• facebook
  • twitter
Wednesday, 10 December, 2025

মোদী সরকারের অধীনে ভারতে বাকস্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ সলমন রুশদির

ভারতে বাকস্বাধীনতা বিপন্ন, জাতীয়তাবাদের ধারণাও ক্রমশ বেড়ে চলেছে। সমাজে যেভাবে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকে তুলে ধরা হচ্ছে তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দ্য স্যাটানিক ভার্সেস-এর ঔপন্যাসিক

মোদী সরকারের শাসনকালে বাক স্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রখ্যাত লেখক সলমন রুশদি। লেখকের অভিযোগ, এখন ভারতে বাকস্বাধীনতা বিপন্ন, জাতীয়তাবাদের ধারণাও ক্রমশ বেড়ে চলেছে। সমাজে যেভাবে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকে তুলে ধরা হচ্ছে তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দ্য স্যাটানিক ভার্সেস-এর ঔপন্যাসিক। 

সলমন রুশদি মোদীর ভারতে ক্রমবর্ধমান হিন্দু জাতীয়তাবাদ এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর আরোপ করা বিধিনিষেধ নিয়ে খুবই চিন্তিত।  এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘ভারতে আমার অনেক বন্ধু আছে। সাংবাদিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী, অধ্যাপক। তাঁদের স্বাধীনতার উপর আক্রমণ করা হচ্ছে। এই নিয়ে সবাই অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।’ 

Advertisement

রুশদি বলেন, ‘ দেশের ইতিহাস পুনর্লিখনের প্রচেষ্টা চলছে বলে মনে হচ্ছে। মূলত হিন্দুরা ভালো, মুসলমানরা খারাপ – এমন ধারণা তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা ভিএস নাইপল একসময় আহত সভ্যতা বলে অভিহিত করেছিলেন। এমন এক ধারণা সৃষ্টি করা হচ্ছে যাতে মনে হয় ভারত একটি হিন্দু সভ্যতা যা মুসলমানদের আগমনের কারণে আহত হয়েছে। এর পিছনে অনেক শক্তি রয়েছে।’ 

Advertisement

সম্প্রতি সমালোচকদের একাংশ রুশদিকে দুটি দিক থেকে আক্রমণ করেছেন। বিজেপিপন্থী এই সমালোচকদের মতে, ১৯৮৮ সালে, যে বছর এটি প্রকাশিত হয়েছিল, সেই বছরেই কংগ্রেস সরকার ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ নিষিদ্ধ করেছিল। সেই থেকে ভারতের বাজারে বইটি আর পাওয়া যায়নি। বইটির কোনও ভারতীয় সংস্করণও প্রকাশিত হয়নি।সমালোচকরা বলেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর সরকার ইসলামপন্থীদের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে উপন্যাসটি নিষিদ্ধ করেছিল।

২০১৯-এ কলকাতা থেকে সন্দীপন খান নামে এক ব্যক্তি এই নিষেধাজ্ঞা তোলার জন্য আদালতে আবেদন করেন। দিল্লি হাইকোর্ট সরকারের কাছে নিষেধাজ্ঞার বিজ্ঞপ্তি তলব করে। সরকারের তরফে সেই বিজ্ঞপ্তি হাজির করা যায়নি। সম্প্রতি হাইকোর্ট রায় দেয়, যেখানে নিষেধাজ্ঞার বিজ্ঞপ্তিই নেই, সেখানে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকে কী করে ? তার পর থেকেই রুশদির বিতর্কিত বইটি ভারতের বাজারে আসে।  ২০২৪-এ ভারতে দ্য স্যাটানিক ভার্সেস এর উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছিল। তাঁদের যুক্তি ছিল, মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে এটি ঘটে।

রুশদি একজন ব্রিটিশ নাগরিক, কয়েক দশক ধরে বাকস্বাধীনতার জন্য লড়াই করে আসছেন।  ১৯৮৯ সালে ইরানের আয়াতুল্লাহ খোমেনেই তাঁর উপন্যাস স্যাটানিক ভার্সেস-এর জন্য তাঁর বিরুদ্ধে ফতোয়া  জারি করেন।‘ধর্মদ্রোহ’ তাঁর অপরাধ। তারপর প্রায় ১৩ বছর অন্তরালে ছিলেন রুশদি। বেনামে জীবন কাটিয়েছেন। প্রতিনিয়ত বন্দি থাকতেন পুলিশি পাহারায়। সেই সময় বইটির অনুবাদকদের উপরেও হামলা হয়। রুশদির বিরুদ্ধে জারি হওয়া মৃত্যু প্ররোয়ানা খোমেইনির মৃত্যুর পর ইরান প্রত্যাহার করে নেয়। তার পর ২০০১ সালে ছদ্মনামের জীবন থেকে বেরিয়ে আসেন লেখক।

২০২২ সালে নিউ ইয়র্কে আক্রান্ত হন রুশদি। তাঁকে ১৭বার ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়। ছুরির আঘাতে তাঁর এক চোখ অন্ধ হয়ে যায়। ঘটনার নিন্দা করে বিবৃতি দেয়  মোদী সরকার। বলা হয়, ‘ভারত বরাবরই হিংসা ও কট্টরপন্থার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। আমরা সলমন রুশদির উপর এই ভয়ঙ্কর হামলার নিন্দা করছি। কামনা করছি তাঁর দ্রুত সুস্থতারও।’

যদিও রুশদি এর আগেও বেশ কয়েকবার বিজেপি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সমালোচনা করেছেন। রুশদি নিজেই তাঁর ২০১২ সালের স্মৃতিকথা জোসেফ অ্যান্টনে লিখেছেন যে ভারতের নিষেধাজ্ঞা তাঁকে পরবর্তী ইরানি ফতোয়ার চেয়ে বেশি আঘাত করেছে, কারণ এটি সেই ধর্মনিরপেক্ষ দেশ থেকে এসেছে যাকে তিনি এখনও তাঁর বাড়ি বলে মনে করতেন। তাঁর সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে তিনি বর্তমান সরকারকে বারবার কর্তৃত্ববাদী হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

Advertisement