দেশজুড়ে মহিলাদের সিঁদুর বিলির উদ্যোগ নিচ্ছে বিজেপি। ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে স্পষ্টতই রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে মোদী সরকার। আসলে মোদী সরকারের রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক ব্যর্থতা আড়াল করতেই সিঁদুর বিলিকে ‘ঢাল’ হিসাবে ব্যবহারের চেষ্টা চলছে।
সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, মোদী সরকারের তৃতীয় দফার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে ৯ জুন থেকে মহিলাদের উপহার হিসাবে সিঁদুর বিলির পরিকল্পনা চলছে। আসলে দেশের সাধারণ মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। সশস্ত্র বাহিনীর সাহস ও বীরত্বের কৃতিত্ব নিজেদের ঝুলিতে নিতে মোদী সরকার কতটা নিচে নামতে পারে, তা এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে। অবশ্য মোদী সরকারের তৃতীয় দফার বর্ষপূর্তি কীভাবে পালিত হবে, তা সরকারিভাবে কিছু জানানো হয়নি। এমনকি এ ব্যাপারে বজেপির পক্ষ থেকেও কিছু জানানো হয়নি। তা সত্ত্বেও সংবাদমাধ্যমে ‘সিঁদুর’ বিলি করার কথা ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছেষ জাতীয়তা বোএধর জিগির তোলার জন্য।
Advertisement
দেশের কোণায় কোণায় ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে বড় বড় পোস্টার, হোর্ডিংয়ে সেনার সাজে নিজের ছবি ছড়িয়ে দিয়েও সন্তুষ্ট হতে পারছেন না মোদী। এখন তাই দোরে দোরে সিঁদুর বিলির উদ্যোগ চলছে। যদি বিজেপি ঘরে ঘরে গিয়ে সিঁদুর বিলি করতে চায়, তাহলে তাদের প্রথম উত্তর দেওয়া উচিত, এই সরকারি সিঁদুর কার জন্য এবং কী কাজে লাগবে। যে কৌটো ভরে এই সিঁদুর বিলির উদ্যোগ নিয়েছে বিজেপি ও আরএসএস, তার মধ্যে নিশ্চয়ই মোদীর ছবি থাকবে।
Advertisement
এর পাশাপাশি বিরোধীদের দাবি অনুযায়ী সংসদের বিশেষ অধিবেশন সম্পর্কে উচ্চবাচ্য না করলেও সম্ভবত জরুরি অবস্থা জারির ৫০ বছর পূর্তিতে সংসদের দু’দিনের বিশেষ অধিবেশন ডাকার চিন্তাভাবনা চলছে। এ খবর সরকারিভাবে জানানো না হলেও ‘সিঁদুর’ বিলির মতোই সুচারুভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সংবাদমাধ্যমে। অথচ, পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলা কিংবা অপারেশন সিঁদুর অভিযান কেন আচমকা বন্ধ করে দিয়ে সংঘর্ষ বিরতি ঘোষণা করা হলো, তা নিয়ে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার জন্য বিরোধী দলগুলি ক্রমাগত চাপ দিয়ে গেলেও কর্ণপাত করছে না মোদী সরকার। প্রকৃত ও জরুরি বিষয়কে গুরুত্ব না দিয়ে আবার এক ধরনের বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা চলছে সরকার ও শাসক দলের পক্ষ থেকে। যখন পাকিস্তান ও সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই করার কথা, তখন প্রধানমন্ত্রী মোদী ব্যস্ত বিরোধী দলগুলির গায়ে কাদা ছিটোতে।
পহেলগামে পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদীদের হামলার পরই প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সর্বদল বৈঠকের দাবি জানিয়েছিল কংগ্রেস। আবার অপারেশন সিঁদুর অভিযানের পর লোকসভার বিরোধী দলনেতা এবং রাজ্যসভার বিরোধী লনেতা প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার দাবি জানান। দেশ যে ঐক্যবদ্ধভাবে সন্ত্রাসবাদ নিরসন চাইছে, সেই সংক্রান্ত প্রস্তাব গ্রহণের দাবিও জানানো হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সেই পরামর্শই গ্রহণ করলেন না। এর বদলে এখন শোনা যাচ্ছে, জরুরি অবস্থা জারির ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২৫-২৫৬ জুন সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার উদ্যোগ চলছে।
কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলছেন, ‘যাঁর রাজত্বে দেশে ১১ বছর ধরে অঘোষিত জরুরি অবস্থা চলছে, তিনি এখন ৫০ বছর আগের বিষয়কে টেনে এনে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার তোড়জোড় করছেন। অথচ পহেলগামের হামলাকারীরা কেন এখনও পলাতক কিংবা সংঘর্ষ বিরতির মধ্যস্থতাকারী হিসাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে কেন মাথা গলাতে দেওয়া হলো, সেসব প্রশ্নের জবাব এখনও দেননি মোদী। আসলে উনি এখনকার বিষয়কে আড়াল করতেই অতীতের ঘটনা টেনে আনছেন।’
ভোট কেনার জন্য খয়রাতি বিলি, আর্থিক উপঢৌকন এবং নানা প্রতিশ্রুতির কথা শোনা যায়। এবার ‘সিঁদুর’ বিলিও সেখানে স্থান করে নিল। এখানেও দ্বিজাতিতত্ত্ব ও বিভাজনের জঘন্য খেলা খেলে চলেছে মোদী সরকার ও বিজেপি।
Advertisement



