মহারাষ্ট্রের স্বার্থ এবং মারাঠি ভাষাই রাজনীতির মঞ্চে একত্রিত করতে পারেন দুই ভাই উদ্ধব এবং রাজ ঠাকরেকে। বিবাদ ভুলে দু-দশক পর নতুন অধ্যায়ের সূচনা হওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে শিবসেনার মুখপত্রে। সোমবার শিবসেনার মুখপত্র ‘সামনা’-র সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে যে, মহারাষ্ট্রের স্বার্থেই এই মুহূর্তে দুই ভাইয়ের এই বিষয়ে পদক্ষেপ করা উচিত।
মুখপত্রের সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়েছে, রাজ ঠাকরের রাজনীতি এখনও পর্যন্ত সফলতা পায়নি। শিবসেনা ছাড়ার পর তিনি মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা নামে একটি স্বাধীন দল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই সময় তিনি পুরসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে জনগণের কাছ থেকে প্রচুর সমর্থন পেলেও পরে তাঁর দল সমস্যার সম্মুখীন হয়। বিজেপি, একনাথ শিন্ডে এবং অন্যেরা রাজের ‘কাঁধে বন্দুক রেখে’ শিবসেনাকে আক্রমণ করেছেন। রাজ ঠাকরের দল এতে রাজনৈতিক ভাবে বিশেষ লাভবান না হলেও, সামগ্রিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মারাঠি ঐক্য।
Advertisement
মুখপত্রে লেখা হয়েছে, সম্প্রতি রাজ এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট বলেন, ‘যে কোনও বৃহত্তর স্বার্থের সামনে ব্যক্তিগত শত্রুতা গৌণ হয়ে পড়ে। সবার চেয়ে বড় মহারাষ্ট্রের স্বার্থ। মারাঠি পরিচয়কে বাঁচিয়ে রাখার লড়াইয়ে এই বিষয়গুলি সম্পূর্ণভাবে গুরুত্বহীন।
Advertisement
রাজ ঠাকরে ইঙ্গিতে একত্রিত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করার পর এগিয়ে এসেছেন উদ্ধবও। তিনিও বলেছেন, ‘আমিও সব কিছু সরিয়ে রেখে মহারাষ্ট্রের স্বার্থে এক সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। যারা মহারাষ্ট্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে, তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার সাহস ও শক্তি শুধুমাত্র মারাঠি জনগণেরই আছে। অতএব, মারাঠিদের একত্রিত হতে হবে।’ ফলে ১৯ বছর পর আবার দুই ভাইয়ের মিলন ঘটতে পারে মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে সেই জল্পনা এখন তুঙ্গে।
তবে এতেও খুব একটা ঘাবড়াচ্ছে না বিজেপি। দুই ভাইয়ের মিল হলেও মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে তা তেমন কোনও প্রভাব ফেলতে পারবে না, এমনটাই দাবি বিজেপির। উদ্ধব এবং রাজের মিলন হলে ‘খুশি’ হবেন বলেই জানিয়েছেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবীশ। তিনি বলেছেন, ‘যদি তারা একসঙ্গে আসে, আমরা খুশি হব। মানুষ যদি নিজেদের মধ্যে বিভেদ ভুলে সমাধানে আসে, তাহলে সেটা অবশ্যই ইতিবাচক ব্যাপার। এর চেয়ে বেশি আর কী বলব?’
একই সুর শোনা গিয়েছে উদ্ধবগোষ্ঠীর ‘বন্ধু’ কংগ্রেসের কণ্ঠেও। প্রসঙ্গত, চলতি বছরের শেষেই বৃহন্মুম্বই পুরসভা নির্বাচন । অনেকের মতে, সেই নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করতে একজোট হতে চলেছেন উদ্ধব এবং রাজ।
সূত্রের খবর, হিন্দিকে তৃতীয় ভাষা হিসেবে বাধ্যতামূলক করেছে মহারাষ্ট্র সরকার। প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত একে কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তের পর মহারাষ্ট্রের আঞ্চলিক দলগুলোর দাবি, এই সিদ্ধান্ত রাজ্যের নিজস্ব ভাষা মারাঠির গুরুত্বকে খর্ব করছে। আর এই ইস্যুতেই ঠাকরের তুতো ভাইদের মধ্যে একতার সূত্র জোরালো হয়ে উঠেছে।
২০০৫ সালে রাজ-উদ্ধব বচসার পর রাজ ঠাকরে মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা গঠন করেন এবং এর ফলে শুরু হয় দীর্ঘ রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, যা বহু বছর ধরে রাজ্য রাজনীতিকে প্রভাবিত করেছে। এখন, ভাষা বিতর্ক সেই পুরনো বিভেদ ভুলে নতুনভাবে একত্রিত হওয়ার পথ দেখাচ্ছে ।
Advertisement



