বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছারিবাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনায় দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছে সে দেশের প্রশাসন। এই ঘটনার তদন্তের জন্য জেলা প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রক একটি বিবৃতি জারি করে এই বিষয়ে জানিয়েছে। গত মঙ্গলবারের ভাঙচুরের ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে পদক্ষেপ করার আর্জি জানাতে অনুরোধ করেছিলেন মমতা। তারপরই বাংলাদেশের বিবৃতিটি প্রকাশ্যে এসেছে।
বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘বাংলাদেশের সরকার নিয়ন্ত্রিত একটি সম্পত্তিতে কিছু ঘটনা ঘটেছে। তার সঙ্গে নোবেলজয়ী বাঙালি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের যোগ রয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। কয়েকদিন আগে দুই জন ওই বাড়িটি ঘুরে দেখতে এসেছিলেন। তাঁদের সঙ্গে বাড়ির দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা এক ব্যক্তির কথা কাটাকাটি হয়। ১০ জুন এই নিয়ে স্থানীয় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছেন দুই জন। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিষয়টি খতিয়ে দেখছে জেলা প্রশাসন। উপযুক্ত আইনি পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের মানুষ এবং সরকার কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে আমাদের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতিতে তাঁর অবদানের জন্য সর্বোচ্চ সম্মান প্রদান করে থাকে। আমরা আগামীদিনেও তাঁর কীর্তি সযত্নে লালন করব। এ নিয়ে কোনও বিতর্কে ইন্ধন দেওয়া বা বিভেদমূলক প্রচেষ্টার সুযোগ বাংলাদেশে নেই।’
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার রবীন্দ্রনাথের পৈতৃক বাড়িটি দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে দুই পর্যটকের বচসা হয়। বিষয়টি গড়ায় হাতাহাতি ও মারপিট পর্যন্ত। জানা গিয়েছে, সাইকেল রাখার টোকেন দেওয়াকে কেন্দ্র করে ঝামেলা শুরু হয়। সেই গণ্ডগোলকে কেন্দ্র করে শাহজাদপুর প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করে বিক্ষুব্ধ জনতা। পরে বিক্ষোভ মিছিলটি রবীন্দ্রনাথের কাছারিবাড়িতে ঢুকে পড়ে। মিছিলে থাকা কয়েকজন দুষ্কৃতী বাড়িটির তত্ত্বাবধায়কের অফিস, প্রেক্ষাগৃহের জানালা, দরজা ভাঙচুর করে। এই ঘটনার পর সেই বাড়িতে দর্শনার্থীদের প্রবেশাধিকার সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয় স্থানীয় প্রশাসন।
ভাঙচুরের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে বাংলাদেশের সরকারকে চাপ দেওয়ার জন্য মোদীর কাছে আর্জি জানান তিনি। চিঠিতে মমতা লিখেছিলেন, এ রকম একটি স্মৃতি বিজরিত বাড়িতে ভাঙচুর করা আমাদের জাতীয় গৌরব ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ক্ষেত্রে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। স্বদেশী আন্দোলনের সময় কবি বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে এখান থেকেও প্রতিবাদে মুখর হয়েছিলেন। কবির কাছারিবাড়িতে আঘাত করা মানে এই মহান কবির অমর সৃষ্টির মূলে আঘাত করা। তিনি জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই যা ক্ষতি হয়েছে তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ হলে ভবিষ্যতে এই সাংস্কৃতি ঐতিহ্যের উপর আর আঘাত আসবে না। রবীন্দ্রনাথ শুধু বাংলারই নন, তিনি সমস্ত বিশ্বের। এই চিঠির প্রসঙ্গ প্রকাশ্যে আসতেই বাংলাদেশ বিবৃতি দিয়ে এই ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের কথা জানিয়েছে।