• facebook
  • twitter
Saturday, 13 December, 2025

সমরেশ বসু : শতবর্ষে দেখি তাঁকে ফিরে

‘বিবর’, ‘প্রজাপতি’ ইত্যাদি সমরেশ বসুর আর এক রকমের সৃষ্টি, যা বেশ বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল এক সময়ে। লেখক নিজেকে বারেবারে বদলাবেন এটা স্বাভাবিক, ঠিক যেমন বড় নদী চলার পথে বাঁক নেয়।

সমরেশ বসু। ফাইল চিত্র

প্রবীর মজুমদার

১৯৪৬-এ ‘পরিচয়’ পত্রিকার শারদ সংখ্যায় প্রকাশিত হল সমরেশ বসুর প্রথম গল্প ‘আদাব’, যা আজ‌ও সমরেশ বসুর সবচেয়ে আলোচিত গল্প। মাত্র ২২ বছর বয়সের লেখা। সে সময়টা দাঙ্গার সময়। ‘পরিচয়’ পত্রিকায় প্রকাশিত গল্পটি এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। সে গল্প লেখা হয়েছিল যখন ধর্মকে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের সবচেয়ে জরুরি সত্য বলে প্রচার করা হচ্ছে আর তাকে কেন্দ্র করে দাঙ্গা চলছে। ‘আদাব’ গল্পে সমরেশ বসু লিখেছিলেন একজন মুসলমান মাঝি আর একজন সুতোকলের হিন্দু মজুরের কথা। তারা দাঙ্গা দমনে ইংরেজ পুলিশের নির্বিচার গুলি চালানো থেকে বাঁচতে একটা অন্ধকার গলিতে ডাস্টবিনের দু’পাশে লুকিয়েছিল। এক সময় পরস্পরের অস্তিত্ব টের পায়, টুকটাক কথা হয় আর বিড়ি ধরানোর সময় দেশলাইয়ের আগুনে বোঝে যে, মাঝি মুসলমান। সে আঁতকে ওঠে কিন্তু মাঝির কথায় বোঝে সে নিরস্ত্র। মাঝি বলে তার পুঁটলিতে আছে, ‘পোলা মাইয়ার লেইগা দুইটা জামা আর একখান্ শাড়ি।’ পরের দিন ইদ আর তাই সে বুড়িগঙ্গার উল্টো দিকে সুবইডায় যাবে। সুতো কলের মজুর তার জামা তুলে দেখায় তার কাছেও কোনও অস্ত্র নেই। শেষে দু’জনের সুখ-দুঃখের কথা বলে আর এও শোনায় যে, যারা দাঙ্গা বাধায় তাদের গায়ে এর কোনও আঁচ লাগে না। অন্যদিকে দাঙ্গায় হত পরিবারের দায় এসে পড়ে আত্মীয়স্বজনদের ওপর। মাঝি এক সময় উঠে পড়ে রাতের অন্ধকারে বুড়িগঙ্গা সাঁতরে পেরিয়ে ইদের পোশাক নিয়ে বাড়ি ফিরবে বলে। একা থাকার ভয়ে সুতো কলের মজুর তাকে আটকাতে চায় কিন্তু ব‌উ আর সন্তানদের টানে সে বেরিয়ে যায়। কিন্তু বেশিদূর যেতে পারে না। আদাব জানিয়ে সে উঠে দাঁড়ায়। মজুর‌ও আদাব জানায়। তার সামান্য কিছু পরেই ভারী বুটের আওয়াজ ও বন্দুকের গুলির আওয়াজ শোনা যায়। সমরেশ বসু লেখেন, ‘সুতা-মজুরের বিহবল চোখে ভেসে উঠল মাঝির বুকের রক্তে তার পোলামাইয়ার, তার বিবির জামা শাড়ি রাঙা হয়ে উঠেছে। মাঝি বলছে—পারলাম না ভাই। আমার ছাওয়ালরা আর বিবি চোখের পানিতে ভাসব পরবের দিন। দুশমনরা আমারে যাইতে দিল না তাগো কাছে।’
১৯২৪ সালের ১১ ডিসেম্বরে পূর্ববঙ্গের বিক্রমপুরে জন্ম সুরথনাথ বসুর। বহু পরে বাংলা সাহিত্যের পাঠক তাঁকে চিনলেন সমরেশ বসু নামে। আরো এক নাম আছে, কালকূট। সুরথনাথ সমরেশ হয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর সমস্ত জীবনের দ্বৈততা, দ্বৈধতা প্রকাশ হয় ‘কালকূট’ নামে। অবশ্য সে নামে যা লিখেছেন তা ছিল সোজাসাপ্টা বয়ান। কিন্তু ব্যক্তি ও সাহিত্যিক সমরেশের গোটাটা ধরতে হলে ‘কালকূট’ শব্দটিই বেশি মানানসই।

