• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

জল জমলেই সরাসরি আইনি নোটিশ, তৎপর পুর প্রশাসন

পুর দপ্তরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, 'জমা জলই ডেঙ্গির আঁতুড়ঘর। এক ফোঁটা জল থেকেও মশা জন্ম নিতে পারে। তাই কোনওরকম ছাড় নয়।'

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

ডেঙ্গি ঠেকাতে রাজ্য জুড়ে আরও কড়া ভূমিকা নিতে চলেছে পুর প্রশাসন। শুধু সচেতনতায় থেমে নয়, এবার থেকে বাড়ির ছাদ, ফ্ল্যাটের বারান্দা কিংবা চৌহদ্দির মধ্যে কোথাও জল জমে থাকতে দেখলেই সংশ্লিষ্ট বাড়ির মালিককে সরাসরি পাঠানো হবে আইনি নোটিশ। সম্প্রতি রাজ্যের সব পুরসভাকে এই মর্মে নির্দেশ পাঠিয়েছে রাজ্য পুর দপ্তর।

এত দিন পর্যন্ত নিয়ম ছিল, প্রথমে সতর্ক করা হতো। দ্বিতীয়বার ধরা পড়লে তবে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতো। কিন্তু প্রশাসনের দাবি, সেই নিয়মে কাজের কাজ কার্যত কিছুই হচ্ছিল না। সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা না নেওয়ার ফাঁকে ছড়িয়ে পড়ছিল ডেঙ্গি। তাই এবার শুরুতেই আইনি পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

পুর দপ্তরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘জমা জলই ডেঙ্গির আঁতুড়ঘর। এক ফোঁটা জল থেকেও মশা জন্ম নিতে পারে। তাই কোনওরকম ছাড় নয়।’ স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর, চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫৬৭ জন। জুলাই-আগস্টেই বাড়ে সংক্রমণ। তাই আগে থেকেই প্রয়োজন সজাগ হওয়া।

Advertisement

পুরসভার স্বাস্থ্য কর্মীদের অভিযোগ, বহু ফ্ল্যাটেই ফ্রিজের ট্রে, ছাদের কোণে পড়ে থাকা ফুলের টব বা প্লাস্টিকের কৌটোয় জল জমে থাকছে দিনের পর দিন। কিছু বাসিন্দাকে একাধিকবার সতর্ক করা হলেও ফের অভিযানে গিয়ে সেই একই পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। পুর দপ্তরের মতে, এত সতর্কবার্তার পরেও যদি কেউ দায়িত্বজ্ঞানহীন হন, তবে আর ছাড় নয়।

দপ্তর সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, গত তিন বছরে কলকাতা পুর এলাকায় তিনজন বাড়ির মালিককে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হয়েছে। গত বছর বিধাননগর, দক্ষিণ দমদম ও হাওড়া পুরসভা এলাকায় এমন ৩২টি অভিযোগ জমা পড়েছে থানায়।

পুরকর্তারা মনে করছেন, আইনি নোটিশ পৌঁছনোর পর অধিকাংশ মানুষই সচেতন হয়ে পড়েন। এক কর্তা বলেন, ‘মুখে বললে অনেকেই শোনেন না। কিন্তু নোটিশ পাঠানো মাত্রই দেখা যাচ্ছে ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই নিজের ভুল শুধরে নিচ্ছেন। তাই এবার আর সময় নষ্ট না করে শুরুতেই আইনি পদক্ষেপে যাওয়াই আমাদের লক্ষ্য।’

এছাড়া নতুন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কোথায় কোথায় জল জমছে তা খুঁজে বের করে মাইক্রো-প্ল্যান করতে হবে প্রতিটি পুরসভাকে। প্রয়োজনে ব্যবহার করতে হবে ড্রোন। নজর দিতে হবে পরিত্যক্ত বাড়ি, ফাঁকা জমি, সরকারি অফিসগুলিতেও। কোনোভাবে নজরদারিতে গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে দপ্তর।

বৃষ্টির মরশুমে ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্ত আটকাতে এই কঠোর পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরাও। তাঁদের মতে, এমন আইনানুগ কড়াকড়িই এখন প্রয়োজন যাতে শহরের প্রতিটি নাগরিক নিজের দিক থেকে সচেতন হন। জমা জল রুখলেই রোখা যাবে ডেঙ্গির প্রকোপ—এটাই এখন পুর প্রশাসনের মূল বার্তা।

Advertisement