• facebook
  • twitter
Thursday, 18 December, 2025

কেন্দ্রীয় বঞ্চনার পরেও উত্তরবঙ্গে উন্নয়নের জোয়ার এসেছে : মমতা

রাজ্যের বকেয়া না মেটানোয় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তিনি। তাঁর দাবি, তিনি জাদুকর নন, যে চাইলেই আকাশ থেকে টাকা পড়বে।

কেন্দ্রের বঞ্চনা সত্ত্বেও দেশের মধ্যে উন্নয়নের নিরিখে এক নম্বরে আছে পশ্চিমবঙ্গ। এমনকী উত্তরবঙ্গেও উন্নয়নের জোয়ার এসেছে। মঙ্গলবার ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি ভিডিওকন গ্রাউন্ডে সরকারি পরিষেবা প্রদান ও একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন এবং শিলান্যাস অনুষ্ঠান থেকে বিরোধীদের নিশানা করে এই দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের বকেয়া না মেটানোয় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তিনি। তাঁর দাবি, তিনি জাদুকর নন, যে চাইলেই আকাশ থেকে টাকা পড়বে। এ দিন ৩৬৫টি প্রকল্পের জন্য মোট ২৫০ কোটি ৫৪ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা ব্যয়ের কথা ঘোষণা হয়েছে। ১ লাখ ৫৯ হাজার মানুষ ৫১ টি প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন। মমতা জানিয়েছেন, মঙ্গলবারের কর্মসূচি থেকে মোট দুই লক্ষ মানুষের কাছে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনা ও গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পে গত চার বছর ধরে কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক অনুদান পাচ্ছে না রাজ্য সরকার। এর ফলে রাজ্যের কোষাগার থেকেই এই তিন প্রকল্প চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্রের কাছ থেকে ১ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে রাজ্যের। তা সত্ত্বেও রাজ্য নিজের আর্থিক জোরে প্রকল্পগুলি চালিয়ে যাচ্ছে। মমতার কথায়, ‘দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বোঝার চেষ্টা করুন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে গালাগাল দিতে গিয়ে সরকারকে অপমান, অসম্মান করবেন না।’
করব্যবস্থা নিয়েও কেন্দ্রের সমালোচনায় সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, জিএসটি চালু করা হয়েছে, কিন্তু রাজ্যের বকেয়া দিচ্ছে না কেন্দ্র। অপরদিকে জিএসটি থাকা সত্ত্বেও আবার সড়কে কর নেওয়া হচ্ছে, এমনকী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও কর নিচ্ছে। এ সব বন্ধ করার হুঁশিয়ারি দেন মমতা। যে কোনও একটি কর নেওয়ার আবেদন জানান তিনি। বিজেপিকে নিশানা করে মমতা বলেন, ‘আমরা যে কথা দিই, সে কথা রাখি। সারা পৃথিবীর মধ্যে আমরাই প্রথম লক্ষ্মীর ভান্ডার চালু করেছিলাম। মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশও বলেছিল করবে। কিন্তু করেনি। ওরা কথা রাখে না। আমরা রাখি।’ তিনি স্পষ্ট করে দেন, যারা হিংসা করে, তাঁরা মানুষের ভালো চায় না। রাজনীতি করার লোকেরা রাজনীতি করার সুযোগ পাবে। মমতা এ–ও স্পষ্ট করে দেন, তিনি হিংসা চান না, শান্তি চান।
বিরোধীদের কুৎসার জবাব দিতে গিতে মমতা উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তাঁর মতে, আগে উত্তরবঙ্গে কোনও উন্নয়ন হয়নি। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর উত্তরবঙ্গে একাধিক উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। মঙ্গলবারের অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে একাধিক প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ অর্থের ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। শিল্পের পাশাপাশি উত্তরের পর্যটনকে ঢেলে সাজিয়ে তোলার উপরেও জোর দিয়েছেন তিনি।
মমতা এদিন উত্তরবঙ্গে একাধিক ক্ষেত্রে বরাদ্দ ঘোষণা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ফালাকাটায় ৭ কোটি ১৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে অ্যাপ্রোচ রোড তৈরি হবে। মাদারিহাটে ২ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। ফালাকাটা ব্লকে কাদম্বিনী চা বাগান এলাকায় পানীয় জল প্রকল্পে ৭ কোটি ১৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। বীরপাড়া হাসপাতালে প্রায় ৯ কোটি টাকায় ৫০ শয্যার অতিরিক্ত ওয়ার্ড তৈরি হবে। আলিপুরদুয়ার পুরসভায় রাস্তার মানোন্নয়নে ৭ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। উত্তরবঙ্গে ৪৮টি মডেল স্কুলের জন্য ৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে উলপাইগুড়ি সদর ব্লকে উৎকর্ষ কেন্দ্র তৈরি হবে। ৮ কোটি টাকা খরচে বানারহাটে তৈরি হবে নতুন সেতু। বানারহাট ব্লকে ৩০ শয্যার হাসপাতালের জন্য ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। চা সুন্দরী প্রকল্পে চা শ্রমিকদের জন্য মাদারিহাটে ২৯৮টি বাড়ি তৈরি হবে। তরাই চা বাগানে পানীয় জল প্রকল্পের জন্য ৩ কোটি টাকা খরচ করা হবে। ধূপগুড়ি কৃষক বাজারে পরিকাঠামো উন্নয়নে ৩ কোটি ৬১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। ৩৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে কুমারগ্রাম ব্লকের রায়ডাক নদীর বাম তীরের সংরক্ষণের কাজ হবে। জয়ন্তী ধাওরা রাস্তায় কালভার্ট তৈরিতে ৩ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে।
মমতা জানিয়েছেন, রাজবংশী-কামতাপুরী ভাষাকে স্বীকৃতি দিয়েছে তৃণমূল সরকার। পঞ্চানন বর্মাকে সম্মান দিয়েছে। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, আদিবাসীদের জমি কেড়ে নেওযা যাবে না। পাশাপাশি তিনি কন্যাশ্রী প্রকল্পেরও ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। উল্লেখ্য, এদিনের অনুষ্ঠানের মঞ্চে হাজির ছিলেন সদ্য বিজেপি থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়া প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা প্রাক্তন সাংসদ জন বার্লা। আজ, বুধবার উত্তরকন্যায় উত্তরবঙ্গের ৮টি জেলাকে নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

Advertisement