Advertisement

সমরেশরা পূর্ববঙ্গ থেকে পশ্চিমবঙ্গে এসেছিলেন দেশভাগের বেশ আগেই। তাঁর শৈশব কাটে নৈহাটিতে। কিন্তু বুকের মধ্যে বিক্রমপুরের স্মৃতি ছিল। পরবর্তী সময়ে উপন্যাসে সে স্মৃতি এসেছে বারবার। সেই স্মৃতি থেকেই এঁকেছিলেন ‘ত্রিদিবেশ’কে। ‘যুগ যুগ জীয়ে’ উপন্যাসের চরিত্র ত্রিদিবেশ। বছর বারো বয়সে সে একদিন একটা নৌকা ভাড়া নিয়ে নিজেই দাঁড় বাইতে শুরু করে। ছোট গাঙ থেকে সে চলে যায় বড় গাঙে। মহাজনি নৌকার সামনে পড়ে তার ভাড়ার ছোট্ট ডিঙি। উপন্যাসে সে চিত্র যেভাবে আঁকেন সমরেশ, স্পষ্ট বোঝা যায় তিনি নিজে তা যাপন করে এসেছেন। নিশ্চিতভাবেই বলা যায় ঐ নদী ছিল বুড়িগঙ্গা। আজকের সরু হয়ে আসা নদী নয়, সেদিনের বিশাল সেই নদী যাতে চলত বড় বড় নৌকা। আর চেনা যায় সমরেশকে যে ছেলেবেলা থেকেই দুরন্ত।

