পাকিস্তান সংঘাতের মধ্যেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে পাকিস্তান। ভারতের পশ্চিম সীমান্তে লাগাতার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। রাতের অন্ধকারে উত্তর ভারতের একাধিক শহরের আকাশে ফের হানা দেয় পাকিস্তানি ড্রোন। সেনাসূত্রে জানা গিয়েছে, পাঞ্জাবের অমৃতসর, তরন তারান, পাঠানকোট, ফিরোজপুর, হোশিয়ারপুর গুরুদাসপুরের মতো এলাকাগুলিতে শনিবার ভোরে ফের হামলা চালায় পাকিস্তান। ভারতের বিভিন্ন মিলিটারি বেসকেও নিশানা করছে পাকিস্তান। এই উস্কানির যোগ্য জবাব দিচ্ছে ভারতও। পাকসেনার হামলার জবাবে পাকিস্তানের রফিকি, মুরিদ, চাকলালা এবং রহিম ইয়ার খান এয়ারবেসে এয়ার স্ট্রাইক চালায় ভারত। পাসরুর এবং শিয়ালকোটের রেডার বেসকেও নিশানা করেছে ভারতীয় বায়ুসেনা।
অপারেশন সিঁদুরের বদলা হিসেবে শুক্রবার রাতভরও সীমান্তে এলোপাথাড়ি ড্রোন হামলা চালাল পাকিস্তান। কাশ্মীরের বারামুল্লা থেকে গুজরাতের ভুজ পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গার মোট ২৬টি এলাকায় ড্রোন লক্ষ্য করা গিয়েছে। জম্মু, পুঞ্চ এবং রজৌরি সীমান্তে রাতভর চলে গুলি বর্ষণও। তার মধ্যে ১৪টি জায়গা মূলত নিশানা করা হয়েছে। বারামুলা, শ্রীনগর, অবন্তীপোরা, নাগরোটা যেমন রয়েছে, তেমনই আছে পাঞ্জাবের ফিরোজপুর, পাঠানকোট, ফাজিলকা এবং রাজস্থানের লালগড় জটান, জয়সলমের, বারমের, গুজরাতের ভুজ, কারবেট ও লাখিনালা। ড্রোন হামলা প্রতিহত করেছে ভারত। ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ড্রোনগুলি সশস্ত্র বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, ফলে এগুলি সেনাবাহিনী ও সাধারণ মানুষের জন্য ভয়াবহ হতে পারত।
Advertisement
অন্য দিকে, পাঞ্জাবের ফিরোজপুরে পাকিস্তানি ড্রোন হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন একই পরিবারের ৩ সদস্য। হামলায় অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন স্বামী, স্ত্রী ও তাঁদের এক সন্তান। বর্তমানে স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিতসাধীন রয়েছেন তাঁরা। স্থানীয়দের দাবি, একাধিক পাকিস্তানি ড্রোনকে ফিরোজপুরে উড়তে দেখা গিয়েছে। আকাশেই ড্রোনগুলিকে ধ্বংস করে দেয় ভারতীয় সেনা। সূত্রের খবর, সেনাবাহিনী সতর্ক। চলছে কড়া নজরদারি। জারি করা হয়েছে সতর্কতা।
Advertisement
শুক্রবার সন্ধ্যা হতেই গোলাবর্ষণ শুরু করে পাকিস্তান। ‘ব্ল্যাকআউট’ হয়ে যায় জম্মু-কাশ্মীরের বিস্তীর্ণ অংশ। সন্ধ্যায় দু’টি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় বলে একাধিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর। উরি, কুপওয়াড়া এবং পুঞ্চে উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয়। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে হরিয়ানার পঞ্চকুলা ও আম্বলাতেও ‘ব্ল্যাকআউট’ হয়। রাতে শ্রীনগর বিমানবন্দরে পাক ড্রোন দেখা যায় বলে সেনার একটি সূত্রে একই খবর। জম্মু-কাশ্মীরের আখনুর, সাম্বা ও উধমপুরে ব্ল্যাকআউট করা হয়। একই পরিস্থিতি রাজস্থানের জয়সলমেরে। পোখরানে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
