• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

ওয়ারাঙ্গল ভ্রমণ

সম্রাট বাহাদুর শাহ এবার পাপরাকে দমন করার জন্য ইউসুফ খান রুজবিহান নামে এক প্রতিনিধিকে প্রেরণ করেন।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

জমিল সৈয়দ

তেলেঙ্গানা রাজ্যের ওয়ারাঙ্গল পৌঁছে দেখলাম, মোটামুটি বড় শহর, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। চওড়া রাস্তা। রাস্তায় ট্রাফিকের জট নেই।

Advertisement

ওয়ারাঙ্গলে তিনটি জায়গায় মানুষেরা বেড়াতে আসে।
১. ওয়ারাঙ্গল ফোর্ট ২. সহস্র স্তম্ভ মন্দির এবং ৩. ভদ্রকালী মন্দির।

Advertisement

ওয়ারাঙ্গল আমি গিয়েছিলাম হায়দরাবাদ থেকে। সকালে কাগজনগর এক্সপ্রেস ধরে নেমেছি কাজিপেট স্টেশনে। তারপর একটি অটোরিকশা ধরে উঠেছিলাম হরিথা কাকাতিয় টুরিস্ট লজে৷ ওয়ারাঙ্গলে দুটি বড় স্টেশন— ওয়ারাঙ্গল এবং কাজিপেট।

ওয়ারাঙ্গল দুর্গের ধ্বংসাবশেষ দেখে আমি স্তম্ভিত হয়ে গেছি। পুরো প্রাঙ্গণ জুড়ে কারুকার্য-খচিত পাথরের স্তূপ ছড়িয়ে আছে।

ওয়ারাঙ্গল শহরের আদি নাম, ওরুগাল্লু কিংবা একশিলা নগরম। ‘ওরু’ শব্দের অর্থ ‘এক’ এবং ‘গাল্লু’ শব্দের অর্থ ‘পাথর’। ফোর্টের পাশে বিশালাকার এক পাথর, যা আজও আছে, তারই অনুষঙ্গে জনপদের নামকরণ হয়েছিল ওরুগাল্লু ।

ফোর্টে ঢুকে, একটা দীর্ঘশ্বাস উঠে আসে। এই অনুজ্জ্বল হয়ে আসা পাথরগুলো একসময় আনন্দে ঝকমক করতো। রাজা ও রাজন্যবর্গের পদশব্দে ও সংলাপে ভরে থাকত মন্দির ও প্রাসাদ।
একটা বর্গক্ষেত্রের মতো বিশালাকার প্রাঙ্গণ, তার চারদিকে চারটি তোরণ। ভিতরে বিভিন্ন স্থাপত্যের ও মন্দিরের অবশিষ্টাংশ আজ অতীত স্মৃতির রুপোলি রেখার মতো জেগে আছে।
দ্বাদশ এবং ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ওয়ারাঙ্গল দুর্গ কাকতিয়া রাজবংশের রাজধানী ছিল। কাকতিয়া রাজবংশ এই এলাকায় দুশো বছর রাজত্ব করেছিল। কাকতিয়রা শিল্প ও স্থাপত্যে তাদের অবদানের জন্য পরিচিত ছিল, যার মধ্যে রয়েছে সুদৃশ্য মন্দির নির্মাণ।

কাকতিয় বংশের রাজা গণপতি দেব ছিলেন বিভিন্ন নির্মাণে অত্যুৎসাহী। রামাপ্পা মন্দিরও তাঁর কীর্তি। এই দুর্গ তিনিই নির্মাণ শুরু করেন এবং সমাপ্ত করেন তাঁর কন্যা রানি রুদ্রামা দেবী।
দুর্গটি তার চারপাশে চারটি প্রবেশ পথের তোরণের জন্য বিখ্যাত, যা ‘কাকতিয়া তোরণ’ নামে পরিচিত। তোরণগুলি পাথরনির্মিত, সুন্দর খোদাই এবং ভাস্কর্য দ্বারা সজ্জিত। এই চারটি তোরণ সম্ভবত সংস্কার করা হয়েছে।

