• facebook
  • twitter
Saturday, 6 December, 2025

মুর্শিদাবাদের সরোজ ভিডিও কলে ‘দিদি’ দর্শন করালেন অসুস্থ মাকে

নেত্রী যখন মঞ্চে উঠলেন, সরোজ তখন ভিড় থেকে খানিক দূরে সরে দাঁড়িয়েছে। এক কোণে দাঁড়িয়ে ডুকরে কেঁদে ফেললেন সরোজ।

যেদিকেই চোখ যায়, শুধু মাথার পর মাথা। যেন গোটা রাজ্যের মানুষ জড়ো হয়েছেন ধর্মতলায়। একুশ জুলাইয়ের শহিদ তর্পণ দিবসে এমনই নজিরবিহীন জনজোয়ারে ভেসে গেল শহরের প্রাণকেন্দ্র। জনতার ঢল রীতিমতো চেপে ধরেছে গোটা চত্বর। ট্রাফিক নেই, হর্ন নেই, শুধু আছে স্লোগান আর উন্মাদনার গর্জন। তৃণমূল কংগ্রেসের শহিদ দিবস এ বছর পেরিয়ে গেল ৩১ বছরের মাইলফলক, আর সামনে ছাব্বিশের মহারণ। তাই এবারের সমাবেশ ঘিরে তৈরি হয়েছিল আলাদা রকমের এক উত্তেজনা। দলনেত্রীর মঞ্চে ওঠার আগেই রাজপথের বর্ণময় শোভাযাত্রা দেখে মনে হচ্ছিল যেন এটাই বর্তমান বাংলার প্রতিচ্ছবি। দিঘায় নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দিরের দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে থার্মোকলের কাটআউটে, যেখানে হাসিমুখে বসে মুখ্যমন্ত্রী। কেউ আবার ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’, ‘কন্যাশ্রী’, ‘রূপশ্রী’র সাফল্য তুলে ধরেছেন পোষাকেই। কেউ কবিতার ভাষায় লিখেছেন, ‘বিরোধীরা দেখো দুচোখ মেলে মেলে, আমার দিদির প্রকল্প সব পাচ্ছে ঘরে ঘরে…।’ কেউ আবার মুখে তুলেছেন দলীয় পতাকার রঙ। তাঁদের সঙ্গে নিজস্বী তোলার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছেন আরও অনেক কর্মী-সমর্থকেরা।

তেমনই একজন সমর্থক হলেন, মুর্শিদাবাদের প্রত্যন্ত এক গ্রাম থেকে আসা যুবক সরোজ বিশ্বাস। দলীয় রঙে রাঙানো তাঁর পরনের শার্ট-প্যান্ট, হাতে পতাকা। গীতাঞ্জলি স্টেডিয়ামে রবিবার রাতেই এসে উঠেছিলেন তিনি। দলের তরফে ছিল থাকার-খাবারের বিশেষ ব্যবস্থা। সোমবার ভোরেই পৌঁছেছেন ধর্মতলায়। নেত্রী যখন মঞ্চে উঠলেন, সরোজ তখন ভিড় থেকে খানিক দূরে সরে দাঁড়িয়েছে। এক কোণে দাঁড়িয়ে ডুকরে কেঁদে ফেললেন সরোজ। সরোজের কথায়, ‘এই প্রথম দিদিকে এত কাছ থেকে দেখলাম। বিশ্বাসই হচ্ছে না। দিদির গলা শুনেই মনটা শান্ত হয়ে যায়। মনে হয়, সব ঠিক হয়ে যাবে।’ গত দশ বছর ধরেই একুশে জুলাইয়ে কলকাতায় আসার স্বপ্ন ছিল তাঁর, কিন্তু বাড়িতে অসুস্থ মায়ের দায়িত্বে তা হয়ে ওঠেনি। এ বছর প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় মাকে রেখে এসেছেন নিশ্চিন্তে। নেত্রী তখন মঞ্চে বক্তৃতা দিচ্ছেন। নিজের ফোন বের করে ভিডিও কলে মাকে ‘দিদির’ ভাষণ শোনালেন সরোজ। গলার স্বর ধরে আসে তাঁর, ‘মা দিদিকে খুব ভালোবাসে। বাম আমলে আমাদের ওপর কী নির্যাতন হতো, মা নিজের চোখে দেখেছে। সেই থেকেই দিদির অনুগত।’ প্রশ্ন করা হলো, ভিডিও কলে কী এত দূর থেকে নেত্রীকে ঠিকঠাক দেখতে পেলেন তাঁর মা? সরোজের উত্তর, ‘হ্যাঁ, নিজের হাতে ফোনটা একদম উঁচু করে ধরেছি। বলেছি, দেখো মা, তোমার দিদিকে দেখো। এই আনন্দটা টিভিতে দেখার থেকেও অনেক বড়।’

Advertisement

Advertisement

Advertisement