মার্কিন রফাসূত্র মেনে যুদ্ধবিরতিতে বসতে রাজি ইজরায়েল। কিন্তু আমেরিকার সেই প্রস্তাবে সম্মত নয় হামাস। ফলে গাজায় যুদ্ধ, প্রাণহানির মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি থামিয়ে স্বাভাবিক জনজীবন ফিরিয়ে আনা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউস জানিয়েছিল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের দেওয়া রফাসূত্রে ‘সই’ করেছে ইজরায়েল। তবে হামাসের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। আবার হোয়াইট হাউসের এই দাবি নিয়ে ইজরায়েলও সরকারিভাবে কোনও মন্তব্য করেনি। এরপর বৃহস্পতিবার হামাসের হাতে আটক ইজরায়েলি পণবন্দিদের পরিবারের সঙ্গে বৈঠকের সময়ই নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ‘ইজরায়েল উইটকফের নতুন প্রস্তাব গ্রহণ করেছে।’ কিন্তু প্যালেস্টাইনপন্থী সশস্ত্র বাহিনী হামাস জানিয়ে দিয়েছে, আমেরিকার দেওয়া যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে রাজি নয় তারা। কারণ আমেরিকার এই সরকারি প্রস্তাব নিয়ে যথেষ্ট সংশয় প্রকাশ করেছে হামাস গোষ্ঠী। তাদের ধারনা, যুদ্ধিবিরতি নিয়ে যতই আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হোক না কেন, গাজায় ‘হত্যালীলা’ ও ‘দুর্ভিক্ষ’ পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হবে না।
সম্প্রতি সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে হামাসের এক কর্তা জানিয়েছে, ‘যুদ্ধবিরতি’ এবং ‘পণবন্দি’ মুক্তি নিয়ে আমেরিকা যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে। আমেরিকার প্রস্তাব নিয়ে হামাসের রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সদস্য বাসেম নাঈম সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছিলেন, এই চুক্তিতে যুদ্ধ বন্ধ করার কথা বলা হলেও তা তাঁদের জনগণের কোনও দাবি পূরণ করতে ব্যর্থ। সেই কারণেই মার্কিন প্রস্তাবে তাঁরা সায় দিচ্ছে না। এমনটাই জানিয়েছেন হামাসের ওই কর্তা।
যুদ্ধ বিরতি নিয়ে আমেরিকার কী প্রস্তাবে ছিল, সেবিষয়ে সরকারিভাবে না জানালেও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছিল, প্রথম দফায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি হবে হামাস ও ইজরায়েলের মধ্যে। এই যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে হামাস ১০ জন পণবন্দিকে মুক্তি দেবে। যুদ্ধবিরতি চলাকালীন গাজার নির্দিষ্ট অংশ থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে ইজরায়েল। এই রফাসূত্রে বেশ কয়েকজন জেলবন্দি প্যালেস্টাইনিকেও মুক্তি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু হামাস সেই প্রস্তাবে রাজি না হতেই অচলাবস্থা থেকেই যাচ্ছে। এ বার আমেরিকা কী পদক্ষেপ করে, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে নানা মহলে।
উল্লেখ্য, গত ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর প্যালেস্টাইনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের আল কাশিম ব্রিগেড ইজরায়েলি ভূখণ্ডে হামলা চালায়। এর পরে নেতানিয়াহুর ফৌজ ধারাবাহিকভাবে গাজায় সামরিক অভিযান চালিয়ে ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করে। এর পর আমেরিকা ও মিশরের প্রচেষ্টায় এবং কাতারের মধ্যস্থতায় গত ১৫ জানুয়ারি রাতে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় ইজরায়েল ও হামাস। ১৯ জানুয়ারি থেকে সেই যুদ্ধবিরতি কার্যকরও হয়েছিল। কিন্তু পণবন্দিদের মুক্তি ঘিরে টানাপোড়েন শুরু হয়। ফলে মার্চের গোড়ায় একতরফা যুদ্ধবিরতি ভেঙে ফের গাজায় হামলা শুরু করে ইজরায়েলের সেনাবাহিনী। সেই থেকে প্রায় প্রতিদিনই নাগাড়ে হামলা চালাচ্ছে ইজরায়েল।