দুর্গটি ও তার আশপাশের এলাকা ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এদের মধ্যে হাজার স্তম্ভ মন্দির এবং অন্যান্য কাকতিয়া স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে।

দুর্গটিতে বিশাল পাথরের দেওয়াল এবং জটিল পাথরের খোদাইকার্য রয়েছে যা কাকতিয় কারিগরদের কারুশিল্পের বিস্ময়কর দক্ষতাকে প্রকাশ করছে। স্থানীয় গ্রানাইট পাথরের ব্যবহার হয়েছিল দুর্গের স্থায়িত্ব বৃদ্ধির জন্য।

দুর্গটিতে একটি পরিখা ছিল যা সুরক্ষা প্রদান করতো এবং একদা জল সরবরাহ করার ব্যবস্থা ছিল। জলাধার এবং কূপ ছিল দুর্গের মধ্যে।

আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে ওয়ারাঙ্গল দুর্গ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
প্রথমে বাহমনি সুলতানেরা এই দুর্গসহ সম্পূর্ণ কাকতিয় সাম্রাজ্য দখল করে। তাদের হঠিয়ে আবির্ভাব ঘটে মোগলদের।

১৩০৯ সালে আলাউদ্দিন খিলজির সেনাপতি মালিক কাফুর আসেন কাকতিয় সাম্রাজ্য দখল করতে। তখন এই দুর্গ থেকে প্রচণ্ড লড়াই করেন কাকতিয় রাজা। কিন্তু মালিক কাফুর দুর্গ দখল করেন ও সে সময় ব্যাপক ভাঙচুর করেন।

পরে বারবার আক্রমণ ঘটেছিল দিল্লির শাসকের পক্ষ থেকে। সমগ্র দাক্ষিণাত্যকে জয় করার উদগ্র নেশায় তাঁরা রাজ্যবিস্তার করছিলেন। ঔরঙ্গজেব তাঁর জীবনের ২০ বছর দাক্ষিণাত্যে কাটিয়েছেন, যুদ্ধ-বিগ্রহের মধ্য দিয়ে।

আজ, ওয়ারাঙ্গল দুর্গ একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র— যা ইতিহাস, স্থাপত্য এবং এই অঞ্চলের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি আগ্রহী দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে।

।। ২।।
কাকতিয় বংশের ‘কাকাতিয়’ নামকরণ হয়েছে তাদের বংশের দেবী ‘কাকতি’র নাম থেকে। কাকতি সম্ভবত দেবী দুর্গার অন্য একটি রূপ।

ব্রিটিশরা আসার আগে, সার্বভৌম ভারতবর্ষ বলে কিছু ছিল না। তখন ছোট ছোট এলাকা নিয়ে অজস্র রাজা-মহারাজা বিরাজ করতেন। একজনের সঙ্গে অন্যজনের কোনও ঐক্য ছিল না। এই রাজারা পরস্পরের সঙ্গে যুদ্ধ করতেন, তেমনই বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ স্থানীয় সংস্কৃতিকে উজ্জীবিত করতেন। নিজেদের জন্য বিশাল প্রাসাদ বানাতেন, সেইসঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় মন্দির বানানো ছিলো এঁদের নেশা। এঁদের বিলাসিতার কড়ি জোগাতেন গরিব প্রজারা।

দাক্ষিণাত্যের ইতিহাস সম্পর্কে আমরা খুবই কম জানি, কারণ এদের দুর্বোধ্য ভাষা ভেদ করে এদের বইপত্র পড়ার ক্ষমতা প্রায় কারুরই ছিলো না। এখন ইংরেজির বদান্যতায় অল্পবিস্তর জানতে পারছি।

কাকতিয় রাজবংশ ছিল একটি শক্তিশালী এবং প্রভাবশালী তেলুগু রাজবংশ যারা দ্বাদশ থেকে চতুর্দশ শতাব্দী পর্যন্ত তেলেঙ্গানা অঞ্চল এবং অন্ধ্রপ্রদেশের কিছু অংশে শাসন করেছিল। বর্তমানের অন্ধ্র-তেলেঙ্গানা জুড়ে এঁদের প্রতিপত্তি ছিলো।

