• facebook
  • twitter
Wednesday, 20 August, 2025

ইংল্যান্ড সফরে শুভমন গিলদের অগ্নিপরীক্ষা

১৯৭১-এর অবিস্বাশ্য খ্যাতি তৈরি করা সেই দল ঠিক তিন বছর পর ১৯৭৪ সালে সেই ইংল্যান্ড সফরে অপ্রত্যাশিত ভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

আরিফুল ইসলাম

সুনীল গাভাসকার তাঁর আত্মজীবনীতে একটা জায়গায় ইংল্যান্ড সফর ও টেস্ট ম্যাচ নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। যতদিন ভারতীয় ক্রিকেট বেঁচে থাকবে, আগামী প্রজন্মের প্রত্যেক ক্রিকেটার তো বটেই ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের কাছেও নিঃসন্দেহে তা একটা দলিল হিসাবে কাজ করবে।

সেই ইংল্যান্ডেই আর কয়েকটা দিন পরেই পাঁচ টেস্ট সিরিজ খেলার জন্য ভারতীয় ক্রিকেট দল যথারীতি পৌঁছে গেছে। একেবারে তরুণ সমৃদ্ধ দল নিয়েই ভারত এবার ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে লড়বে। নতুন অধিনায়ক শুভমন গিল, নতুন সহ অধিনায়ক ঋষভ পন্থের পাশে চারজন একেবারে নতুন মুখ ভারতীয় দলে। বহুদিন পর বাদ বা অবসরের জন্য দলে নেই দুজন তারকা রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি যাঁরা এই ভারতীয় দলটার স্তম্ভ হয়ে দীর্ঘ সময় প্রায় অভিভাবকের মতো মাঠে ছিলেন। সুতরাং দীর্ঘদিনের এই তারকাদের সরিয়ে একটা নতুন কাঠামোর তর্ক বিতর্ক ভরা এই দল কতটা সফল হবে তার উত্তর পাওয়া যাবে সময় যত এগোবে।

গাভাসকার বলেছেন, একজন তরুণ ক্রিকেটারের কাছে বিদেশের মাটিতে আত্মপ্রকাশ বরাবরই বেশ কঠিন কাজ। বিশেষ করে তা যদি হয় ইংল্যান্ডের মাটিতে। ১৯৭১-এই সুনীল মনোহর গাভাসকারের টেস্ট ক্রিকেটে আত্মপ্রকাশ ঘটে এই ইংল্যান্ডের মাটিতেই অজিত ওয়দেকারের অধিনায়কত্বে। ভারত সেই প্রথমবার ইংল্যান্ডের মাটিতে বা বিদেশে প্রথম টেস্ট সিরিজ জিতেছিল ১-০ ব্যবধানে। এরপর ওয়েস্টইন্ডিজের মাটিতেও স্যার গারফিল্ড সোবার্সের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবিয়ানদের ওই একইভাবে তিন টেস্ট সিরিজে ১-০ তে হারায় ভারত। ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে এক অনন্য নজির স্থাপন করে। হৈ চৈ পড়ে যায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আঙিনায়।

ব্রিটিশদের হাত ধরেই এদেশে অন্যান্য অনেক খেলার মতো ক্রিকেট ও ধীরে ধীরে তার প্রচার , প্রসার ও জনপ্রিয়তা। মূলত তখনকার দিনে রাজা – নবাবদের হাত ধরেই ভারতীয় ক্রিকেটের গোড়াপত্তন l ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত ছিল তাদেরই পদচারণা। ১৯৭১ এ অজিত ওয়াডেকারের নেতৃত্বে যে দলটা প্রথমবার ভারতীয় ক্রিকেটেকে অনন্য গৌরবের মঞ্চে তুলেছিল তাতে গাভাসকার ছাড়া গুণ্ডাপ্পা বিশ্বনাথ, একনাথ সোলকার,আবিদ আলি, দিলীপ সারদেশাই, বিষেণ সিং বেদি, এরাপল্লি প্রসন্ন , চন্দ্রশেখররা ছিলেন সবাই মধ্যবিত্ত্ব পরিবার থেকে উঠে আসা। ভারতীয় ক্রিকেটে এক রেনেসাঁসের মতো। আর সেই দলেই ধ্রুবতারা হয়ে জন্ম নেওয়া সুনীল গাভাসকার। ব্যাট -প্যাড তুলে দিয়েছেন প্রায় সাড়ে তিন দশক হলো। কিন্তু এখনও গাভাসকার ভারতীয় ক্রিকেটের ময়দানে বিভিন্ন মঞ্চে নানান ভূমিকায়। ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ে তাঁর প্রত্যেকটি কথা, মন্তব্য,পরামর্শ বর্তমানে বেদবাক্য।

