রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে শুক্রবার ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু মঞ্চে উঠতেই বিক্ষোভ প্রদর্শন। শতাধিক কূটনীতিক বিক্ষোভস্বরূপ সভাকক্ষ ত্যাগ করেন। গাজায় গণহত্যা চালানো এবং মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশে হামলার প্রতিবাদেই এই ওয়াকআউট বলে খবর।
গাজায় লাগাতার ধ্বংসযজ্ঞ চালানো নিয়ে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে বিশ্বের একাধিক দেশ। প্যালেস্তাইনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি জানিয়েছে ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া-সহ প্রায় ১৪৩টি দেশ। এবার রাষ্ট্রসঙ্ঘের অধিবেশন চলাকালীন বিক্ষোভ প্রদর্শন বিশ্বের কূটনীতিবিদদের। রাষ্ট্রসঙ্ঘে নেতানিয়াহু ভাষণ দিতে উঠেই একে একে আসন ছাড়েন কূটনীতিকরা।
Advertisement
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম অনুযায়ী, নেতানিয়াহুর বক্তৃতা চলাকালীন আরব ও মুসলিম দেশগুলির প্রায় সকল প্রতিনিধিরাই ‘ওয়াক আউট’ করেন। তবে বেশ কয়েকটি আফ্রিকান এবং কিছু ইউরোপীয় রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা তাঁর ভাষণের সময় উপস্থিত ছিলেন। মার্কিন প্রতিনিধিদল নেতানিয়াহুকে করতালি দিয়ে সমর্থন জানায়। নেতানিয়াহু সেই সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। হলে উপস্থিত ব্রাজিলীয় প্রতিনিধিদলকে ঐতিহ্যবাহী প্যালেস্তাইনি ‘কেফিয়াহ’ পরে থাকতে দেখা যায়।
Advertisement
গত এক সপ্তাহ ধরে রাষ্ট্রসঙ্ঘে প্যালেস্তাই কর্তৃপক্ষের মিশন বিভিন্ন বিশ্বনেতাকে চিঠি পাঠিয়ে নেতানিয়াহুর ভাষণ বয়কটের আহ্বান জানায়। ইজরায়েলে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধাপরাধী’ অভিযোগও তোলা হয়। ২০২৪ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল।
সম্প্রতি নেতানিয়াহু হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, তেল আভিভ শীঘ্রই গাজায় তার অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করে ফেলবে।
ইজরায়েলি সেনাবাহিনীকে তাঁর এই হুমকিবার্তা গোটা গাজায় লাউডস্পিকারের মাধ্যমে শোনানোরও নির্দেশও দেন তিনি। তারপরই রাষ্ট্রসঙ্ঘে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ বয়কটে নেতানিয়াহুর মুখ পুড়ল বলে মনে করা হচ্ছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইজরায়েলে হামলা চালায়। এরপর হামলার বদলা স্বরূপ প্যালেস্তাইন জঙ্গি সংগঠন হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
গত দু’বছর ধরে গাজায় হামলা অব্যাহত রয়েছে। ইজরায়েলের লাগাতার হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গোটা গাজা। সংঘর্ষবিরতি নিয়ে আলোচনা চললেও তার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। দু’বছরের বেশি সময় ধরে চলতে থাকা গাজা যুদ্ধ থামাতে উঠে পড়ে লেগেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এখনও সাফল্য মেলেনি। যুদ্ধে এখনও পর্যন্ত গাজায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬০ হাজারেরও বেশি।
পাশাপাশি, আহতের সংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ। অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন ৪ লক্ষ ৭০ হাজার মানুষ। অন্যদিকে, হামাসের হাতে এখনও পণবন্দি রয়েছেন বহু মানুষ। এই পরিস্থিতিতে গত ১৬ সেপ্টেম্বর গাজা শহরের আরও ভিতরে প্রবেশ করে অভিযান শুরু করেছে ইজরায়েলি সেনা। শয়ে শয়ে ঢুকেছে ইজরায়েলি ট্যাঙ্কও।
প্রসঙ্গত, গাজায় ইজরায়েলি হামলা নিয়ে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ। হামলার জেরে সাধারণ প্যালেস্তিনীয়দের মৃত্যু হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক আইন মানছেন না বলেও অভিযোগ উঠেছে। তার পরেও নেতানিয়াহু গাজায় লাগাতার হামলা চালিয়ে গিয়েছেন। হামলার তীব্রতা আরও বাড়ানো হয়েছে বলে একাংশের মত।
সম্প্রতি রাষ্ট্রসঙ্ঘ জানিয়েছিল, গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ জমি দখল নিয়েছে ইজরায়েল। বাকি জমিও দখল করতে বদ্ধপরিকর ইজরায়েল। গাজার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছিল রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানবাধিকার কমিশন। সম্প্রতি সেই রিপোর্ট প্রকাশ্যে এসেছে। রিপোর্টে গাজায় গণহত্যার জন্য সরাসরি ইজরায়েলকেই কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে। এসবের মাঝেই গাজায় ‘গ্রাউন্ড অফেনসিভ’ শুরু করেছে ইজরায়েল। এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রসঙ্ঘে নেতানিয়াহুকে বয়কট করল একাধিক দেশের প্রতিনিধিরা।
Advertisement