বর্তমান কর্ণাটক রাজ্যের বিদার জেলায় বাসবকল্যাণ নামে একটি শহর আছে, সেটার প্রাচীন নাম কল্যাণী। কল্যাণী ছিল চালুক্য রাজাদের রাজধানী।

কল্যাণীর চালুক্যদের শাসনকালে কাকতীয়রা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিল। এই বংশের প্রথম সদস্য ছিলেন বেটা প্রথম (Beta-I) (১০০০-৫২)। তিনি তেলেঙ্গানার একজন অজ্ঞাত ক্ষুদ্র নেতা ছিলেন, যা তখন পশ্চিম চালুক্য রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল। চালুক্যদের সঙ্গে চোলদের বৈরিতা ছিল। বেটা-১ তাঁর চালুক্য অধিপতির পক্ষ নিয়ে চোল সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং চোলদের হঠিয়ে বিপুল কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন।

বেটা-১-এর মৃত্যুর পর তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন তাঁর পুত্র প্রোলা-১ (১০৫২-৭৫)। তিনি চালুক্য সেনাবাহিনীর পক্ষ নিয়ে বেশ কয়েকজন শত্রু নেতাকে দমন করেছিলেন। প্রথম প্রোলার সামরিক ক্ষমতা এবং অবিচল আনুগত্যে মুগ্ধ হয়ে, চালুক্য সম্রাট তাঁকে হনমকোণ্ডা নামে একটি এলাকা প্রদান করেন।

হনমকোণ্ডাতেই প্রোলা-১ কাকতিয় রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করলেন। প্রোলা ১ মারা যান ১০৭৫ খ্রিস্টাব্দে এবং তাঁর ছোট ছেলে বেটা-২ (আনুমানিক ১০৭৫-৯০) তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন।

কাকাতীয় রাজবংশের উল্লেখযোগ্য শাসক ছিলেন গণপতি দেব, যিনি ১১৯৯ থেকে ১২৬৯ সাল পর্যন্ত শাসন করেছিলেন এবং কাকতীয় সাম্রাজ্যের বিস্তার করেছিলেন।

কাকতীয় রাজবংশ তাদের স্থাপত্য কৃতিত্বের জন্য পরিচিত ছিল, যার মধ্যে রয়েছে ওয়ারাঙ্গল দুর্গ, হাজার স্তম্ভ মন্দির এবং রামপ্পা মন্দির নির্মাণ।

তিনি তাঁর রাজধানী হনমকোণ্ডা থেকে ওয়ারাঙ্গল বা ওরুগাল্লুতে স্থানান্তরিত করেছিলেন। সেসময় ওরুগাল্লু নামটিই প্রচলিত ছিলো, যার অর্থ একশিলা।

কাকতীয় শাসকদের মধ্যে ছিলেন গণপতি দেবের কন্যা রুদ্রমা দেবী, যিনি তাঁর দুই বৈমাত্রেয় ভ্রাতাকে হত্যা করে ওয়ারাঙ্গলের সিংহাসন দখল করেন। রুদ্রমা ১২৬২ থেকে ১২৮৯ সাল পর্যন্ত শাসন করেছিলেন এবং তাঁর সাহসিকতা এবং সামরিক দক্ষতার জন্য পরিচিত ছিলেন।

কাকতীয়রা প্রতিবেশী রাজ্য এবং আরব সহ বিদেশী দেশগুলির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। ১৪ শতকে দিল্লি সুলতানির আক্রমণের কারণে কাকতীয় রাজবংশের পতন ঘটে।
১৩২৩ সালে দিল্লি সুলতানির কাছে শেষ কাকতীয় শাসক দ্বিতীয় প্রতাপরুদ্র পরাজিত হন, যা কাকতীয় রাজবংশের সমাপ্তি নির্দেশ করে।

কাকতীয়রা চালুক্য স্থাপত্যশৈলী দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন, যদিও তাঁরা এতে তাঁদের ‘স্বাতন্ত্র্যসূচক বৈশিষ্ট্য’ যোগ করেছিলেন। তবে, কাকতীয় এবং হয়সলাদের স্থাপত্যের মধ্যে একটি অদ্ভুত সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়— হয়সলা রাজবংশ পার্শ্ববর্তী কন্নড় ভাষাভাষী অঞ্চলের শাসক ছিলেন। তাঁরা কাকতীয়দের সমসাময়িক ছিলেন।

