স্কুল চলাকালীন আচমকা ছাদ ধসে ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হল রাজস্থানের ঝালাওয়াড় জেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ মনোহর থানা এলাকার পিপলোড়ি গভর্নমেন্ট স্কুলে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এখন পর্যন্ত ৭ জন ছাত্রের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে, আহত কমপক্ষে ১৭ জন। আহতদের মধ্যে কয়েক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গিয়েছে। দু’জন পড়ুয়া আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন। এই ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাজস্থান সরকারের শিক্ষামন্ত্রী মদন দিলওয়ার বলেন, ‘মর্মান্তিক ঘটনা। শিশুদের হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। সরকারি খরচে শিশুদের চিকিৎসা করা হবে। ছাদ কীভাবে ভেঙে পড়ল, তা নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হবে।’
প্রশাসন সূত্রে খবর, দুর্ঘটনার সময় স্কুল ভবনের ভিতরে অন্তত ৬০ জন ছাত্রছাত্রী এবং কয়েক জন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। আচমকা স্কুল ভবনের একতলার ছাদ ধসে পড়ে। ধ্বংসস্তূপের নীচে অনেকে আটকে পড়েন। খবর পেয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা ছুটে এসে উদ্ধারকাজ শুরু করেন। এরপর পুলিশ, দমকল এবং বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের দল এসে উদ্ধারকাজে হাত লাগায়। উদ্ধারকাজে সাহায্য করতে চারটি জেসিবি মেশিন আনা হয়।
Advertisement
ঝালাওয়াড়ের পুলিশ সুপার অমিত কুমার সংবাদসংস্থাকে জানিয়েছেন, দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৭ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আহতদের প্রথমে মনোহর থানার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। যাঁদের অবস্থা গুরুতর, তাঁদের ঝালাওয়াড়ের বড় হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, স্কুল ভবনটি দীর্ঘদিন ধরেই জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল। অভিভাবকদের অভিযোগ, একাধিকবার প্রশাসনের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। স্কুলটিতে প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা হত।
Advertisement
ঘটনার পর স্কুলের বাইরে ভিড় জ্মান উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা। চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ, সন্তানদের খোঁজে কেউ ছুটে বেড়াচ্ছেন, কেউ অজানা আশঙ্কায় কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। রাজ্য প্রশাসনের তরফে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নিহত ও আহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা এবং সব রকম চিকিৎসার আশ্বাস দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এই মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে রাজ্যের অন্যান্য স্কুল ভবনের কাঠামোগত নিরাপত্তা খতিয়ে দেখার দাবিও উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।
এই ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী ভজনলাল শর্মা। এক্স পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আহত শিশুদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঈশ্বর প্রয়াত দিব্য আত্মাকে তাঁর চরণকমলে স্থান দিন এবং শোকাহত পরিবারকে এই অপরিসীম শোক সহ্য করার শক্তি দিন।’ বিরোধী দলের নেতা টিকারাম জুলিও এই ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট বলেন, ‘ঝালাওয়াড়ের মনোহরথানায় সরকারি স্কুল বিল্ডিং ভেঙে পড়ার ঘটনায় অনেক শিশু এবং শিক্ষক হতাহত হয়েছেন। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।’
এই ঘটনা কেন্দ্র করে রাজনৈতিক তরজাও শুরু হয়েছে। রাজস্থানের শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এটি কংগ্রেস সরকারের পাপ। গত ৫ বছরে কংগ্রেস সরকার স্কুলগুলির যত্ন নেয়নি। কংগ্রেস সরকারের আমলে স্কুলগুলি জরাজীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। সেগুলি মেরামত করা হয়নি। আমরা ধীরে ধীরে স্কুলগুলি মেরামত করছি। কোটাতেও এমন অনেক স্কুল রয়েছে, যার অবস্থা সম্পূর্ণ জরাজীর্ণ। অবস্থা এতটাই খারাপ যে ছাদের প্লাস্টার ভেঙে পড়ছে এবং তার মধ্যেই শিশুরা পড়াশোনা করছে।’ শিক্ষামন্ত্রী মদন দিলওয়ারের আশ্বাস, রাজস্থানের সমস্ত স্কুল নতুন করে তৈরি করা হবে এবং সম্পূর্ণ মেরামত করা হবে।
Advertisement



