আইপিএল ক্রিকেটে যদি সফল অধিনায়ক হিসেবে কাউকে চিহ্নিত করতে হয়, তাহলে সবার আগে যে নামটা বিবেচিত হবে, তিনি হলেন শ্রেয়স আইয়ার। হয়তো এবারে চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ে বাজিমাত করতে পারেননি শ্রেয়স। ফাইনালে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর কাছে হারতে হয়েছে শ্রেয়সের পাঞ্জাব কিংস দলকে। তবে এই দলে আনক্যাপড প্লেয়ারদের সংখ্যা ছিল বেশি। তাঁদেরকে নিয়ে কীভাবে লড়াই করা যায় প্রতিপক্ষ দলের বিরুদ্ধে, তা দেখিয়ে দিয়েছেন শ্রেয়স আইয়ার। শ্রেয়সের দক্ষতা এবং যোগ্যতা নিয়ে কোনও প্রশ্নই উঠতে পারে না। এমনকি দলকে জেতানোর পিছনে একজন অধিনায়ক হিসেবে যে দায়িত্ব থাকা দরকার, তা প্রতিটি পদক্ষেপে বুঝিয়ে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, দলের বিপদের সময় কীভাবে চিতিয়ে দাঁড়াতে হয়, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন সতীর্থ খেলোয়াড়দের কাছে। তরুণ প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের অনুপ্রাণিত করে ভালো জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়, তারও উদাহরণ শ্রেয়স আইয়ার। শ্রেয়স নিজেকে কখনওই অধিনায়ক বলে আলাদা কোনও প্রভাব বিস্তার করতেন না দলের মধ্যে। একজন দলের নির্ভীক ক্রিকেটার হিসেবে তিনি সবসময় নিজেকে প্রকাশ করার চেষ্টা করেছেন। আইপিএল ক্রিকেটে একমাত্র অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ার তিন-তিনটি দলকে ফাইনালে খেলার ছাড়পত্র তুলে দিয়েছেন। প্রথম দিল্লি ক্যাপিটালসকে ফাইনালে তুলেছিলেন কিন্তু বাজিমাত করতে পারেননি। হেরে গিয়েছিলেন হায়দরাবাদের কাছ। দ্বিতীয়বার ফাইনালে দলকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। সেই দলটার নাম কলকাতা নাইটরাইডার্স। গতবছর কলকাতা নাইটরাইডার্স দলকে চ্যাম্পিয়ন করার পরে মেগা নিলামে শ্রেয়সকে কলকাতা দলে রাখা হয়নি। তিনি কিছুটা অভিমানী হয়েও নিজের সম্মান থেকে সরে থাকেননি। পাঞ্জাব কিংসের মতো দলকে এবারে নেতৃত্ব দিয়ে আবার ফাইনালে পৌঁছে গিয়েছিলেন।
শ্রেয়স আইয়ারের এই সাফল্যের পিছনে কোন রসায়নটা খেলা করছে? তিনি মনে করেন, দলকে প্রথমে ভালোবাসতে হবে। তারপরে সতীর্থ খেলোয়াড়দের নিয়ে একটা পরিবার গঠন করতে হবে। নিজেদের মধ্যে সমন্বয় না থাকলে একজন অধিনায়ক কখনওই সাফল্যের দিকে পাড়ি দিতে পারেন না। সেই কারণেই দলের প্রত্যেকটা খেলোয়াড়ের প্রতি আনুগত্য থাকতে হবে। তারপরেই নেতৃত্ব দিয়ে দলের সেরাটাকে বের করে নিয়ে আসতে হয়। এই বের করার পিছনে দলের ক্রিকেটারদের বড় একটা ভূমিকা থাকে। সেই ভূমিকাটাকে কীভাবে উপস্থাপনা করতে হবে, তা ড্রেসিংরুমেই আলোচনার মধ্য দিয়ে বের করে আনতে হবে। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে শ্রেয়স যে রান তুলেছেন, এর পিছনে কারণ বলতে গিয়ে স্পষ্ট জানিয়েছেন, নিজেকে সংযত হতে হবে। প্রতিপক্ষ দলের বোলারদের প্রত্যক্ষ করতে হবে বল করার সময়। তারা কীভাবে আক্রমণটা গড়ে তুলছে, সেটা যদি বুঝে নেওয়া যায়, তাহলে স্বচ্ছন্দে ব্যাট করতে কোনও অসুবিধা হয় না। আবারও বলি, অধিনায়কত্ব করাটা আমার একটা প্যাশন। সেই কারণে যে কোনও সমস্যার সমাধানে দায়িত্ব নিতে হয় অধিনায়ককে। আর এই অধিনায়কত্বের ব্যাপারটা আমার কাছে নতুন নয়। ২২ বছর বয়স থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছি। তাই অভিজ্ঞতা আমাকে আগামী দিনের জন্য পথ দেখাবে। নেতৃত্ব দিতে পারলে আমি নিজেও ব্যাপারটাকে উপভোগ করি। তাই আন্তরিকভাবে চেষ্টা করি দলের সাফল্য কীভাবে তুলে আনতে হবে।
আইপিএল ক্রিকেট শেষ হওয়ার পরে শ্রেয়স এখন মুম্বই টি-টোয়েন্টি লিগ ক্রিকেটে খেলছেন। শ্রেয়স কথা প্রসঙ্গে জানান, নিজের ফর্ম ধরে রাখতে চাই। যতটা সম্ভব ভালো খেলার চেষ্টা করি। খেলার প্রতি একটা মনসংযোগ বজায় রাখতে চেষ্টা করে থাকি। যে কোনও পরিস্থিতির সঙ্গে মুখোমুখি হয়ে তা কীভাবে সমাধান করতে হয়, তার চিন্তা করি। ক্রিকেটপ্রেমীদের চিৎকারে শ্রেয়স আইয়ার আরও বেশি উদ্বুদ্ধ হন। দর্শকরা চান, ভালো খেলা দেখার জন্য। সেই কারণেই ক্রিকেট প্রেমীরা সারাক্ষণ আমার মনের মধ্যে জায়গা করে নেন। তাঁদের আন্তরিকতা আমার কাছে বড় শক্তি। তাই দর্শকরা চিৎকার করলে আমার ভালো লাগে এবং মন খুলে ব্যাট করতে পারি।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পরে, গত বারের চ্যাম্পিয়ন কেকেআর দল শ্রেয়সকে না রাখলেও পাঞ্জাব কিংস দল ২৬ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা দিয়ে তুলে নেয়। পাঞ্জাব দলকে হতাশ করেননি শ্রেয়স। দলকে নেতৃত্ব দিয়ে শ্রেয়স ১৭টি ম্যাচে ৬০৪ রান করেছেন। শ্রেয়সের এই পারফরম্যান্স এই মুহূর্তে বিসিসিআইয়ের নির্বাচকরা বেশ চিন্তায় পড়ে গেছেন জাতীয় দলের বাইরে রাখতে। এটা ঠিক, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পাঁচ টেস্ট সিরিজে ভারতীয় দলে শ্রেয়সের জায়গা হয়নি। এই বিষয়ে শ্রেয়স কোনওকিছুই ভাবতে রাজি নন। খেলাটাই তাঁর কাছে বড়। শ্রেয়সের আপাতত টার্গেট মুম্বই টি-টোয়েন্টি লিগে সোবো মুম্বই ফ্যালকন্সকে চ্যাম্পিয়ন করা।