• facebook
  • twitter
Saturday, 27 December, 2025

তারেকের প্রত্যার্বতন : বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়

এটি শুধুমাত্র বিএনপির কর্মীসমাজকে নয়, বরং সমগ্র রাজনৈতিক দৃশ্যপটকে পুনরায় সংগঠিত করার সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

সৈয়দ হাসমত জালাল

গত ২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশের রাজনীতি একটি ঐতিহাসিক মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘ ১৭ বছর নির্বাসনের পর খালেদা জিয়ার পুত্র, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফিরে আসা যে বিএনপি দলের কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে বিপুল উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে, তা অস্বীকার করা যাবে না। ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রাজধানীর পথে পথে বিএনপির পতাকা ও স্লোগানে ভরিয়ে রাখা সেই স্বাগত দৃশ্য শুধু রাজনৈতিক উন্মাদনাই নয়, এর মধ্য থেকে উঠে এসেছে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক সংকেতও।

Advertisement

দেশের বিরোধী শিবিরের প্রধান নেতা হিসেবে তারেকের প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের রাজনীতিকে নতুন করে রূপ দিতে পারে— বিশেষত আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের আলোয়। বিএনপি বাইরে থেকেও দলীয় সমর্থন ধরে রেখেছিল, কিন্তু তারেকের সরাসরি নেতৃত্বে ফিরে আসার মুহূর্তটি যে দলের ভেতরে নতুন আশা ও মনোবল জাগাতে পারে, তা স্পষ্ট।

Advertisement

এখন বাংলাদেশ এক গভীর রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। গত বছর দেশব্যাপী ছাত্র নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনের পালাবদল ঘটেছে এবং একটি অন্তর্বর্তী সরকার পরিচালিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিরোধীদলের নেতাদের ফেরার আশা তীব্র হয়ে উঠেছে, আর তারেক রহমান সেই প্রেক্ষাপটে সর্বোচ্চ আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছেন।

এসময় সুযোগ বুঝে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি (ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি) জোট বেঁধে নির্বাচনে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার ফলে নতুন রাজনৈতিক মাত্রা তৈরি হয়েছে, অস্বীকার করা যাবে না।

বৃহত্তর এই জোট রাজনীতির স্বরূপ কেমন হবে, এমন প্রশ্নের সামনে নতুন রাজনৈতিক অঙ্ক কষতে হবে। বিশেষত, নির্বাচনে এনসিপি ও জামায়াতে ইসলামীর আসন বণ্টন কীভাবে হবে, তা রাজনৈতিক সমীকরণকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।

তারেক দেশে ফিরে প্রথম ভাষণে শান্তি, সংহতি ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ পুনর্গঠনের বার্তা দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্যে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ‘বাংলাদেশ সকলের’, এবং সামাজিক ও ধর্মীয় বিভাজন ছাড়াই একটি সমন্বিত, নিরাপদ ও উন্নত দেশ গড়ার অঙ্গীকার উঠে এসেছে তাঁর বক্তব্যে। তারেকের এই বার্তা রাজনৈতিক উত্তেজনা কমিয়ে তাঁদের নির্বাচন-সংক্রান্ত পরিকল্পনাকে তুলনামূলকভাবে কিছুটা বেশি মজবুত জনসমর্থন দেওয়ার চেষ্টা হিসেবেও দেখা যেতে পারে। বিএনপি মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন মন্তব্য করেছেন যে, তারেকের প্রত্যাবর্তন দলকেই নতুন ভাবে সংগঠিত করবে।

তবে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া যথারীতি কিছুটা মিশ্র। অনেকে এই প্রত্যাবর্তনকে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত রাজনৈতিক সমাধানের সুযোগ হিসেবে দেখছেন, কেউ কেউ অবশ্য চ্যালেঞ্জ ও বিরোধিতার দৃষ্টিকোণ থেকেও দেখছেন।
আওয়ামী লীগের এখন নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের এই মুহূর্তে রাজনৈতিক অবস্থান হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে। আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচনে অংশ না নেয়, তাহলে বিএনপি-সহ জয়ী জোটের পক্ষে পরিস্থিতি আরও সুবিধাজনক হতে পারে। তবে এই সুযোগই কি দলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনবে, নাকি বিরোধীপক্ষের অভিজ্ঞতার অভাব বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে, সেটিই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

আওয়ামী লীগের মুখপাত্ররা ইতিমধ্যেই তাঁদের অবস্থানের জন্য বিভিন্ন বার্তা দিয়েছেন— কখনও কঠোর, কখনও কিছু নরম— কিন্তু আগের মতো রাজনৈতিক মঞ্চে সরাসরি লড়াইয়ের প্রস্তুতি এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের নেই বলেই মনে করা হচ্ছে।

তারেক রহমানের দেশে ফিরে আসা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি ‘গেম-চেঞ্জার’ ঘটনা হয়ে উঠতে পারে। এটি শুধুমাত্র বিএনপির কর্মীসমাজকে নয়, বরং সমগ্র রাজনৈতিক দৃশ্যপটকে পুনরায় সংগঠিত করার সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে। তবে সেই সুবর্ণ সম্ভাবনা বাস্তবে রূপ নেবে কি না, তা নির্ভর করবে বিএনপি ও তার জোট সহযোগীদের নীতিগত দৃঢ়তা, আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কৌশল এবং সাধারণ মানুষের ভোটের সিদ্ধান্তের ওপর।

Advertisement