বিরোধীদের চাপে অবশেষে মঙ্গলবার সংসদে আবির্ভূত হলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। ১০০ মিনিট ভাষণও দিলেন। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম উচ্চারণ করলেন না। পহেলগামে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এত ত্রুটি কেন, তা নিয়ে একটি শব্দও খরচ করলেন না। পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় যুদ্ধবিমান ধ্বংসের বিষয়েও মুখে কুলুপ ছিল মোদীর। বদলে সন্ত্রাসবাদী হামলার জন্য কংগ্রেসের দেশভাগ মেনে নেওয়াকে দায়ী করলেন। অথচ মোদী-শাহরাই বাংলা ভাগের জন্য তাঁদের নেতা শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জিকে ‘কৃতিত্ব’ দেন। সব মিলিয়ে লোকসভায় ১৬ ঘণ্টা আলোচনায় সরকারের পক্ষ থেকে পহেলগামের হামলা কীভাবে সম্ভব হলো, কোথায় ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিল, তার দায় কার— এসব নিয়ে কোনও কথাই জানানো হল না। ভবিষ্যতে যে এ ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না, তারও কোনও নিশ্চয়তা দিতে পারলেন না প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
এদিকে লোকসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছেন, পহেলগাম হামলায় যুক্ত তিন সন্ত্রাসবাদীই নিহত হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর এই অপারেশনের নাম ‘মহাদেব’। শাহর এমন ঘোষণার পর প্রশ্ন উঠেছে, ঠিক সেই দিনই অভিযান এবং সন্ত্রাসবাদীরা মারা পড়ল, যেদিন সংসদে আলোচনা শুরু হলো। অথচ গত তিন মাসে জঙ্গিদের কোনও খোঁজই ছিল না। নিহত তিন জঙ্গিই পাকিস্তান থেকে এসেছিল। প্রমাণ হিসেবে অমিত শাহ জানিয়েছেন, নিহতদের দেহ শ্রীনগরে নিয়ে আসা হয়। সেখানে লোকজনেরা তাদের শনাক্ত করেছে। এই লোকেরা কারা, তা বলেননি অমিত শাহ। দ্বিতীয় প্রমাণ হিসেবে অমিত শাহ দাবি করেছেন, পহেলগামে নিহতদের দেহে মেলা কার্তুজের এফএসএল তদন্ত করা হয়েছিল। নিহতদের কাছ থেকে একটি আমেরিকান এবং দু’টি একে ৪৭ রাইফেল ও কার্তুজ পাওয়া যায়। এগুলির পরীক্ষা করে প্রমাণ হয়ে গেছে এই অস্ত্রই ব্যবহার করা হয়েছিল পহেলগাম হামলায়। তিন নম্বর প্রমাণ হিসাবে অমিত শাহ দাবি করেছেন, নিহত দুই সন্ত্রাসবাদীর কাছে পাকিস্তানের ভোটার পরিচিতি পত্র মিলেছে। একজনের কাছে পাওয়া গিয়েছে পাকিস্তানের চকোলেট। বিজেপির কিছু নেতাই এই সব প্রমাণ নিয়ে হাসাহাসি করেছেন। তাঁদের আলোচনায় উঠে এসেছে, পাক পরিচিতিপত্র নিয়ে জঙ্গিরা হামলা চালাতে এসেছিল। আর সঙ্গে ছিল সেদেশের চকোলেট। এসবই জঙ্গিরা তিন মাস ধরে বয়ে বেড়িয়েছে। কেমন অবিশ্বাস্য ঠেকছে না!
Advertisement
অমিত শাহ আরও বলেছেন, গত ২২ মে থেকে পাক সন্ত্রাসবাদীদের যোগাযোগ সিগন্যাল ট্র্যাক করা হচ্ছিল। ঘটনার পরদিনই নাকি অমিত শাহ বলে দিয়েছিলেন, ওরা যেন কোনওভাবেই পাকিস্তানে পালাতে না পারে। তাহলে সিগন্যাল ট্র্যাক করে ফেলার পর ২২ মে থেকে পরের দু’মাস ধরে কিসের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছিল, এর জবাব অবশ্য অমিত শাহ দেননি। এইসব হাস্যকর যুক্তি দিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের অবস্থান আরও দুর্বল করে তুলল মোদী সরকার।
Advertisement
সেনাকর্তা ক্যাপ্টেন শিবকুমার সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ায় বলেছেন, রাজনৈতিক নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের জন্যই আমাদের যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে। এ প্রসঙ্গ টেনে সরকারকে কাঠগড়ায় তোলেন বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধি। যদিও মোদী এই প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছেন। অন্যদিকে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীরও বক্তব্যের মূল লক্ষ্য ছিল পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলা কীভাবে হতে পারল তা নিয়ে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শহে কেন এর দায় নেবেন না? মানুষ আর ফাঁপা ভাষণ শুনতে চায় না। পহেলগামে যা হয়েছে তা কীভাবে এবং কেন হলো? প্রিয়াঙ্কা গান্ধী মোদীকে আক্রমণ করে বলেছেন, যে কোনও ঘটনার কৃতিত্ব দাবি করেন মোদী। অপারেশন সিঁদুর যখন শুরু হলো বিরোধীরা একজোট হয়ে সরকারকে সমর্থন করেছিল। আমাদের সেনা জওয়ানদের বীরত্ব নিয়ে গর্ব আছে, কিন্তু তার কৃতিত্বও প্রধানমন্ত্রী নিতে চান। খেলোয়াড়রা পদক আনলেও প্রধানমন্ত্রী নিজে কৃতিত্ব দাবি করেন। উনি কৃতিত্ব নিন, কিন্তু ব্যর্থতার দায়ও তো তাঁকেই নিতে হবে। ২০১৪ সাল থেকে মোদী সরকার আছে, জবাব তো তাঁকেই দিতে হবে। সরকারের ব্যর্থতার বড় প্রমাণ হলো পহেলগাম হামলা।
যে সরকার দাবি করছে সন্ত্রাসবাদের ইকোসিস্টেম ধ্বংস করে দিয়েছে, সেই সরকারের এই কথা বলার হিম্মত হচ্ছে না যে, পহেলগামের ঘটনা কীভাবে ঘটল, তা বলার।
Advertisement