এদিকে শনিবার সেনার তরফে জানানো হয়েছে, শুক্রবার গভীর রাতে পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ বিমানঘাঁটিগুলিতে সফলভাবে আঘাত হানে ভারতীয় বায়ুসেনা। হামলার নিশানায় ছিল পাকিস্তানের সামরিক কার্যকলাপ, ড্রোন অপারেশন ও এয়ার ডিফেন্স নেটওয়ার্কের মূল ঘাঁটিগুলি। সফল আঘাত হানা হয় রাওয়ালপিন্ডির চাকলালা বিমানঘাঁটিতে। ভারতের তরফে হামলা চালানো হয় মুরিদ বিমানঘাঁটিতে। গত কয়েকদিন ধরে ভারতের ওপর চালানো ড্রোন হানার মূল ঘাঁটি ছিল এটি।
ভারতের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় শোরকোটের রফিকি বিমানঘাঁটি। পাকিস্তানের সাম্প্রতিক হামলায় এই ঘাঁটির বিমানগুলি সক্রিয় ছিল বলে খবর। দক্ষিণ পাঞ্জাবের রহিম ইয়ার খান বিমানঘাঁটিতেও হামলা চালায় ভারতীয় বায়ুসেনা। এই বিমানবন্দর দিয়ে অসামরিক বিমান পরিষেবাও চলে।সুক্কুর সিন্ধের জামশোরো জেলার বিমানঘাঁটি। পাকিস্তানের সাম্প্রতিক আকাশ প্রতিরক্ষা শক্তিতে এই ঘাঁটির ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। পাঞ্জাবের চুনিয়ান বিমানঘাঁটি লাহোর থেকে ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত পাকিস্তান বিমান বাহিনীর অন্যতম সক্রিয় অপারেশনাল ঘাঁটি। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ৬ বিমান ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে পাকিস্তানের বায়ুসেনা ব্যবস্থার মূল পরিকাঠামো ভেঙে দিতে চাইছে দিল্লি। কারণ, এখান থেকে যাতে ভারতের বিরুদ্ধে ড্রোন বা বিমান হানা হতে না পারে। এ ছাড়া পসরুর এবং শিয়ালকোটের বিমান ঘাঁটিতেও হামলা হয়েছে।
ভারত সরকার জানিয়েছে, শনিবার ভোর থেকে ভারতের পশ্চিম সীমান্তে ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে শুরু করেছিল পাকিস্তান। নিশানা করা হয়েছিল ভারতের সেনাঘাঁটিগুলিকে। আদমপুর, উধমপুর, ভাটিন্ডার মতো কিছু কিছু জায়গায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভারতও তার পাল্টা জবাব দিয়েছে। শনিবার সকালে সাংবাদিক বৈঠকে কর্নেল সোফিয়া জানিয়েছেন, পাকিস্তানের রফিকি, মুরিদ, চাকলালা এবং রহিম ইয়ার খানে পাক সেনার এয়ারবেসে আকাশপথে ভারত হামলা চালিয়েছে।
ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে, এই আক্রমণ সম্পূর্ণরূপে সুনির্দিষ্ট এবং সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে সীমাবদ্ধ ছিল। ভারত কোনও অসামরিক এলাকা বা সাধারণ নাগরিককে টার্গেট করেনি। প্রেস ব্রিফিংয়ে কর্নেল সোফিয়া কুরেশি বলেন, “আমরা কোনোভাবেই সংঘাত বাড়াতে চাই না। তবে প্রয়োজন হলে আরও কড়া জবাব দিতে ভারত প্রস্তুত।”
পাকিস্তান যদিও পাল্টা দাবি করেছে যে তারা ভারতের একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে, যার মধ্যে আদমপুর, ভুজ, সুরতগড়, নাগরোটা প্রভৃতি ঘাঁটির নাম রয়েছে, তবে ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রী এই দাবিকে “অভিনব মিথ্যাচার” বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
ভারতের তরফে জানানো হয়েছে, যেহেতু পাকিস্তান স্কুল এবং হাসপাতালের মতো স্থানে আঘাত হেনেছে, তাই ভারত পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য হয়েছে। ভারতীয় সেনার একাধিক সূত্র বলছে,যদি পাকিস্তান হামলা বন্ধ না করে তবে এ জবাব আরও জোরালোভাবে দেওয়া হতে পারে ।
Advertisement



