• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

সিন্ধু জল চুক্তি পুনর্বহালের দাবিতে দিল্লিকে ৪ বার চিঠি পাকিস্তানের 

পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ জানান, এই চুক্তির উপরে ২৪ কোটি পাকিস্তানির জীবন নির্ভর করছে। তিনি বলেন, ভারতের সিদ্ধান্ত সঠিক নয়, বেআইনি।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত করার পর থেকে নাভিশ্বাস অবস্খা পাকিস্তানের। এই চুক্তি পুনরুদ্ধারের জন্য পাকিস্তান এখনও পর্যন্ত ভারত সরকারকে চার বার চিঠি দিয়েছে পাকিস্তান। প্রতি বারই পাকিস্তানের তরফে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আবেদন জানানো হয়েছে। সূত্রের খবর, চিঠিগুলি এসেছে পাকিস্তানের জলসম্পদ মন্ত্রকের সচিব সৈয়দ আলি মুর্তাজার কাছ থেকে। তিনিই এই চিঠিগুলি জলশক্তি মন্ত্রকে পাঠিয়েছিলেন। ভারতের তরফে এরপর সেগুলি বিদেশ মন্ত্রকে পাঠানো হয়। প্রসঙ্গত, ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগামে জঙ্গি হামলার পর ভারত ১৯৬০ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করে দেয়।পহেলগামের ঘটনার পর ভারত জানিয়ে দেয়, যত দিন পর্যন্ত পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদকে মদত দেওয়া বন্ধ না করবে, তত দিন এই চুক্তি স্থগিত রাখা হবে। এদিকে জল চুক্তি স্থগিত থাকায় পাকিস্তানে জলসঙ্কট ক্রমশ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।

ভারত সিন্ধু চুক্তি স্থগিত করার পর থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছে পাকিস্তান। পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ জানান, এই চুক্তির উপরে ২৪ কোটি পাকিস্তানির জীবন নির্ভর করছে। তিনি দাবি জানিয়েছেন, ভারতের সিদ্ধান্ত সঠিক নয়, বেআইনি। এই বিষয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিও আকর্ষণ করেছেন তিনি। শরিফের দাবি, সিন্ধু চুক্তি স্থগিত করে ভারত জলকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করতে চাইছে। কিন্তু তারপরও তার অবস্থানে অনড় থেকেছে ভারত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়ে দিয়েছেন, জল এবং রক্ত পাশাপাশি বইতে পারে না। পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদীদের মদত দেওয়া বন্ধ না করলে ভারত সিন্ধু জল চুক্তি পুনর্বিবেচনা করবে না।

Advertisement

সিন্ধু, ঝিলম, চন্দ্রভাগা, রাভি, বিয়াস এবং শতদ্রু এই ৬ নদী নিয়ে সিন্ধু নদী ব্যবস্থা। এদের তীরবর্তী এলাকা প্রায় ১১.২ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত। এর মধ্যে ৪৭ শতাংশ জমি পাকিস্তানে, ৩৯ শতাংশ জমি ভারতে ৪ শতাংশ জমি চিনে এবং ৬ শতাংশ জমি আফগানিস্তানে। ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান বিভক্ত হওয়ার আগেও ভারতের পাঞ্জাব এবং পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের মধ্যে জলবন্টন নিয়ে বিরোধ শুরু হয়েছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। সেইমতো পাকিস্তান দুটি প্রধান খাল থেকে জল পেতে থাকে। এই চুক্তি ১৯৪৮ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৪৮ সালের ১ এপ্রিল চুক্তিটি অকার্যকর হওয়ার পর ভারত ওই দুই খালের জল সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এর ফলে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের ১৭ লক্ষ একর জমির কৃষি ধ্বংস হয়ে যায়। চুক্তির পুনর্বিবেচনার পর ভারত জল সরবরাহ করতে সম্মত হয়।

Advertisement

১৯৫১ থেকে ১৯৬০ পর্যন্ত বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে জলবন্টন নিয়ে আলোচনা হয় এবং ১৯৬০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর করাচিতে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নেহেরু এবং পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এটিই হল সিন্ধু জল চুক্তি।

পহেলগামে জঙ্গি হামলার পরের দিন ২৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় এক সাংবাদিক বৈঠকে ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি ১৯৬০ সালের সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করেন। বলা হয়, যতক্ষণ  না পাকিস্তান বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্গে এবং ধারাবাহিকভাবে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়া বন্ধ না করবে ততদিন এই চুক্তি বহাল রাখবে ভারত। সংঘর্ষবিরতির পরও সিন্ধু চুক্তি নিয়ে ভারতের অবস্থান বদলায়নি দিল্লি। ফলে ইসলামাবাদের তরফে বারবার সেই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আর্জি জানানো হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, সিন্ধু চুক্তি নিয়ে বিশ্ব ব্যাঙ্কেরও দ্বারস্থ হয় পাকিস্তান। কিন্তু সেখানেও হতাশ হতে হয় ইসলামাবাদকে। বিশ্ব ব্যাঙ্ক সাফ জানিয়ে দেয়, তাঁদের মধ্যস্থতায় সিন্ধু জলচুক্তি হলেও সেই চুক্তিতে দুই দেশের অসন্তোষ বা আপত্তি থাকলে মধ্যস্থতার দায় বিশ্ব ব্যাঙ্কের নয়। দুই দেশের কেউ এই চুক্তিতে অসন্তোষ প্রকাশ করলে বিশ্বব্যাঙ্ক শুধু সেই সমস্যা সমাধানের জন্য নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ ঠিক করে দিতে পারে, কিন্তু নিজেরা মধ্যস্থতা করতে পারে না। অর্থাৎ ভারত যদি চুক্তি বাতিল করে তাতে বিশ্বব্যাঙ্কের বলার কিছু নেই।

পাকিস্তানের টানা ভারতের বিরুদ্ধে হামলার জবাবে এবার জলের অভাব তৈরি হয়েছে প্রতিবেশী দেশে। ভারত সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করতেই জল সংকটের মুখোমুখি হয়েছে পাকিস্তান। তাই দিল্লিকে নিরুপায় হয়ে চার বার চিঠি লিখেছে শরিফের সরকার।

Advertisement