কাকতীয়রা স্থাপত্যের মূল কাঠামোর জন্য স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য গ্রানাইট এবং বেলেপাথর ব্যবহার করতেন, বিশেষ করে স্তম্ভ, লিন্টেল, বিম, মোটিফ এবং খোদাইয়ের জন্য। মন্দিরের ঊর্ধ্বাংশে যেমন চূড়া তৈরি করা হয়েছিল হালকা ওজনের ইট দিয়ে। ভাস্কর্যগুলি ডোলেরাইট এবং গ্রানাইট পাথরে তৈরি হলেও, অলংকরণমূলক বন্ধনীগুলি কালো ব্যাসল্ট পাথর দিয়ে খোদাই করা হয়েছে।

ওয়ারাঙ্গাল : একশিলা নগরম্‌
১২ শতক থেকে ১৪ শতকের কাকতীয় রাজত্বকালে ওয়ারাঙ্গল শহরটির প্রচুর সমৃদ্ধি হয়েছিল। সেই সময়ের স্থাপত্যের ধ্বংসাবশেষ দেখে কাকতীয়দের সময় ওয়ারাঙ্গলের গৌরবময় অতীত অনুধাবন করা যায়। সেই সময়কালেই ওয়ারাঙ্গল দুর্গ, হাজার স্তম্ভ মন্দির, রামাপ্পা মন্দির ইত্যাদি বিখ্যাত স্থাপত্যগুলি নির্মিত হয়েছিল।

কাকতীয় রাজত্বের শেষ শাসক ছিলেন দ্বিতীয় প্রতাপ রুদ্র, কাকতীয় শাসন ১৩২৩ সালে শেষ হয়। ওয়ারাঙ্গল দিল্লি সুলতানির অধীনে আসে। পরে, এটি মুসুনুরি নায়কেরা দখল করে নেয়— তারা ৫০ বছর ধরে রাজ্য শাসন করেছিল।

একটি চুক্তির মাধ্যমে ওয়ারাঙ্গল সাম্রাজ্য বাহমনি সুলতানির করায়ত্ত হয় এবং শেষ পর্যন্ত গোলকুণ্ডা-সুলতানির অধীনে আসে। ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারতের স্বাধীনতার পর, এটি অন্ধ্র প্রদেশ রাজ্যের মধ্যে আসে। তবে, রাজ্য বিভক্ত হওয়ার পর, ওয়ারাঙ্গল শহর এখন তেলেঙ্গানার অংশ।

রাজা গণপতি দেবের রাজত্বকাল ১১৯৯ থেকে ১২৬১/৬২, তিনিই অন্ধ্রপ্রদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে উজ্জ্বল যুগ নিয়ে এসেছিলেন। গণপতি একজন উদ্যমী শাসক ছিলেন এবং তাঁর তেষট্টি বছরের শাসনকালে তিনি তেলুগু ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর প্রায় সমগ্র ভূখণ্ডকে যুদ্ধ বা কূটনীতির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে এনেছিলেন।

গণপতি তাঁর কন্যা রুদ্রমাকে উত্তরাধিকারী হিসেবে মনোনীত করেছিলেন। রুদ্রমা তাঁর পিতার সঙ্গে কিছু সময়ের জন্য রাজ্য শাসন করেছিলেন। এই সময়কালে, দেশে বিভ্রান্তি ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়, কারণ কিছু অভিজাত ব্যক্তি, যারা তাঁর মনোনয়ন অনুমোদন করেননি, বিদ্রোহে লিপ্ত হয় এবং রুদ্রমার শাসনকে উৎখাতের চেষ্টা করে।

রাজপরিবারের আরও কিছু সদস্যও সিংহাসন দখলের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করে। গণপতির অন্য এক রানির পুত্র হরিহরদেব এবং মুরারিদেব তাঁদের অনুসারীদের একত্রিত করে ওয়ারাঙ্গল দখল করেন এবং রুদ্রমাকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। তবে, রুদ্রমার কিছু শক্তিশালী সমর্থক ছিল যারা তাঁকে সহযোগিতা করে বিদ্রোহীদের দমন করতে সমর্থ হয়েছিল। তাঁদের সাহায্যে রুদ্রামা সহজেই দুর্গে প্রবেশ করেন এবং তাঁর সৎ ভাইদের হত্যা করেন।

