আন্তর্জাতিক মঞ্চে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি দিলেও পাকিস্তানের দু-মুখো নীতি ফের প্রকাশ্যে এলো। একদিকে তারা দাবি করে সন্ত্রাসের সঙ্গে তাদের কোনও যোগ নেই, অন্যদিকে সেই পাকিস্তানেই ফের মাথাচাড়া দিচ্ছে লস্কর-ই-তৈবার নতুন নতুন ঘাঁটি। আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য হল, এই ঘাঁটির নির্মাণ খরচ জোগাড় করা হচ্ছে ‘বন্যা ত্রাণ’-এর নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা তুলে।
প্রসঙ্গত, পহেলগাম হামলার প্রত্যাঘাতে গত মে মাসেই ভারতীয় বায়ুসেনা ‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিযান শুরু করে। পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ভেতরে ঢুকে একাধিক জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয় বায়ুসেনা। ওই অভিযানে পাঞ্জাব প্রদেশের মুরিদকে অবস্থিত লস্করের কেন্দ্রীয় ঘাঁটি মারকাজ তৈবা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়া হয়। কিন্তু গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়েছে নতুন তথ্য। সেই ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে আবারও সেখানে তৈরি হচ্ছে আধুনিক জঙ্গিঘাঁটি।
Advertisement
তথ্য অনুযায়ী, ১৮ আগস্টের মধ্যেই মাটি থেকে সরানো হয়েছিল ধ্বংসাবশেষ। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ভেঙে ফেলা হয় অবশিষ্ট ভবন। জানা গিয়েছে, ২০২৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ‘কাশ্মীর ঐক্য দিবস’-এ সেই নতুন ঘাঁটির উদ্বোধন করার পরিকল্পনা রয়েছে লস্করের। এখানেই চলবে জঙ্গি নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও নাশকতার ছক কষা।
Advertisement
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হল, পাকিস্তান সরকারও এই পুনর্নির্মাণে গোপনে সাহায্য করছে। লস্কর-ই-তৈবা ইতিমধ্যেই সরকারি ভাণ্ডার থেকে ৪ কোটি পাকিস্তানি টাকা পেয়েছে, যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১.২৫ কোটি টাকা। গোটা প্রকল্প শেষ করতে লাগতে পারে প্রায় ১৫ কোটি পাকিস্তানি টাকা।
এদিকে স্থানীয়দের কাছ থেকেও অর্থ সংগ্রহ করছে জঙ্গিরা। সরাসরি ‘জঙ্গিঘাঁটির জন্য চাঁদা’ বলা যায় না, তাই আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে বন্যা ত্রাণের। মানুষ ভাবছেন তাঁদের অনুদান দুর্গতদের জন্য যাচ্ছে, বাস্তবে তা খরচ হচ্ছে জঙ্গি ঘাঁটি গড়তে।
গোয়েন্দা সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, মারকাজ তৈবার ডিরেক্টর এবং লস্করের অন্যতম শীর্ষ প্রশিক্ষক মৌলানা আবু জার সরাসরি এই প্রকল্পের দেখভাল করছেন। আপাতত লস্করের অস্থায়ী প্রশিক্ষণ শিবির সরানো হয়েছে ভাওয়ালপুরে। তবে মূল কেন্দ্র তৈরি হয়ে গেলে ফের সেখানে নতুন করে তাদের কার্যকলাপ শুরু হবে।
এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করল, আন্তর্জাতিক চাপ ও নিন্দাকে তোয়াক্কা না করে পাকিস্তান এখনও সন্ত্রাসবাদকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। প্রশ্ন উঠছে, বন্যা দুর্গতদের দুর্দশাকে আড়াল করে যে টাকা তোলা হচ্ছে, তা যদি জঙ্গিদের হাতে পৌঁছে যায়, তবে গোটা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তাই নতুন করে হুমকির মুখে পড়তে পারে।
Advertisement



