• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

ট্রাম্পের শুল্ক-বাণ: কানাডার পণ্যে ৩৫ শতাংশ শুল্ক

ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে উত্তর আমেরিকার দুই প্রধান অর্থনীতির মধ্যে সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা।

ব্রাজিলের পর এবার সরাসরি কানাডার উপর শুল্ক-বাণ চালালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউস থেকে এক বিবৃতিতে তিনি ঘোষণা করেন, আগামী ১ আগস্ট থেকে কানাডা থেকে আমদানি হওয়া সমস্ত পণ্যের উপর ৩৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হবে। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে উত্তর আমেরিকার দুই প্রধান অর্থনীতির মধ্যে সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা।

হোয়াইট হাউস সূত্রে জানা গিয়েছে, কানাডার প্রেসিডেন্ট (আসলে প্রধানমন্ত্রী) মার্ক কার্নের উদ্দেশে ইতিমধ্যেই একটি চিঠি পাঠিয়েছেন ট্রাম্প। চিঠিতে তিনি শুল্ক আরোপের পেছনের দুটি কারণ স্পষ্ট করে জানিয়েছেন— প্রথমত, কানাডার সঙ্গে মার্কিন বাণিজ্য ঘাটতি এবং দ্বিতীয়ত, ব্যথানাশক মাদক ‘ফেন্টানাইল’-এর বেআইনি প্রবেশ।

Advertisement

ট্রাম্পের অভিযোগ, কানাডা হয়ে বিপজ্জনক মাদক ফেন্টানাইল আমেরিকায় ঢুকছে, যা যুক্তরাষ্ট্রে মাদক সমস্যাকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে। ‘অটোয়া ফেন্টানাইল প্রবেশ রুখতে ব্যর্থ,’ চিঠিতে লিখেছেন ট্রাম্প। তিনি আরও জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় না গিয়ে বরং কানাডা পাল্টা শুল্ক চাপিয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্র পক্ষে গ্রহণ করার প্রশ্নই নেই।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে আমেরিকায় পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে কানাডা শুল্ক-মুক্তি পেতে পারে একমাত্র একটি শর্তে— সে দেশের সংস্থাগুলিকে আমেরিকায় উৎপাদন চালু করতে হবে। না হলে, ৩৫ শতাংশের বাইরেও অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ট্রাম্প। এমনকি শুল্ক এড়িয়ে পণ্য প্রবেশের চেষ্টা হলে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

অটোয়াকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে ট্রাম্প এও স্পষ্ট করে দিয়েছেন, যদি কানাডা এরপর পাল্টা শুল্ক বসায়, তবে যতটা তারা বাড়াবে, ততটাই আমেরিকার ৩৫ শতাংশের উপর যোগ করা হবে। তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘আমেরিকার ডেয়ারি ফার্মাররা কানাডায় তাঁদের পণ্য বিক্রি করার সুযোগই পান না। কানাডা ডেয়ারি পণ্যে ৪০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসায়। এটা অসম প্রতিযোগিতা। আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতির জন্য এটাই বড় কারণ।’

প্রসঙ্গত, এর আগেও ট্রাম্প প্রশাসন কানাডার বিরুদ্ধে ফেন্টানাইল সরবরাহের অভিযোগ তুলে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল। তখন পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে কানাডার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো আমেরিকার পণ্যে একই শুল্ক চাপান। ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা বেড়েছিল। এবার পরিস্থিতি আরও জটিল আকার নিচ্ছে।

একইসঙ্গে জানা যাচ্ছে, গত দু’দিনে ট্রাম্প প্রশাসন অন্তত ২৫টি দেশের উদ্দেশে শুল্ক আরোপ সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছে। তাদের মধ্যে অধিকাংশের পণ্যের উপর ১৫ থেকে ২০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর ভাবনা রয়েছে। যদিও ভারতের ক্ষেত্রে এই শুল্ক চাপবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। ওয়াশিংটনের সঙ্গে নয়াদিল্লির বাণিজ্য আলোচনা চললেও এখনও পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি।

এদিকে বৃহস্পতিবার এক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় ট্রাম্প বলেন, ‘অন্যান্য বাণিজ্য অংশীদার যারা এখনও এই ধরনের চিঠি পাননি, তাদের উপর ব্যাপক শুল্ক আরোপের সম্ভাবনা রয়েছে। সবাই এখনও চিঠি পাননি। আসলে আমরা এখনও শুল্ক নির্ধারণ নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছি।’

বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন নির্বাচনের প্রাক্কালে ট্রাম্পের এই আগ্রাসী বাণিজ্যনীতি দেশের অভ্যন্তরীণ শিল্প এবং কর্মসংস্থানের প্রশ্নকে সামনে এনে ভোটের সমীকরণে প্রভাব ফেলতে পারে। তবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কে এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে এখনই সতর্ক মন্তব্য করছেন অর্থনীতিবিদেরা। যদিও ট্রাম্পের দাবি, ‘এই সিদ্ধান্ত বাজার ভালোভাবেই নিয়েছে। আজ মার্কিন শেয়ার বাজার নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।’

Advertisement