১৯২৩ সালে। অধিবেশনের সভাপতি ছিলেন শ্যামসুন্দর চক্রবর্তী। চিত্তরঞ্জন দাস কিছু বলিতে উঠিলে সভাপতি বলেন, ‘I would not hear that man.’ শরৎচন্দ্র এই অপমান সহ্য করতে না পেরে অধিবেশন পরিত্যাগ করেন। বাসস্থানে আসিয়া শরৎচন্দ্র চিত্তরঞ্জন দাসকে উত্তেজিতভাবে বলেন, ‘যে রাজনীতি করতে ভদ্রলোককে এমন অপমানিত হতে হয় তাতে আর আমি নেই।’ চিত্তরঞ্জন দাস উত্তরে বলেন, ‘তাই করুন শরৎবাবু এবারে আপনি ছেড়ে দিন। আপনি সাহিত্যিক, শিল্পী মানুষ আপনার অনুভূতি বড় ডেলিকেট। এত ব্যথা আর অপমান আপনার সহ্য হবে না। এবার কলকাতায় ফিরে গিয়ে আপনি কংগ্রেস আর পলিটিক্স ছেড়ে দিন।’ প্রত্যুত্তরে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘আপনার এই অবস্থা চারিদিকে এই বাধা-বিদ্রূপের বেড়াজাল এর মধ্যে আপনাকে বিসর্জন দিয়ে পালিয়ে গিয়ে আত্মরক্ষা করি কী করে? না আপনাকে ফেলে পালাতে পারব না।’ এখান থেকে বোঝা যায় শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মানবিকতা কত মহৎ ছিল। স্বরাজ পার্টি গঠিত হবার পর যে দু’জন লোক চিত্তরঞ্জনের সবথেকে কাছের এবং সংগঠন গঠনে সহযোগী ভূমিকা পালন করেছিলেন তাঁরা হলেন সুভাষচন্দ্র বসু ও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।

বাংলায় বিপ্লবী আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ভূমিকা ছিল। তিনি গোপনে শিবপুর, ডোমজুড়, সালকিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে বিপ্লবীদের নানাভাবে সাহায্য করতেন। বিশিষ্ট বিপ্লবী নেতা বিপিন বিহারী গাঙ্গুলী সম্পর্কে শরৎচন্দ্রের মামা ছিলেন।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখার মধ্যেও রাজনৈতিক চেতনার পরিচয় পাওয়া যায়। ১৯২০ থেকে ৩০ পর্যন্ত তিনি যেসব রচনা লিখেছিলেন সেগুলির মধ্যে তাঁর রাজনৈতিক চেতনা ও গণচেতনার মূর্ত প্রতীক পরিলক্ষিত হয়। যেমন, ‘পথের দাবী’ উপন্যাসে শরৎচন্দ্র বিপ্লব বা শ্রমিক আন্দোলনকে সমর্থন করেছেন। শ্রমিক শ্রেণির দাবি যেমন ‘পথের দাবী’ উপন্যাসে ছিল, তেমনি কৃষক সমাজের অধিকার নিয়েও তিনি ‘দেনা পাওনা’ উপন্যাস ও মহেশের গল্পে উল্লেখ করেছেন। দেনা পাওনা উপন্যাসটি রচিত হওয়ার সময় সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন শুরু হয় নাই সত্য, কিন্তু তাঁর মনে সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারার উদয় হয়েছিল। শচীনন্দন চট্টোপাধ্যায় ‘শরৎচন্দ্রের রাজনৈতিক জীবন গ্রন্থে’ উল্লেখ করেছেন জমিদারি বিলোপ ও পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে নতুন মনোভাব ও আদর্শ, পাঠকদের মনে সময় প্রতিষ্ঠালাভ করতে লাগলো। শরৎচন্দ্রের কাছে সেই মনোভাব ও আদর্শ উৎসাহ পেতে লাগলো। শতশত কর্মী প্রতি সপ্তাহে শরৎচন্দ্রের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আলোচনা করতে লাগলেন এবং নতুন আদর্শ ও আলোকের প্রেরণা লাভ করতে লাগলেন… এই সময় তাঁকে কেন্দ্র করে হাওড়া, শিবপুরে পরপর কয়েকটি বৈঠক হয় ডা. ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, ডা. কানাইলাল গাঙ্গুলী, সন্তোষ কুমার মিত্র, সুবোধ বসু এই বৈঠকগুলিতে যোগদান করেছিলেন। এই বৈঠকগুলিতে তিনি বাংলাদেশে একটি সোশ্যালিস্ট পার্টি গঠনের পরিকল্পনা ঠিক করে দেন এবং আমাদের অবিলম্বে কাজ আরম্ভ করবার উপদেশ দেন। বাংলাদেশে প্রথম সোসালিস্ট নিউক্লিয়াস এরূপে তিনিই সৃষ্টি করে দেন।’ অভাগীর স্বর্গে ছোটগল্পের মাধ্যমে দুলে সমাজের করুণ কাহিনী শরৎচন্দ্র বর্ণনা করেছেন। এই গল্পের মাধ্যমে নির্যাতিত, নিম্নসমাজ কীভাবে অত্যাচারিত হয় উচ্চ সমাজের দ্বারা, কীভাবে নির্যাতিত নিপীড়িত হয়, তা সুন্দররূপে তিনি পরিস্ফুট করেছেন। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের নদিয়া শাখার বার্ষিক অধিবেশনে শরৎচন্দ্র সভাপতিত্ব করেন। সভাপতি হিসাবে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যে ভাষণটি প্রদান করেন পরে তার, ‘সাহিত্য নীতি’ নামে একটি গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছিল।

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম যখন হুগলি জেলা অনুসন্নতা ছিলেন তখন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লীলারানী গঙ্গোপাধ্যায়কে ১৯২৩ সালের ৭ মে একটি চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘হুগলি জেলা আমাদের কবি কাজী নজরুল উপোস করিয়া মর মর হইয়াছে। বেলা একটার গাড়িতে যাইতেছি, দেখি যদি দেখা করিতে দেয় ও দিলে আমার অনুরোধে যদি সে আবার খাইতে রাজি হয় না হইলে তার কোন আশা দেখিনা। একজন সত্যকার কবি। রবিবাবু ছাড়া আর বোধ হয় এখন কেহ আর এত বড় কবি নয়।’ পরে অবশ্য শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ‘চন্দননগরে আলাপ-আলোচনা’ শীর্ষক এক বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন— ‘আমি বড় চিন্তায় পড়েছি। Politics-এ যোগ দিয়েছিলুম। এখন তা থেকে অবসর নিয়েছি। ও হাঙ্গামা সুবিধে করতে পারিনি। অনেক সময় নষ্ট হল।’
এই বছর ১৭ সেপ্টেম্বর শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম সার্ধশতবর্ষ। বাঙালি হৃদয়ে শরৎচন্দ্র আতিথ্য পেয়েছেন, তার কারণ তিনি বাঙালির মর্মস্থলে তার বেদনার কেন্দ্রে আপন বাণীর স্পর্শ দিয়েছেন। কথাশিল্পী মানবদরদী সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র উৎপীড়িত, লাঞ্ছিত মানুষের জন্য লেখনি ধরেছেন, কেঁদেছেন পাঠককে কাঁদিয়েছেন ভাবিয়েছেন।

Advertisement