বেসরকারি সংস্থায় প্রতিদিন ১২ ঘণ্টার কাজের সময় চালু করার যে প্রস্তাব কর্ণাটক সরকার দিয়েছে, তার বিরুদ্ধে প্রবল আপত্তি জানিয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি তথা আইটি এবং আইটি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলির কর্মীরা। কর্ণাটক সরকারের এই পদক্ষেপকে ‘আধুনিক যুগের দাসত্ব’ বলে কটাক্ষ করেছেন তাঁরা। প্রসঙ্গত, অন্ধ্রপ্রদেশের পর এবার কর্ণাটকেও শ্রম আইন সংশোধন হতে চলেছে। কাজের সময় বাড়িয়ে ৯ থেকে ১০ ঘণ্টা করা হবে । এছাড়াও ওভারটাইমের সময় প্রতিদিনের ১ ঘণ্টা থেকে বাড়িয়ে ২ ঘণ্টা করা হবে বলে জানানো হয়েছে। এই নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনগুলি।
বুধবার কর্নাটক সরকারের শ্রম দপ্তর একটি বৈঠকে এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করে। বৈঠকে অংশ নেন বিভিন্ন শিল্প সংস্থার প্রতিনিধি ও ট্রেড ইউনিয়ন নেতারা। আলোচ্য বিষয় ছিল কর্নাটক শপস অ্যান্ড কমার্শিয়াল এস্টাব্লিশমেন্টস অ্যাক্টে সংশোধন এনে কর্মঘণ্টা বাড়িয়ে ১২ ঘণ্টা করা।
Advertisement
তীব্র আপত্তি জানিয়েছে কর্নাটক স্টেট আইটি/আইটিইএস এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন তথা কেআইটিইউ। সংগঠনের নেতারা বৈঠকে স্পষ্ট জানান, এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে কাজের নিরাপত্তা ও কর্মীদের ব্যক্তিগত জীবনে বড়সড় প্রভাব পড়বে। তাঁরা সব কর্মীকেই ঐক্যবদ্ধভাবে এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার ডাক দিয়েছেন।
Advertisement
কেআইটিইউ জানিয়েছে, বর্তমানে প্রচলিত আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ ১০ ঘণ্টা কাজের অনুমতি আছে (ওভারটাইম বা অতিরিক্ত সময়-সহ)। প্রস্তাবিত এই পরিবর্তন ১২ ঘণ্টার শিফট এবং ২টি ভাগে কাজের ব্যবস্থাকে আইনি বৈধতা দেবে। এর ফলে কর্মসংস্থান কমবে। বলা হয়েছে এক-তৃতীয়াংশ হারানোর আশঙ্কা তৈরি হবে।
কেআইটিইউ নেতা আদিগার কথায়, ‘এটি কোনও উতপাদন বাড়ানোর প্রস্তাব নয়, মানবিকতাবিরোধী। এই সংশোধনের উদ্দেশ্য কর্পোরেট মুনাফাকে প্রাধান্য দেওয়া, কর্মীদের মানুষের বদলে যন্ত্রে পরিণত করা।’কেআইটিইউ আরও জানায়, ২০২৪ সালের ‘মানসিক সুস্থতার অবস্থা সংক্রান্ত রিপোর্ট’ অনুযায়ী, কর্নাটকের কর্পোরেট ক্ষেত্রে ২৫ বছরের নিচের ৯০ শতাংশ কর্মী উদ্বেগজনিত মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। এই প্রস্তাব বর্তমান পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তাঁরা।
প্রসঙ্গত, এর আগেও কর্নাটকে আইটি সংস্থাগুলি কাজের সময় বাড়িয়ে ১৪ ঘণ্টা করার প্রস্তাব দিয়েছিল। সেই সময়ও তীব্র বিরোধিতার মুখে তা স্থগিত রাখতে হয়েছিল।
কর্ণাটক সরকারের পক্ষ থেকে এই আইনে সংশোধনীর যে প্রস্তাব রাখা হয়েছে তাতে দৈনিক কাজের সময় ১ ঘণ্টা বাড়ানো এবং ওভারটাইম ১ ঘণ্টা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। যা কার্যকরী হলে দিনে ১২ ঘণ্টা কাজ আইনত মান্যতা পাবে। এই সংশোধনীতে তিন মাসের সময়সীমায় ওভারটাইমের সময় ৫০ ঘন্টা থেকে বাড়িয়ে ১৪৪ ঘন্টা করার এবং ১০ জনের কম কর্মচারী রয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানগুলিকে এই আইনের আওতা থেকে বাদ দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
Advertisement



