• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

ভিসা বাতিল হওয়ায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকলেন ভারতীয় পড়ুয়া

অবৈধ অভিবাসী অভিযোগে আমেরিকা থেকে বিতাড়িত হতে পারেন এমন আশঙ্কায় আদালতে মামলা ঠুকেছেন ভারতীয় পড়ুয়া চিন্ময় দেওরে।

অবৈধ অভিবাসী অভিযোগে আমেরিকা থেকে বিতাড়িত হতে পারেন এমন আশঙ্কায় আদালতে মামলা ঠুকেছেন ভারতীয় পড়ুয়া চিন্ময় দেওরে। স্নাতকস্তরের পড়ুয়া ২১ বছরের চিন্ময় এখন আমেরিকায় রয়েছেন উচ্চশিক্ষার জন্য। মিশিগান শহরের ওয়েন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পড়ুয়া চিন্ময়ের সঙ্গে মামলা করেছেন আরও তিনজন। এঁদের মধ্যে দুজন চিনের এবং একজন নেপালের।  চীন থেকে জিয়াং ইউন বু এবং কিউই ইয়াং এবং নেপাল থেকে যোগেশ যোশী শুক্রবার হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ এবং অভিবাসন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।

২০২১ সালের আগস্ট থেকে সেদেশে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে স্নাতক স্তরের পাঠ নিচ্ছেন চিন্ময়। মিশিগান শহরের এই ছাত্ররা অবৈধভাবে ট্রাম্প প্রশাসন তাঁদের দেশ থেকে বিতাড়নের চেষ্টা করছে বলে আদালতে আর্জি জানিয়ে মামলা করেছেন।মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, আমেরিকায় বসবাসের ভিসা বেআইনিভাবে বাতিল করে দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর ইনফর্মেশন সিস্টেমের অধীনে তাঁদের পড়ুয়া ভিসা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। বিপদে পড়া এই ছাত্রদের হয়ে মামলা লড়ছে মিশিগানের আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন। এই সংগঠনের দাবি, কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণ এবং নোটিস ছাড়াই ট্রাম্প প্রশাসন তাঁদের বিরুদ্ধে এফ-ওয়ান পড়ুয়া অভিবাসী ভিসা বাতিল করে দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে আর্জি জানানো হয়।  বলা হয়েছে, ‘এই শিক্ষার্থীদের পুনর্বহাল করা হোক যাতে তাঁরা তাঁদের পড়াশোনা শেষ করতে পারেন এবং আটক ও নির্বাসনের ঝুঁকি এড়াতে পারেন।’

Advertisement

চিন্ময় দেওরে প্রথম আমেরিকায় ঢোকেন ২০০৪ সালে। এইচ-ফোর বা ডিপেন্ডেন্ট ভিসায় তাঁর পরিবার মিশিগানে আসে। ২০০৮ সালে চিন্ময় ও তাঁর পরিবার আমেরিকা ছেড়ে যান। এরপর ২০১৪ সালে চিন্ময় ফের তাঁর পরিবারের সঙ্গে এইচ-ফোর ভিসা নিয়েই আমেরিকায় ফিরে আসেন।

Advertisement

আদালতের আর্জিতে তাঁর সম্পর্কে বলা হয়েছে, চিন্ময় ২০২২ সালের মে মাসে আইনমাফিক প্রশাসনের কাছে একটি আবেদন করেন। কারণ ডিপেন্ডেন্ট ভিসার একটি মেয়াদ আছে। সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গেলে এই ভিসা আর কার্যকরী থাকে না। তাই তিনি সরকারের কাছে এফ-ওয়ান ভিসা অর্থাৎ পড়ুয়ার মর্যাদা দানের আবেদন জানান। তাঁর আশা ছিল চলতি বছরের মে মাসের তাঁর শিক্ষা শেষ হয়ে যাবে এবং তিনি স্নাতক হয়ে যাবেন।

দেওরের বিরুদ্ধে আমেরিকায় কোনও মামলা নেই। তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারি মামলায় অভিযোগ বা তিনি দণ্ড পেয়েছেন এমন কোনও তথ্যও পুলিশের কাছে নেই। নির্দিষ্ট গতির বাইরে গাড়ি চালানো কিংবা ভুল পার্কিং করার মতো ভুল ছাড়া, চিন্ময়ের বিরুদ্ধে নাগরিক আইন ভঙ্গ, মোটর ভেহিকেল আইন ভঙ্গ অথবা অভিবাসী আইন ভঙ্গের অপরাধ নেই। কোনও রাজনৈতিক ইস্যুতে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে কোনও প্রতিবাদ সভাতেও তাঁকে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যায়নি।

নিউ হ্যাম্পশায়ার, ইন্ডিয়ানা এবং ক্যালিফোর্নিয়ার মতো রাজ্যে সারা দেশে একই ধরনের মামলা দায়ের করা হয়েছে। একাংশের মতে, ‘সরকারের এই নিষ্ঠুর ও অবৈধ পদক্ষেপ বাস্তব জীবনে অশনি সঙ্কেত। এই ধরণের পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের জীবনকে ব্যাহত করবে। পাশাপাশি সরকারের এই ধরণের পদক্ষেপে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক স্তরের পণ্ডিতরা মিশিগান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের ‘অ্যাকাডেমিক ডেস্টিনেশন’ হিসাবে বেছে নেওয়া থেকে বিরত থাকবে। মিশিগানের এসিএলইউর স্টাফ অ্যাটর্নি রামিস ওয়াদুদ বলেন, “এটি গবেষণা, উন্নয়ন এবং ক্যাম্পাসের বৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সুনামকে খর্ব করবে।’

তবে গোটা বিশ্ব যখন ট্রাম্পের নানাবিধ পদক্ষেপে জেরবার, তখন ট্রাম্পের বিরুদ্ধেই মামলা ঠোকার মনোবল দেখিয়েছেন ভারতীয় পড়ুয়া চিন্ময় দেওরা। এখন দেখার সেই লড়াইয়ে জিত হয় কার।

Advertisement