Advertisement

দুরন্ত, খামখেয়ালি কিংবা বোহেমিয়ান—সমরেশের ক্ষেত্রে প্রতিটিই বলা যায়। তার সূচনা হল পরের বছরেই। বন্ধুরা যখন দশম শ্রেণিতে ব‌ই নিয়ে ব্যস্ত, সমরেশ স্বামীর সংসার ছেড়ে আসা গৌরীর প্রেমে পড়লেন। শুভাকাঙ্ক্ষীরা এ সম্পর্ক মানতে পারেননি, সমাজ‌ও খুশি হয়নি। সমরেশ উৎকণ্ঠিত আত্মীয়স্বজন ও বিড়ম্বিত সমাজকে বাড়তি ভাবনার অবকাশ না দিয়ে গৌরী দেবীকে নিয়ে নৈহাটি ছেড়ে চলে গেলেন। উঠলেন বেশ কয়েক কিলোমিটার দূরে জগদ্দলের কাছাকাছি আতপুরের একটি বস্তিতে। মার্কসের অর্থনীতির তত্ত্ব বুঝেছিলেন কিছু পরে, কিন্তু খিদের সত্য বুঝেছিলেন ওই সময়েই। পরিবারে ছিল অসচ্ছলতা। সে কারণে বিচিত্র সব কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে হয়েছে। এক সময় মাথায় করে ডিম ফেরি করেছেন। স্ত্রী গৌরী গান জানতেন আর তাতেই আর‌ও কিছু টাকা সংসারে আসা।। ১৯৪৩ সাল, বয়স মাত্র ১৯ বছর। পরিচয় হল জগদ্দল অঞ্চলের শ্রমিক নেতা সত্যপ্রসন্ন দাশগুপ্তের সঙ্গে। তিনি ‘সত্য মাস্টার’ নামে বেশি পরিচিত ছিলেন আর সমরেশের রাজনৈতিক মাস্টার বলতে হলে এঁর কথাই আগে বলতে হয়। তিনি সমরেশের হাতের লেখার গুণে তাঁকে পোস্টার লেখার দায়িত্ব দেন, কিন্তু লেখার হাতের কথা জানতেন না। তবে আঁকার বিষয়ে সমরেশের দক্ষতার কথা জানতেন। সে সূত্রেই ইছাপুর বন্দুক কারখানায় সমরেশের চাকরি মেলে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বলে অস্ত্রের চাহিদা বেশি আর তাই সমরেশের শিল্পীসত্তার প্রয়োগ ঘটল অস্ত্র কারখানায়। বস্তি থেকে ততদিনে কারখানার মিস্ত্রিদের পাড়ায় একটা ঘর মিলেছে। সংসারে সন্তান এসেছে। সত্য মাস্টারের কাছে মার্কসবাদে শিক্ষা ও দীক্ষা ঘটেছে। স্বপ্ন জেগেছে শোষণহীন সমাজব্যবস্থার। জেনেছেন চাকরির কর্মের সঙ্গে তাঁকে ভাবতে হবে শ্রমিকদের শ্রমের যথাযথ মূল্য পাওয়ার লড়াইয়ে। তাকে খণ্ড লড়াই থেকে অখণ্ড শ্রেণিসংগ্রামের দৃষ্টিতে চালিত করতে হবে। এই সত্যপ্রসন্ন দাশগুপ্তকে ১৯৫২ সালে প্রকাশিত তৃতীয় উপন্যাস ‘বি টি রোডের ধারে’ উৎসর্গ করেছিলেন ‘সত্য মাস্টারের উদ্দেশে’ লিখে।

কিন্তু বেশিদিন কমিউনিস্ট রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেননি। প্রশ্ন করার মতো শিড়দাঁড়া থাকলে কিছু জায়গায় টেকা যায় না। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি সম্পর্কে যাঁরা কমবেশি জানেন, তাঁরা জানবেন, পার্টি প্রশ্ন করা পছন্দ করত না। সমরেশ প্রশ্ন করেছিলেন। মতবিরোধ হয়েছিল। তাই পার্টিতে থাকতে পারলেন না। অবশ্য আরো একটি ধারণা আছে এ সম্পর্কে। ১৯৪৯-৫০ সালে তাঁকে জেলে যেতে হয়েছিল। পার্টির কাজের জন্যই তিনি জেল খেটেছিলেন। এই সময়ের মধ্যে তাঁর মনে এক ধরনের পরিবর্তন আসে এবং তিনি রাজনীতি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। জেলে বসেই তিনি তার প্রথম উপন্যাস ‘উত্তরঙ্গ’ রচনা করেন।

জেল থেকে মুক্তি, চাকরি থেকে বরখাস্ত হ‌ওয়া, কমিউনিস্ট পার্টির পাঁচ বছরের সদস্য পদ ত্যাগ করা আর অনিশ্চিত পূর্ণ সময়ের লেখক-জীবন বেছে নেওয়া, সব‌ই ঘটতে থাকে ১৯৫১ সালের কাছাকাছি সময়ে। কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গ ছাড়লেও শ্রমজীবী মানুষ আর তাদের সংগ্রামের সঙ্গীদের যে সঙ্গ ছাড়েননি, তার প্রমাণ ‘বি টি রোডের ধারে’, ‘শ্রীমতী কাফে’, ‘গঙ্গা’, ‘শিকল ছেঁড়া হাতের খোঁজে’, ‘মহাকালের রথের ঘোড়া’-র মতো নানা উপন্যাস ও অনেক গল্প।