কাকতীয় যুগে শৈবধর্ম ছিল প্রধান ধর্ম। শৈবধর্ম ছাড়াও, বৌদ্ধ, জৈন এবং বৈষ্ণবধর্মের মতো অন্যান্য ধর্মও ছিল। বৌদ্ধধর্ম সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং বুদ্ধ এই সময়ের মধ্যে কেবল বিষ্ণুর অবতারদের একজন হয়ে ওঠেন এবং হিন্দুধর্মে বিলীন হয়ে যান। জৈনধর্ম তার স্বতন্ত্র চরিত্র বজায় রেখেছিল। এই যুগে ওয়ারাঙ্গলে জৈনদের বসবাসের প্রমাণও পাওয়া যায়।

আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর আগে, হায়দ্রাবাদের আশপাশের অঞ্চলের বাসিন্দারা তাঁকে অনুরোধ করেছিল যে পাপরা নামে এক ডাকাত খুব উৎপাত করছে, তাকে যেন দমন করার ব্যবস্থা করা হয়।

পাপরা একটি ছোট বাহিনী তৈরি করেছিল। সে নিজের জন্য ভোঙ্গির পরগণার শাহপুরে একটি দুর্গ তৈরি করেছিল এবং দূর-দূরান্তে আক্রমণ শুরু করেছিল।

১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর, যুবরাজ মুহাম্মদ কামবক্স কিছু সময়ের জন্য বিজাপুর এবং হায়দ্রাবাদের গভর্নর ছিলেন, পাপরাকে দমন করার জন্য তিনি কিছুই করেননি।
পাপরা এতটাই উৎসাহিত হয়েছিল যে, সে তার দস্যুবাহিনী নিয়ে ওয়ারাঙ্গল আক্রমণ করে বসল, যেখান থেকে তার দুর্গ প্রায় ত্রিশ মাইল দূরে ছিল।

১৭০৮ খ্রিস্টাব্দে, পাপরা দু-তিন হাজার পদাতিক এবং চার-পাঁচশো ঘোড়া নিয়ে ওয়ারাঙ্গল দুর্গে পৌঁছলো এবং সব রাস্তা বন্ধ করে দিল, যাতে শহরের অভ্যন্তরে তার আগমনের খবর না পৌঁছায়। ভোর হওয়ার আগেই পদাতিক বাহিনী দুর্গের দেওয়াল বেয়ে উঠতে শুরু করলো এবং তার অশ্বারোহী বাহিনী শহর লুণ্ঠন শুরু করলো। পাপরা দুর্গ দখল করে ফেলে। লক্ষ লক্ষ টাকা মূল্যের অর্থ ও সম্পত্তি লুণ্ঠনকারীদের হাতে চলে যায় এবং অনেক প্রহরীকে বন্দী করে রাখে।

ওয়ারাঙ্গল দুর্গে লুণ্ঠন-অভিযানের পর, পাপরা তার লুঠপাটের কাজ অব্যাহত রাখে। ওয়ারাঙ্গলের বাসিন্দারা খুব আতঙ্কিত হয়ে দিল্লির মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহের কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন করে বার্তা পাঠায়।

সম্রাট বাহাদুর শাহ এবার পাপরাকে দমন করার জন্য ইউসুফ খান রুজবিহান নামে এক প্রতিনিধিকে প্রেরণ করেন। এবার পাপরা ভয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পালিয়ে বেড়াতে বাধ্য হলো যতক্ষণ না তাকে হাসান-আবাদে খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে পাপরাকে ঘিরে ফেলা হয়, আহত করা হয় এবং তাকে ইউসুফ খান রুজবিহানের কাছে বন্দি হিসেবে আনা হয়। ইউসুফ দস্যু পাপরা-কে কেটে টুকরো-টুকরো করে ফেলেন।

Advertisement