পরিবেশ রক্ষায় দুবাইয়ে পুরস্কৃত একরত্তি ভারতীয় ‘কাগজকুড়ানি’

আমাদের দেশ হলে লােকে তাকে বলত কাগজকুড়ানি। একে ‘ইতরােচিত’ কাজ হিসেবেই দেখা হয় ভারতে।

Written by SNS Dubai | June 14, 2019 8:46 pm

পুরষ্কার পেলেন নিয়া টনি (Photo: Screengrab/YouTube/@Emirates Environmental Group EEG)

আমাদের দেশ হলে লােকে তাকে বলত কাগজকুড়ানি। একে ‘ইতরােচিত’ কাজ হিসেবেই দেখা হয় ভারতে। কিন্তু পরিবেশরক্ষায় সেই কাগজ কুড়িয়েই আরবমুলুকে নজির গড়েছে আট বছরের এক ভারতীয় বালিকা। প্রশাসন পুরস্কৃতও করেছে নিয়া টনি নামে একরত্তি পরিবেশ-সেনানীকে। প্রায় ১৫০০০ কিলােগ্রাম কাগজের বর্জ্য সংগ্রহ করেছে মেয়ে।

সংযুক্ত আরব আমিরশাহির দেশজোড়া রিসাইক্লিং অভিযানের অংশ হিসেবে স্বচ্ছতার সৈনিককে সম্মান জানতে কসুর করেনি দুবাই। পরিবেশ রক্ষায় আমাদের দেশে স্বচ্ছ ভারত অভিযান চলছে বেশ কয়েক বছর ধরে। অভিযােগ, সেই স্বচ্ছতা অভিযান ঘিরে রাজনেতাদের দেখনদারি আর প্রচারের ঢাক বাজানাের পিছনে বিস্তর খরচাপতি হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রয়ােজনীয়তা দেশের সিংহভাগ নাগরিককে আলােড়িত করতে পারেনি। ফলে চোখ খুলতেই দেশের প্রায় সর্বত্র নােংরা আবর্জনার দেখা মেলে। চতুর্দিকে প্লাস্টিক-পলিথিনের জঞ্জাল প্রতিনিয়ত দূষিত করে চলেছে মাটি, জল, বাতাসকে। সেই নিরিখে আরবের স্বচ্ছতা অভিযান ভারতের কাছে দৃষ্টান্ত হতে পারে বলে মনে করছে তথ্যাভিজ্ঞ মহল।

সংযুক্ত আরব আমিরশাহির রিসাইক্লিং অভিযানে প্রতিবছর ব্যক্তিগত, সমষ্টিগত এবং প্রতিষ্ঠানগতভাবে সেরাদের বেছে নিয়ে পুরস্কৃত করা হয়। এই অভিযান তারা চালাচ্ছে বিগত ২২ বছর ধরে। এবারে ব্যক্তিগত উদ্যোগ বিভাগে সেরার শিরােপা পেয়েছে ভারতীয় বংশােদ্ভূত ছাত্রী নিয়া টনি। একাই ১৪ হাজার ৯১৪ কিলােগ্রাম নােংরা কাগজ সংগ্রহ করছে বালিকা। নিজের এলাকায় ঘুরে ঘুরে খুদে নিয়া কুড়িয়ে নিয়েছে মানুষের ফেলে দেওয়া কাগজের টুকরাে। এলাকার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে তার এই কাজকে সমর্থন জানিয়েছেন নিয়ার অভিভাবকরাও।

সংবাদমাধ্যমের কাছে নিয়া বলেছে, ‘আমাদের মহল্লায় ঘােরার সময় কাগুজে যা কিছু পেয়েছি, কুড়িয়ে নিয়েছি, যাতে এই কাগজের বর্জ্যগুলাে পুনর্ব্যবহারের কাজে লাগানাে যায়। এলাকাও সাফসুতরাে থাকে। প্রতি সপ্তাহে এই কাজ করেছি। এর মধ্যে ফেলে দেওয়া কাগজ, ম্যাগাজিন ছাড়াও অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের কাগজ রয়েছে, যা মানুষ যত্রতত্র ফেলে দেয়। এ বিষয়ে সচেতনতা প্রচারও করছে ছােট্ট নিয়া। ‘বেপরােয়া’ মানুষ যেদিন বুঝবে, এই সবুজ, প্রকৃতি ধ্বংস আদতে তার নিজেরও ধ্বংস ডেকে আনবে, সেদিন থেকে বদলে যাবে ছবিটা। মানুষ দেখে শেখে আর ঠেকে শেখে।

নিয়ার মতােই পুরস্কৃত হয়েছে আরেক ভারতীয় কন্যা। সাত বছর বয়সী লক্ষ্মণা কার্তিকেয়ন সংগ্রহ করেছে ৬,৯৮৭ কিলােগ্রাম কাগজের বর্জ। সংযুক্ত আরব আমিরশাহির এই স্বচ্ছতা অভিযানে অংশ নেয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পড়ুয়ারাও। তারা নানা ধরনের বর্জ্য সংগ্রহ করে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে জমা করে সেই জঞ্জালের মধ্যে বর্জ্য ছাড়াও রয়েছে প্লাস্টিক, কাচ, মােবাইল, ক্যান এবং টোনার। ফল মিলেছে হাতেনাতে সব মিলিয়ে এই অভিযানে এখন পর্যন্ত। ৭৩,৩৯৩ মেট্রিক টন বর্জ্য রিসাইক্লিংয়ে পাঠিয়ে অনেকখানি দূষণ কমিয়ে আনতে পেরেছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি। নিয়াদের দেশ ভারত পারবে কি? প্রশা যত সহজ, উত্তর ততটাই কাঠিন।