• facebook
  • twitter
Wednesday, 7 May, 2025

প্লে-অফ দৌড়ে কোনও দলই স্পষ্ট হয়নি

আইপিএল ক্রিকেটের আকর্ষণ ক্রমশ ফিকে হয়ে যাচ্ছে

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

চলতি আইপিএল ক্রিকেটে এখনও পর্যন্ত পয়েন্টের খতিয়ানে প্রথম চারে ওঠা কোনও দলই স্পষ্ট করতে পারেনি। ইতিমধ্যেই দ্বিতীয় লেগের খেলা শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু পয়েন্টের টেবিলের দিকে তাকালে, যে কোনও দলই প্রথম চারে খেলার চেষ্টায় থাকবে। ১০ দলের লড়াইয়ে দেখা যাচ্ছে গুজরাত টাইটানস সবচেয়ে ভালো জায়গায় রয়েছে। ইতিমধ্যে তারা আটটি ম্যাচ খেলে ফেলেছে। তাদের সংগ্রহে রয়েছে ১২ পয়েন্ট। এই ১২ পয়েন্ট নিয়ে আরও দু’টি দল একই জায়গায় অবস্থান করছে। কিন্তু রান রেটের দিক দিয়ে গুজরাত এই মুহূর্তে শীর্ষে রয়েছে। দিল্লি ক্যাপিটালসেরও আটটি ম্যাচ খেলা হয়ে গেছে। তাদের সংগ্রহেও ১২ পয়েন্ট। আর রান রেটে তাদের জায়গা হয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর নাম উঠলেই অবশ্যই বিরাট কোহলির নামটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। বিরাটের ব্যাট এবার দুরন্ত ভূমিকা নিচ্ছে। যার ফলে তারা অবশ্য একটা ম্যাচ বেশি খেলেছে। তারা ন’টি ম্যাচ খেলে ১২ পয়েন্ট পেয়েছে। গুজরাত ও দিল্লি দুটো করে ম্যাচ হেরেছে। সেই জায়গায় বেঙ্গালুরু একটি বেশি ম্যাচ খেলেও তিন ম্যাচে হার স্বীকার করেছে। আইপিএলে সবচেয়ে বেশি খেতাব জিতে নেওয়ার নজির আছে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের। এই মুহূর্তে তারা লিগ টেবলে চতুর্থ স্থানে রয়েছে। তারা ন’টি ম্যাচ খেলে ফেলেছে। পাঁচটিতে জয় পেয়েছে আর চারটি ম্যাচ হেরেছে। তাদের পয়েন্ট ১০। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স দলে রোহিত শর্মা শেষ ম্যাচে ভালো ব্যাট করলেও তাঁর ধারাবাহিকতা ধরা পড়েনি।

গুজরাতের সামনে ছ’টি ম্যাচ এখনও খেলতে বাকি রয়েছে। তাদের লড়াই করতে হবে রাজস্থান রয়্যালস, সানরাইজার্স হায়দরাবাদ, মুম্বই ইন্ডিয়ান্স, লখনউ সুপার জায়ান্টস, চেন্নাই সুপার কিংস ও দিল্লি ক্যাপিটালসের সঙ্গে। প্লে-অফে জায়গা করে নিতে গেলে গুজরাতকে কমপক্ষে তিনটি ম্যাচ জিততেই হবে। সেই কারণেই গুজরাতকে বেশ সতর্ক হয়ে খেলতে হবে পরবর্তী ম্যাচগুলিতে। বিরাট কোহলির কাছে বড় চ্যালেঞ্জ রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সকে চ্যাম্পিয়ন করা। তাঁদের এখনও পাঁচটি ম্যাচ বাকি। তাঁদেরও তিনটি ম্যাচ না জিততে পারলে প্লে-অফ খেলা কঠিন হয়ে যাবে। বেঙ্গালুরুকে লড়াই করতে হবে দিল্লি, চেন্নাই, লখনউ, কলকাতা ও হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে। দিল্লি ক্যাপিটালস প্লে-অফ খেলার জন্য তৈরি রয়েছে। তারা আট ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও পরবর্তী খেলাগুলি বেশ কঠিন। ছ’টি ম্যাচের মধ্যে কমপক্ষে তিনটি ম্যাচ জেতা ছাড়া তাদের কাছে চিন্তা নেই প্লে-অফ খেলার লক্ষ্যে। তাদের খেলতে হবে বেঙ্গালুরু, কলকাতা, পাঞ্জাব, গুজরাত, হায়দরাবাদ ও মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে। হার্দিক পাণ্ডিয়ার মুম্বই ইন্ডিয়ান্স দলের ন’টা ম্যাচ খেলা হয়ে গেছে। তাদের সংগ্রহে ১০ পয়েন্ট। তাঁরাও বেশ কঠিন জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন। প্লে-অফ খেলতে গেলে বাকি পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে চারটিতে জিততেই হবে। মুম্বইয়ের সামনে রয়েছে লখনউ, রাজস্থান, গুজরাত, পাঞ্জাব ও দিল্লি।

