কলকাতার বাঘাযতীনের বিদ্যাসাগর কলোনিতে মঙ্গলবার চারতলা ফ্ল্যাটবাড়ি হেলে পড়ার ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। ঘটনায় বাম সরকারের আমলকে দায়ী করে ফিরহাদ বলেন, ‘বাম আমল থেকে আমরা এই পাপের বোঝা বয়ে চলেছি। তখন বাড়ির কোনও পরিকল্পনা ছিল না।’
মেয়র জানান, বাঘাযতীনের বাড়িটির ভাঙার কাজ চলছে এবং সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ারদের নির্দেশ দিয়েছেন যেন বাড়িটি ধীরে ধীরে ভেঙে ফেলা হয়। এছাড়া, আশপাশের বাসিন্দাদের যেন কোনো সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তিনি ভবিষ্যতে কলোনি এলাকায় বাড়ির পরিকল্পনা পুরসভায় জমা দেওয়ার কথা বলেছেন, যাতে ১৫ দিনের মধ্যে অনুমোদন দেওয়া যায়।
Advertisement
এই কাজটি করছিল সুভাষ নাগরার সংস্থা নাগরা কনস্ট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেড। ডেভেলপার সুভাষ রায়ও যুক্ত ছিলেন কাজে। এর ফলে চারতলা বাড়িটি হেলে পড়ে, যার কারণে আশপাশের বাড়িরও ক্ষতি হয়েছে। এ কাজের জন্য কোনও ছাড়পত্র (স্যাংশন প্ল্যান) দেখাতে পারেননি ফ্ল্যাটবাড়ির ডেভেলপার।
Advertisement
তবে, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কলকাতা পুরসভা এবং পুলিশও তদন্ত শুরু করেছে। নেতাজিনগর থানায় এফআইআর দায়ের হয়েছে এবং ডেভেলপার, নির্মাণ সংস্থার মালিকসহ আটটি ফ্ল্যাটের মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এফআইআর-এ অভিযোগ করা হয়েছে যে, প্রশাসনকে না জানিয়ে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চালানো হয়েছিল এবং মাটি পরীক্ষা না করেই ‘হাইড্রোলিক জ্যাকিং’ করা হয়েছিল।
‘শুভ অ্যাপার্টমেন্ট’ নামে এই ফ্ল্যাটবাড়িটি ২০১০-১১ সালে একটি ডোবা ভরাট করে তৈরি করা হয়, যদিও পুরসভা তখন তিনতলা পর্যন্ত বাড়ি নির্মাণের অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু নিয়ম ভেঙে সেখানে চতুর্থ তলও তৈরি করা হয়েছিল। ২০১২ সালে এখানে মানুষ বসবাস শুরু করেন। কয়েক মাস আগে, ওই ফ্ল্যাটবাড়ির একটি অংশ হেলে পড়ে এবং পরে প্রোমোটার মেরামতির কাজ শুরু করেন। ১৭ ডিসেম্বর থেকে বাড়ি সোজা করার কাজ শুরু হলে আটটি ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের অন্যত্র পাঠানো হয়।
কলকাতা পুরসভা জানতে চায়, কে বা কারা ওই বহুতল নির্মাণের অনুমতি দিয়েছিল, কারণ এটি ১০-১২ বছর আগের নির্মাণ। পুরসভা তদন্ত করছে, সেই সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ারদের ভূমিকা কী ছিল।
মেয়র ফিরহাদ হাকিম গঙ্গাসাগর মেলা থেকে কলকাতায় ফিরে বিষয়টি নিয়ে পুরসভা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবেন। গত বছর গার্ডেনরিচে ঘটে যাওয়া ঘটনার সঙ্গে বাঘাযতীনের এই ঘটনা মিলিয়ে দেখা যাবে না বলেও জানিয়েছেন পুরসভার কর্মকর্তারা।
Advertisement



