• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

হংকংয়ের বহুতলে অগ্নিকাণ্ডের জেরে মৃত্যু বেড়ে ৫৫

হংকং প্রশাসন ইতিমধ্যেই বিস্তারিত তদন্ত শুরু করেছে। পরিকাঠামো এবং নির্মাণের বিধিভঙ্গের অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

হংকংয়ের বহুতলের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড একের পর এক মৃত্যু-সংবাদ সামনে আসছে। তাই পো–র ওয়াং ফুক কোর্ট আবাসনে বুধবার দুপুরে লাগা আগুন একসময় আটটি বহুতল জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ঘন কালো ধোঁয়া, দহনশীল নির্মাণসামগ্রী এবং ভবনের চারপাশে চলতে থাকা সংস্কারকাজ— সব মিলিয়ে পরিস্থিতি মুহূর্তে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত সরকারি হিসাবে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৫ জনের কাছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন উদ্ধারকাজে নামা এক অগ্নিনির্বাপক কর্মীও। দমকলের স্থানীয় দপ্তরের পক্ষ থেকে আরও বহু মানুষ নিখোঁজ বলে জানা গিয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, নীচের দিকের স্ক্যাফোল্ডিংয়ের অংশেই প্রথম আগুনের ধরা পড়ে। সেখানে ব্যবহৃত বাঁশ, প্লাস্টিকের নেট, ফোম জাতীয় দাহ্য বস্তু এবং সংস্কারকাজে রাখা সস্তা মশারি-জাতীয় জাল কয়েক মিনিটে আগুনকে উস্কে দেয়। দ্রুত তা উপরতলার বারান্দা, দেওয়াল, এমনকি বাড়ির ভেতরেও ঢুকে পড়ে। বহু মানুষ ঘন ধোঁয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েন। দমকলকর্মীরা এক একটি তলা ভেঙে, দেওয়া ও জানালা কেটে এবং দড়ি টাঙিয়ে মানুষ বার করার চেষ্টা করলেও আগুন ও ধোঁয়ার তীব্রতার জেরে কাজ অনেকটাই পিছিয়ে যায়।

Advertisement

অতি উচ্চ এই আবাসনে কয়েক হাজার মানুষ থাকতেন। অগ্নিকাণ্ডের পর রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বহু পরিবারকে নীচে নামিয়ে আনা হয়। অনেককে কাছের কমিউনিটি সেন্টার ও স্কুলে নিয়ে গিয়ে রাখা হয়। প্রাণে বাঁচা লোকজনের কথায়, ‘এমন মৃত্যু দেখিনি। চোখের সামনে আগুনের বলয়, বেরোতে চাইছি, কিন্তু ধোঁয়ায় নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।’ দমকলকর্মীদের অনেকেই বলছেন, আগুন লাগার পর যে গতিতে তা ছড়িয়েছে, তেমনটি হংকংয়ে বহু বছর দেখা যায়নি।

Advertisement

হংকং প্রশাসন ইতিমধ্যেই বিস্তারিত তদন্ত শুরু করেছে। পরিকাঠামো এবং নির্মাণের বিধিভঙ্গের অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে ‘গুরুতর অবহেলা’ এবং মানুষের প্রাণহানির দায়ে একাধিক ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে। তদন্তে দেখা যাচ্ছে, গত কয়েক মাস ধরে বহুতলের সংস্কারের কাজ চলছিল। নানা জায়গায় নিরাপত্তা–বিধির ঘাটতি ছিল। বিশেষত ব্যবহৃত বাঁশের কাঠামো, পুরনো প্লাস্টিকের নেট, জ্বলনশীল ফোম এবং বদ্ধ জায়গায় অতিরিক্ত আবর্জনা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।

দুর্ঘটনার পর হংকংয়ের মুখ্য প্রশাসনিক কর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন। বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা আধিকারিকরা ইঙ্গিত দিয়েছেন বহু ঘর অগ্নিদগ্ধ হওয়ায় পুরো আবাসনটিকেই নতুন করে নিরাপত্তা মূল্যায়নের মধ্যে আনা হতে পারে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানবিক সহায়তা শাখার পক্ষেও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু হয়েছে।

এই অগ্নিকাণ্ডকে অনেকে ১৯৯৬ সালের বিখ্যাত গার্লে বিল্ডিং বিপর্যয়ের পর সবচেয়ে বড় বিপর্যয় বলে দাবি দাবি করেছেন। শহর জুড়ে এখন প্রশ্ন উঠছে, সংস্কারকাজের নামে পরিকাঠামো–নিয়ম মানা নিয়ে এত শিথিলতা কেন? সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে নতুন করে কঠোর নিয়ম ও নজরদারির দাবি তুলছেন বহু সাধারণ নাগরিক।

Advertisement