নেপালের সরকার ভেঙে দিলেন রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারী

কয়েকদিন আগেই রাজতন্ত্র ফেরানাের দাবিতে উত্তাল হয়েছে নেপাল। এবার নির্বাচিত সরকার ভেঙে দিতে তৎপর কেপি শর্মা ওলির সরকার।

Written by SNS Kathmandu | December 21, 2020 7:30 pm

নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি (File Photo: IANS)

কয়েকদিন আগেই রাজতন্ত্র ফেরানাের দাবিতে উত্তাল হয়েছে নেপাল। এবার নির্বাচিত সরকার ভেঙে দিতে তৎপর কেপি শর্মা ওলির সরকার। রবিবার এক জরুরি বৈঠকের পর রাষ্ট্রপতির কাছে এই প্রস্তাব পাঠানাে হয়। রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারী এদিন নেপালের সরকার ভেঙে দিলেন। আগামী বছর ৩০ এপ্রিল ও ১০ মে নেপালে পুনরায় জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে রাষ্ট্রপতি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। 

ওলির এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরােধিতা করেছে নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি। সংবাদমাধ্যমের বেশ কয়েকটি রিপাের্টে তেমনই দাবি করা হয়েছে। রিপাের্টে দাবি করা হয়েছে, শনিবার দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকের পর রবিবার সকালে মন্ত্রী পরিষদের জরুরি বৈঠক ডেকেছিলেন ওলি। সেখানে তিনি জানান, সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। অতএব সরকার ভেঙে দেওয়া হােক। সংবাদ সংস্থা এএনআই সূত্রে এমনই খর।

এরপরই প্রশ্ন উঠছে, নেপালে কি একদলীয় ব্যবস্থা ফেরানাের চেষ্টা করছেন ওলি? ভারতের সম্পর্কে টানাপােড়েনের মাঝেই এই পদক্ষেপ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। প্রসঙ্গত, ভারতের সঙ্গে মানচিত্র নিয়ে বিবাদের পর থেকেই নেপালের রাজনীতিতে প্রবল টানাপােড়েনের সৃষ্টি হয়।

প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির বিরুদ্ধে নেপালের শাসকদলের অভ্যন্তরেই তৈরি হয়েছে অসন্তোষ। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ড-সহ প্রায় সমস্ত শীর্ষস্থানীয় নেতাই ওলির অপসারণের দাবিতে সরব হয়েছেন।

এর মাঝেই নেপালের বিভিন্ন জায়গায় রাজতন্ত্র ফেরানাের দাবিতে শুরু হয়েছে আন্দোলন। দাবি উঠেছে ফের নেপালকে হিন্দু রাষ্ট্র বানানাের। এই আন্দোলনে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি মদত দিচ্ছেন বলে দাবি সেদেশের রাজনৈতিক দলগুলির। নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্যই তিনি এই কাজ করছেন বলে দাবি তাদের। 

নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিষঃ রিজাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছেন। সরকার ভেঙে দেওয়ার সুপারিশ করেছেন তিনি। দ্য কাঠমান্ডু পােস্ট-এর রিপাের্ট বলছে, সংবিধান পরিষদীয় আইন-এর অধ্যাদেশের বিষয়টি নিয়ে ক্রমাগত চাপ বাড়ছিল ওলির উপর। 

গত মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারী’কে দিয়ে তা সই করিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। তা ছাড়া বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে একটা অসন্তোষ তৈরি হচ্ছিল। 

করােনাভাইরাস, দেশের অর্থনীতি সংক্রান্ত বেশ কিছু ইস্যুতে নেপালের রাজনীতিতে একটা মােড়ােল চলছে। সরকার ব্যর্থ হয়েছে এই বিষয়গুলি সামাল দিতে, এই অভিযােগ তুলে ক্রমাগত চাপ বাড়াচ্ছিল বিরােধীরা। 

সূত্রের খবর, তাঁর উপর দলের অন্দরেও ওলির ভূমিকা নিয়ে একটা চাপা ক্ষোভ তৈরি হচ্ছিল। শেষমেশ সরকার ভেঙে দেওয়ার সুপারিশ করলেন ওলি। তাঁর এই সিদ্ধান্তের বিরােধিতা করে নেপালের কমিউনিস্ট পার্টির মুখপাত্র নারায়ণকাজি শ্রেষ্ঠ জানিয়েছেন, পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার বিষয়টি অসাংবিধানিক। এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা উচিত। তাছাড়া এদিনের বৈঠকে সকল মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন না। সকলকে অন্ধকারে রেখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গণতন্ত্রবিরােধী সিদ্ধান্ত যা দেশকে পিছিয়ে দেবে। এই সিদ্ধান্ত মানা যায় না। 

এপ্রসঙ্গে নেপালের শক্তিমন্ত্রী বারসামান পান জানিয়েছেন, মন্ত্রিসভা আজকের বৈঠকে সরকার ভেঙে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। রাষ্ট্রপতির কাছে সেই প্রস্তাব পাঠনাে হয়েছে। তাহলে কি নেপাল ফের রাজতন্ত্রের পথেই ফিরে যাবে? এ প্রশ্নটাই এখন আন্তর্জাতিক মহলে সবচেয়ে বেশি চর্চিত। তবে কেন এই প্রস্তাব দিল মন্ত্রিসভা, তা এখনও স্পষ্ট নয়।