১৯৫৪ সালে কুম্ভমেলায় যান আর সেখানের মানুষজনের সঙ্গ লাভে ‘কালকূট’-এর জন্ম হয়। ‘অমৃতকুম্ভের সন্ধানে’ লেখা হল, যার ভাব আর ভাষা তাঁর আগের লেখা থেকে আলাদা। কিন্তু বামপন্থী সমরেশ কেন গিয়েছিলেন সে মেলায়, কীই বা পেয়েছিলেন তাঁর মেলায় আসায় এক বৃদ্ধার মুখ দিয়ে শুনিয়েছিলেন কালকূট– ‘বাবা, মানুষ মিলে মেলা, মানুষের মেলা। যখন ভাবি, এই লক্ষ লক্ষ মানুষের মধ্যে আমিও একজন, তখন সুখে আনন্দে আমি আর চোখের জল রাখতে পারি নে।’ কালকূট এই জনজীবন ও জনপদের কথা নানা ভাবে তাঁর এই ধারার রচনায় লিখে গেছেন। ‘শাম্ব’ শুরু করেছিলেন রাজবৃত্তে, কিন্তু শেষ হয়েছে লোকবৃত্তে। পিতা কৃষ্ণের অভিশাপ যেন শেষ পর্যন্ত আশীর্বাদ হয়ে নেমে এল শাম্বের জীবনে।

সমরেশ বসুর বেশিরভাগ লেখাতেই এসেছে মানুষের কথা। সাধারণ মানুষ, খেটে খাওয়া মানুষ। বাংলা সাহিত্যে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রথম লিখেছিলেন তুলনামূলক নিচুতলার মানুষদের নিয়ে। তুলনামূলক কথাটি ব্যবহার করতে হচ্ছে কেননা শরতের সেই মানুষেরা অনেকাংশে দরিদ্র অর্থে নিচুতলার কিন্তু তারা মোটাদাগে ‘ভালো মানুষ’। এদের প্রতি মানুষের দরদ আসে। পরবর্তী সময়ে সাহিত্যে এসেছিল মধ্যবিত্ত এমনকি নিম্নবিত্তদের কথা। কিন্তু সেখানেও লেখকদের লেখা পড়ে ঐ মানুষদের প্রতি দরদ জাগে। সমরেশ বসু সেখান থেকে বেরিয়ে এমন মানুষদের কথা লিখেছিলেন যারা ‘ভদ্রলোক’ শ্রেণিতে পড়েন না।

ভাবনায়, ভাষায়, অনুভবের গভীরতায়, প্রকাশভঙ্গি ও বিষয়বৈচিত্রে চার দশকের সামান্য বেশি লেখক জীবনের বিষয়ে ভাবতে বসলে মনে হয়, কেবল তাঁর সাহিত্যসম্ভার বা সৃষ্টিধারা নয়, তাঁর যাপিত জীবন, জীবনবোধ, অভিজ্ঞতা, সামাজিক এবং রাজনৈতিক বোধ-বিশ্বাস, বৈশিষ্ট্য সম্পর্কেও আমাদের অনুসন্ধান এখনও শেষ হয়নি। বাংলা সাহিত্যে এবং বাঙালি সাহিত্যিক হিসাবে ‘ব্যতিক্রমী’ শব্দটা তাঁর ক্ষেত্রে কতখানি প্রযোজ্য ও সুদূরপ্রসারী, যে কোনও মনোযোগী পাঠক তা জানেন। এও ভাবতে হবে যে, তাঁর আত্মপ্রকাশের সময়টিতে বাংলা সাহিত্যের নেহাত বন্ধ্যা যুগ ছিল না। তারাশঙ্কর, মানিক রয়েছেন, খ্যাতির শিখরে রয়েছেন বিভূতিভূষণ। আবার নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, সুবোধ ঘোষ, নরেন্দ্রনাথ মিত্র ছাড়াও সাহিত্য পাঠকদের তালিকায় অন্য প্রিয় লেখক-লেখিকা ছিলেন। কিন্তু সমরেশ বসু প্রথম থেকেই এমন একটি জায়গায় দাঁড়াবার উদ্যোগ করেছিলেন, যেখানে ‘উত্তরসূরি’ শব্দটির ছাপ কোনও ভাবেই তাঁর গায়ে না লাগে।

