পহেলগাম হামলার ১৫ দিনের মাথায় বদলা নেওয়ার পর ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের সচিব জানিয়ে দিলেন, পাকিস্তানই যে সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয়স্থল তা প্রমাণ হয়ে গেল। পাশাপাশি, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে ভারত যে জিরো টলারেন্স নীতি মেনে চলে, তা ফের প্রমাণিত হল। প্রত্যাঘাতের কয়েক ঘন্টা পর একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন দেশের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি। তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিলেন, পহেলগাম হামলার ঘটনায় যুক্ত ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ সম্পর্কে তথ্য ছিল তাঁদের কাছে। বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছিল ইউএন কাউন্সিলের বৈঠকে। এই ধরনের ছোট ছোট জঙ্গি সংগঠন দিয়েই সীমান্তে ও এদেশে বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ করায় লস্কর বা জইশের মতো গোষ্ঠীগুলি।
বিদেশ সচিব বলেন, ‘মুম্বই হামলার পর সবচেয়ে বড় ঘটনা পহেলগাম। হামলার কথা লস্কর-ই-তইবার ছায়া সংগঠন রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট স্বীকার করার পরও পাকিস্তান দায় স্বীকার করেনি। উল্টে পাল্টা অভিযোগ করেছে। কিন্তু জঙ্গি দমনে কোনও পদক্ষেপ করেনি। এই পরিস্থিতিতে পদক্ষেপ করেছে ভারত।’ বিদেশ সচিব আরও বলেন, এখন এটা স্পষ্ট যে পাকিস্তান জঙ্গিদের আশ্রয়স্থল। বিশ্বজুড়ে তারা এই ধরনের জঙ্গিদের আশ্রয় দিয়ে আসছে বহুদিন ধরে। এনিয়ে আর কোনও সন্দেহ নেই।
জানা যায়, এই ছোট জঙ্গি সংগঠন সম্পর্কে অনেক আগেই খবর ছিল ভারতের ইন্টেলিজেন্সের কাছে। ইনটেলিজেন্সের তরফে ঘটনার সম্পূর্ণ ছবি স্পষ্ট করা হয়েছিল। হামলার পর সেকথা জানান তিনি। রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট নিয়ে বিভিন্ন তথ্যও দেওয়া হয়। এনিয়ে রিপোর্টও দেওয়া হয়েছে দিল্লির তরফে। ২০২৩-এর ডিসেম্বরে টিআরএফ নিয়ে সচেতন করেছিল ভারত। জানানো হয়েছিল, এটা ছোট জঙ্গি গোষ্ঠী। এদের দিয়ে জঙ্গি কার্যকলাপ চালাচ্ছে লস্কর ও জইশের মতো বড় সংগঠনগুলি। ইউএস সিকিওরিটি কাউন্সিল এটা নিয়ে আলোচনাও করেছিল। তারপরই এমন ঘটনা। এবার তাদের যোগ্য জবাব দেওয়ার পালা।
প্রসঙ্গত পহেলগামে হামলার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছিলেন, এই কাপুরোষিত হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত, তাদের বেছে বেছে বদলা নেওয়া হবে। এমনভাবে এই বদলা নেওয়া হবে, যা সারা বিশ্ব মনে রাখবে। এরপরই শুরু হয় ভারত সরকারের সামরিক ও গোয়েন্দা প্রস্তুতি। অবশেষে পহেলগাম হামলার ১৫ দিন পর উন্নত প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা বিভাগের দ্বারা কড়া নজরদারি আর চুলচেরা লক্ষ্যভেদ করে বেছে বেছে জঙ্গি ঘাঁটিগুলি গুঁড়িয়ে দিল ভারতীয় সেনা বাহিনী। যেসব জায়গায় হামলা চালানো হয়েছে, সেগুলির কোথাও দেওয়া হত প্রশিক্ষণ, কোনওটা লঞ্চপ্যাড, কোনওটা আবার অনুপ্রবেশের পথ। মঙ্গলবার মাঝরাতে পর পর গুঁড়িয়ে দেওয়া হল পাকিস্তানের ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি। ঘরে ঢুকে পহেলগাম হামলার যোগ্য জবাব দিলেন দেশের বীর সেনারা।
কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপের সাফল্যের খতিয়ান ভালো চোখে নিতে পারেনি পাকিস্তান ও কাশ্মীরের জঙ্গি ও মৌলবাদী সংগঠনগুলি। দিন দিন উপত্যকায় পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছিল, সমৃদ্ধ হচ্ছিল পর্যটন শিল্প। কাশ্মীরের গরিব খেটে খাওয়া নিরীহ মানুষের মুখে হাসি ফুটেছিল। কারণ ভূস্বর্গের পর্যটনে সমৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের কর্ম সংস্থান হতে শুরু করে। আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য পেয়েছিলেন তাঁরাও। কিন্তু কাশ্মীরের এই সাফল্যে হিংসার আগুনে জ্বলছিল জঙ্গি সংগঠনগুলি। এজন্য হামলার পরিকল্পনা করে তারা। ২২ এপ্রিল পহেলগামে হামলা চালিয়ে ২৫ জন পর্যটক সহ ২৬ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে।
কার্যত কাশ্মীরবাসীদের ফের অন্ধকারে ঠেলে দিতেই এই ধরনের বর্বরোচিত হামলা বলে উল্লেখ করেন বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি। তিনি মনে করেন, পর্যটনকে মুখ থুবড়ে ফেলে দেওয়ার কৌশল হিসেবেই পহেলগামে এমন আক্রমণ করে জঙ্গিরা। কিন্তু এমন হামলা দেশ যে মুখ বুজে সহ্য করবে না, তা ২২ এপ্রিলের পর থেকে বার বার বলেছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী। তার প্রত্যাঘাত হিসেবেই দুই সপ্তাহ ধরে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর প্রস্তুতি শুরু করে ভারতীয় সেনা বাহিনী। মঙ্গলবার গভীর রাতে একে একে বিলাল, কোটলি, গুলপুর, বার্নালা ক্যাম্প, আব্বাস ক্যাম্প, সার্জাল ক্যাম্প- শিয়ালকোট, মেহমুনা ক্যাম্প- শিয়ালকোট, মার্কাজ তইবা মুরিদকে ও ভাওয়ালপুর- জইশ-ই মহম্মদের মূল কার্যালয় দুরমুশ করে দেওয়া হয়।