১৯৭১-এর অবিস্বাশ্য খ্যাতি তৈরি করা সেই দল ঠিক তিন বছর পর ১৯৭৪ সালে সেই ইংল্যান্ড সফরে অপ্রত্যাশিত ভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে। সিরিজে একটা ইনিংসে বিশ্রীভাবে ৪২ রানে অল আউট হয়ে যার লজ্জা ও নিন্দা বহুদিন ভারতীয় ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের বয়ে বেড়াতে হয়েছিল। সার্কিট জুড়ে সমালোচনায় মুখর হয়। ১৯৭১ এর পর প্রায় একই দল ও অভিজ্ঞতা নিয়ে ১৯৭৪ সালে কেন বিশ্রীভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছিল গাভাসকার তার আত্মজীবনীতে দারুন ভাবে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। গ্রীষ্মকালে সফর মানে আমাদের দেশের আবহাওয়া দিয়ে কোনোরকম তুলনা করবেন না। তখন খেলার মাঠে পেশাদারিত্ব বা সাংগঠনিক দক্ষতা দেশের ক্রীড়া নিয়ামক সংস্থাগুলোর ছিল না। বলা ভালো তখনকার খেলার কর্মকর্তাদের অপেশাদারী ও ঔপনিবেশিক মানসিকতা ছিল।

একাত্তরে ভারতের যে দলটা ইংল্যান্ড সফর করে সেটা ছিল এখন জুন মাসের মতো। আর ১৯৭৪ সালের সফর ছিল এপ্রিল মাসে, সেবার ইংল্যান্ডে শীত যাবো যাবো করেও পালিয়ে যায়নি। তাপমাত্রা ব্যাপক নেমে আসে, আবহাওয়া ছিল রীতিমতো স্যাতস্যাতে, শন শন করে ঠান্ডা হিমেল বাতাস এমন ভাবে বইছিলো যে ক্রিজে ব্যাট করা দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পঞ্চাশ বছর পর সুনীল মনোহর গাভাসকারের এই আত্মজীবনীর কথা এই জন্যই মনে পড়ল নিজেদের মাটিতে ইংল্যান্ড যতই সাদামাটা দল হোক নিঃসন্দেহে তারা শক্ত প্রতিপক্ষ। ভারতীয় ক্রিকেটের সংসারে চিরদিন একটা জিনিস চলে আসছে রাজনীতি, ক্ষমতা, দম্ভ ও অহমিকা। এই মুহূর্তে ভারতীয় ক্রিকেটের যা অবস্থা সীমিত ওভার ক্রিকেটে অনায়াসে তিনটে দল তো বটেই, চেষ্টা করলে চারটে দলও তৈরি করে দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু দুই একজন ছাড়া টেস্ট ক্রিকেট টেম্পারমেন্ট নেই। বলতে দ্বিধা নেই তরুণ প্রজন্মের ধৈর্য, টেকনিক, টেম্পারমেন্ট সেই গুণগত দক্ষতায় পৌঁছাতে পারেননি। এখন বলতেই হবে, এবার ইংল্যান্ড সফরে শুভমন গিলদের ভারতের অগ্নিপরীক্ষা অপেক্ষা করছে।