ঘূর্ণিঝড় দানার দাপটে মুর্শিদাবাদের সামশেররগঞ্জ এলাকায় গঙ্গা নদীতে ডুবে যায় যাত্রীবাহী নৌকা এবং বেশ কয়েকটি মাছ ধরার ডিঙি নৌকা। বুধবার রাতে স্থানীয় শিকদারপুর গ্রামে প্রথমে তলিয়ে যায় একটি যাত্রীবাহী নৌকা। এরপর মাছ ধরতে গিয়ে প্রবল জলোচ্ছ্বাসে একাধিক ডিঙি নৌকা নদীতে তলিয়ে যায়। নিখোঁজ হন একাধিক মৎস্যজীবী এবং কয়েকজন শিশু। এমনটাই জানা যায় স্থানীয় সূত্রে। নিজের প্রাণ বাজি রেখে দুই মৎস্যজীবীকে উদ্ধার করেন মহম্মদ কামাল হোসেন নামে এক যুবক। নদী থেকে উদ্ধার করে মৎস্যজীবীদের স্থানীয় অনুপনগর ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে আসা আতঙ্কিত মৎস্যজীবীরা জানান, তারা যখন মাছ ধরতে গিয়েছিলেন, তখন আবহাওয়া ঠিকই ছিল। কিন্তু মাঝ নদীতে গিয়ে জাল ফেলার পরেই দেখা দেয় প্রবল ঝড় এবং জলোচ্ছ্বাস। এলাকার মানুষের অভিযোগ, ঘূর্ণিঝড় দানার বিষয়ে আগাম কোনো সতর্কতা স্থানীয় প্রশাসন থেকে করা হয়নি। মাইকের মাধ্যমে কোনো প্রচারও এলাকায় করা হয়নি। বৃহস্পতিবার অবশ্য সমশেরগঞ্জ থানার পুলিশ গঙ্গা তীরবর্তী বহু এলাকায় মাইকে প্রচার করে মানুষকে সতর্ক করে। নিখোঁজ মৎস্যজীবী এবং শিশুদের উদ্ধারে নামানো হয় একাধিক ডুবুরিকে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ডিস্কো মোড় সংলগ্ন ঘাট থেকে লহরপুর-শিকদারপুর ঘাট এবং ধুলিয়ান পুরসভার ১ নম্বর ঘাট এবং ফরাক্কার অর্জুনপুর অঞ্চলের ঘাট মিলিয়ে প্রায় পঞ্চাশের কাছাকাছি মাছ ধরার ডিঙি এবং একটি যাত্রীবাহী নৌকা উল্টে যায়। কিছু মানুষ সাঁতরে নিজের প্রাণ বাঁচাতে পারলেও অনেকেই ডুবে যায়। এছাড়াও সংলগ্ন মালদা জেলাতেও নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার দিন রাতেই সমশেরগঞ্জের ডিস্কো মোড় সংলগ্ন গঙ্গার ঘাট থেকে একটি মৃতদেহ উদ্ধার হয়। মনে করা হচ্ছে যে এই ব্যক্তির মৃত্যু ওই নৌকাডুবির ফলেই হয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। দেহ উদ্ধার করে প্রথমে অনুপনগর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এবং পরে জঙ্গিপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়।
Advertisement
এদিকে নিজের জীবন বাজি রেখে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে ডুবন্ত মানুষের প্রাণ বাঁচালেন সমসেরগঞ্জ থানার লোহারপুর গ্রামের বাসিন্দা মহম্মদ কামাল হোসেন। ঘটনার দিন রাতে ফরাক্কা ও সামশেরগঞ্জ এলাকায় হঠাৎ ঝড় ওঠে। সেই সময় নদীতে ভাসছিল প্রায় পঞ্চাশটিরও বেশি ছোট ছোট মাছ ধরার ডিঙি এবং একটি যাত্রীবাহী নৌকা। আচমকা ঝড়ের প্রভাবে তলিয়ে গিয়ে বহু মানুষ নদীতে হাবুডুবু খেতে থাকে। কেউ কেউ সাঁতরে পার হলেও, জলে তলিয়ে যায় বহু মানুষ। সে সময় নদীতে নৌকা বাঁধছিলেন মহম্মদ কামাল হোসেন। হঠাৎ তিনি দেখেন তার সামনে দিয়ে দু’জন ভেসে যাচ্ছে। কোনো কিছু না ভেবেই তড়িঘড়ি তিনি নদীতে ঝাঁপ দিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করে প্রাণ বাঁচান। তারপর তাদেরকে স্থানীয়
Advertisement
অনুপনগর হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তিও করান। সুস্থ হলে তাদেরকে তাদের পরিবারের হাতে তুলে দেন। এখনও বহু মানুষ নিখোঁজ, এজন্য দুঃখ থাকলেও, অন্তত দু’জনকে প্রাণে বাঁচাতে পারায় খুব ভালো লাগছে বলে জানান তিনি।
Advertisement