তাঁর বাইশ বছর বয়সের রচনা ‘আদাব’ থেকে বিয়াল্লিশ বছর পরের শেষ তথা অশেষ, অসমাপ্ত উপন্যাস ‘দেখি নাই ফিরে’— এই দীর্ঘ সম্ভার মোটামুটি উল্টে দেখলেই একটা কথা পরিষ্কার বোঝা যায়; পাঠকদের তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, আমার কিছু বলার আছে। নেহাত গল্প-উপন্যাস পাঠের আনন্দ দিতে, তিনি কলম হাতে তুলে নেননি। আর সেই কর্ম করতে গিয়েই, ঝুঁকি নিয়েছেন, বিতর্কিত হয়েছেন, সমালোচনার মুখেও পড়েছেন।

‘বিবর’, ‘প্রজাপতি’ ইত্যাদি সমরেশ বসুর আর এক রকমের সৃষ্টি, যা বেশ বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল এক সময়ে। লেখক নিজেকে বারেবারে বদলাবেন এটা স্বাভাবিক, ঠিক যেমন বড় নদী চলার পথে বাঁক নেয়। ছয়ের দশকের সামাজিক অবক্ষয়ের কালে এই গোত্রের উপন্যাসগুলি লেখা হয়েছিল, আর তা নিয়ে তর্কবিতর্ক‌ও হয়েছিল তবে বিশ্বসাহিত্য প্রকাশকালে নিন্দিত ও পরবর্তী সময়ে নন্দিত অনেক উপন্যাস‌ই আছে। সমরেশ বসু নিজের জীবনের ক্ষেত্রে যেমন নানা ব্যতিক্রম ঘটিয়েছেন, তেমন‌ই সাহিত্য ক্ষেত্রে‌ও নানা পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়েছেন।
সমরেশ বসুকে প্রতিনিয়ত উৎকণ্ঠিত করে তুলত ব্যক্তির বিপন্নতা। নিজের জীবনের সঙ্কটের মধ্যে দিয়েই উপলব্ধি করতেন সেই বিপন্নতা । সৃষ্টিকর্মের আবহে-আবেগে-বিতর্কে প্রাণবন্ত করে রাখা বাংলা সাহিত্যের জগতে কম কথা নয়। খুব কৃতী লেখক হলেই তা হয় না, তার জন্য গভীর ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে হয়। এমন এক জন লেখক হতে হয় যিনি নিজের লেখা দিয়েই পাঠকের প্রত্যাশা সমানে নতুন ভাবে তৈরি করে নিতে পারেন। সমরেশ বসু সেটা করতে পেরেছিলেন নিজের যোগ্যতায় , কলমের শক্তি আর বোধের গভীরতায়।

তাঁকে কালজয়ী বলা যেতেই পারে। না বললেও ক্ষতি নেই। কালজয়ী লেখকের অন্যতম চিহ্ন নিজেকে অতিক্রম করার সাহস। লেখক হিসেবে নিজেকে বারবার ভেঙেছেন সমরেশ বসু। লিখনভঙ্গি, বিষয়, পটভূমি, বদল করতে করতে ‘নয়নপুরের মাটি’-র মহিম নামের মৃৎশিল্পীর স্রষ্টা পৌঁছে গেছেন, ‘দেখি নাই ফিরে’-তে রামকিঙ্করের অরূপ সন্ধানে। ‘উত্তরঙ্গ’-র অলঙ্কারে সাজানো ভাষা, ‘গঙ্গা’ উপন্যাসে হয়েছে নদীপ্রবাহের মতো জঙ্গম অথচ গ্রামীণ, ‘বিবর’-এ পৌঁছে হয়েছে কৌণিক, ক্ষুরধার, বিদ্রুপ ও প্রত্যাখ্যানে মেশা। পাঠকের মুখ চেয়ে লেখার প্রয়োজনকে সরিয়ে রাখতে পেরেছেন বলে পাঠক তাঁকে আজও অনুসরণ করে চলেছে তাঁর প্রয়াণের ছত্রিশ বছর পরে, তাঁর জন্মশতবর্ষে।

Advertisement