অবশ্য শনিবার কলকাতা ও পাঞ্জাবের খেলার ফলাফলের উপর নির্ভর করবে পাঞ্জাবের স্থান কোথায় দাঁড়াবে টিকে থাকতে হলে। ইতিমধ্যে তাদের আটটি ম্যাচ খেলা হয়ে গিয়েছে (শনিবার বাদে)। তাদের সংগ্রহে ১০ পয়েন্ট। শ্রেয়স আইয়ারের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ পাঞ্জাবকে ভালো জায়গায় নিয়ে যাওয়া। প্রথম লেগে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে হারিয়ে দিয়েছে। তবে আগামী ম্যাচগুলি পাঞ্জাবের কাছে কঠিন পরীক্ষা। লখনউ সুপার জায়ান্টস ন’টি ম্যাচে ১০ পয়েন্ট পেয়েছে। তারা পাঁচটি ম্যাচ জিতলেও চারটি ম্যাচ হেরে গিয়েছে। এবারে লখনউ দলের অধিনায়ক ঋষভ পন্থ। ঋষভ কিন্তু নজরকাড়া ব্যাট করতে পারছেন না। সেই কারণেই লখনউ আগামী ম্যাচগুলিতে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। লখনউ দলকে আরও পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে চারটিতে জিততেই হবে প্লে-অফে খেলার জন্য।

অন্যদিকে কলকাতা নাইটরাইডার্স এবারে সেভাবে নজরই কাড়তে পারছে না। যে দলে অজিঙ্কা রাহানের মতো অধিনায়ক রয়েছেন, আবার বোলার বরুণ চক্রবর্তী সহ সুনীল নারাইন, আন্দ্রে রাসেল, রিঙ্কু সিং এবং ভেঙ্কটেশ আইয়ারের মতো ক্রিকেটাররা রয়েছেন, তাঁরা কিন্তু হতাশই করছেন। কলকাতা শনিবারের ম্যাচের আগে আটটি ম্যাচ খেলে ফেলেছে। তারা মাত্র তিনটি ম্যাচে জয় পেয়েছে। তাদের সংগ্রহে মাত্র ৬ পয়েন্ট। পাঞ্জাব দলের বিরুদ্ধে কলকাতা যদি জিততে পারে, তাহলে একধাপ এগিয়ে যেতে পারবে। গত বারের চ্যাম্পিয়ন কলকাতার কাছে প্লে অফ খেলা বেশ কঠিন হয়ে গেছে। সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ন’টি ম্যাচ খেলে ফেলেছে। তার মধ্যে মাত্র তিনটি জিতেছে হায়দরাবাদ। ম্যাচ বাকি রয়েছে গুজরাত, দিল্লি, কলকাতা, বেঙ্গালুরু এবং লখনউয়ের বিরুদ্ধে। সেই পাঁচটি ম্যাচের সব ক’টি জিতলেও হায়দরাবাদ ১৬ পয়েন্টে পৌঁছতে পারবে না। ক্ষীণ আশা নিয়েই লড়তে হবে হায়দরাবাদকে। তথৈবচ অবস্থা রাজস্থান রয়্যালসের।

তারা ন’টি ম্যাচের মধ্যে দু’টি ম্যাচ জিতেছে। সেই কারণে প্লে-অফ খেলা তাদের পক্ষে শুধু কঠিন নয়, এক কথায় বলা যায় রাস্তা বন্ধ। রাজস্থানের অধিনায়ক রিয়ান পরাগের সামনে কোনও আশা কথা বলছে না। সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় এবারের আইপিএলে দাঁড়িয়ে রয়েছে ধোনির চেন্নাই সুপার কিংস। তারা ন’টি ম্যাচ খেলে লিগ টেবলে একেবারে তলানিতে রয়েছে। দুটো ম্যাচ জিতেছে আর সাতটি ম্যাচে হেরে গিয়ে চার পয়েন্ট সংগ্রহ করতে পেরেছে। তাই এবারের আইপিএল ক্রিকেটে যে জমাটি লড়াই দেখতে পাওয়া যায়, সেই লড়াই দেখতে পাচ্ছেন না সমর্থকরা। তাহলে কি আইপিএলে যে জনপ্রিয়তা, তা হারিয়ে যাচ্ছে? হয়তো অনেকেই বলবেন, মাঠে তো দর্শক আসছেন। কিন্তু প্রশ্ন হল এই দর্শকরা ক্রিকেটকে ভালোবেসে আসছেন, নাকি মাঠ ভরাতে কর্তৃপক্ষরা তাঁদের হাতে টিকিট পৌঁছে দিচ্ছেন। আইপিএলের সেই আকর্ষণ বলতে যা বোঝায়, তা উবে গিয়েছে।