প্রত্যাশা মতোই আইএফএ শিল্ডের ফাইনালে মোহনবাগান সুপারজায়ান্টস খেলবে, তার সার্থক রূপ পেল। বুধবার কিশোরভারতী স্টেডিয়ামে মোহনবাগান ২-০ গোলে ইউনাইটেড স্পোর্টসকে হারিয়ে ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করল। আগামী শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গণে আবার ডার্বি ম্যাচে একে অপরের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেবার জন্য তৈরি ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান। দুই প্রধানের সমর্থকরা আইএফএ শিল্ডের ফাইনালে ফুটবলারদের উৎসাহিত করার জন্য ছুটে আসবেন গ্যালারিতে। ইস্টবেঙ্গল চাইবে চলতি মরশুমে ডার্বি ম্যাচে জয়ের হ্যাটট্রিক করতে। ইতিমধ্যেই তারা কলকাতা ফুটবল লিগ ও ডুরান্ড কাপে মোহনবাগানকে পরাস্ত করে আত্মবিশ্বাসে ভরপুর রয়েছে।
অপরপক্ষে মোহনবাগান চাইবে শিল্ড ফাইনালের ডার্বি ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে মধুর প্রতিশোধ নিতে। সমর্থকদের দাবিমতো মোহনবাগান আইএফএ শিল্ডে খেলার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হয়। সেই কারণে সবুজ-মেরুন ব্রিগেডের কাছে এই ডার্বি ম্যাচ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেনতেন প্রকারে ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে দেওয়ার জন্য অঙ্ক কষবে মোহনবাগান। তারই লক্ষ্যে এদিন ইউনাইটেড স্পোর্টসের সঙ্গে ড্র করলেই মোহনবাগান ফাইনালে পৌঁছে যাবে, এই ভাবনাকে কখনওই ফুটবলাররা জায়গা দেননি। তাই দাপটের সঙ্গে খেলার চেষ্টায় মোহনবাগানের ফুটবলাররা প্রতিপক্ষ ইউনাইটেডকে চাপে রাখতে চেয়েছিলেন। ইউনাইটেড স্পোর্টসের ফুটবলাররা কোনওভাবেই হালকা চালে খেলার চেষ্টা করেননি। মাঝেমধ্যেই তাঁরা ঝলসে উঠেছিলেন। সুযোগ পেলেও গোলের পথ খুঁজে পায়নি ইউনাইটেড স্পোর্টস।
মোহনবাগানের প্রথম একাদশে জেমি ম্যাকলারেনকে এদিন রাখেননি মোহন কোচ হোসে মোলিনা। আক্রমণে জেসন কামিংসের সঙ্গে দিমিত্রি পেত্রাতোসকে রেখে অঙ্ক কষেছিলেন। দীর্ঘদিন পেত্রাতোসের সঙ্গে কোচের একটা ব্যবধান তৈরি হয়েছিল। হয়তো সেই ব্যবধানকে ভুলে গিয়ে পেত্রাতোসকে প্রথম থেকেই খেলান কোচ। মোহনবাগানের শুরুটা সেইভাবে স্বচ্ছন্দ ছিল না। সেই অবসরে ইউনাইটেডের ফুটবলাররা আক্রমণ শানিয়ে মোহনবাগানকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছিলেন। এমনকি দলের নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার ক্রিস্টোফার চিবুজার শট মোহনবাগানের গোলরক্ষক কোনওক্রমে বাঁচিয়ে দেন। অবশ্য তার পরে মোহনবাগান একটি সুযোগ পেয়েছিল গোল করার।
ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার রবসন নিখুঁত পাস দিয়েছিলেন অভিষেক সিংকে। কিন্তু তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে অভিষেক বলটি গোলের জালে রাখতে পারেননি। তবে ৪ মিনিট বাদে আত্মঘাতী গোল থেকে বেঁচে যায় মোহনবাগান। মেহতাব সিং ভুল করে নিজেদের গোলে বলটি প্রায় ঠেলে দিয়েছিলেন। আবার আক্রমণে উঠে এসে সবুজ-মেরুনের আশিস রাই গোল করতে ব্যর্থ হন। আবার ইউনাইটেডের সুজল মুন্ডা গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেন। খেলার প্রথমার্ধের একেবারে শেষ মুহূর্তে পেত্রাতোস গোল করে মোহনবাগানকে এগিয়ে দেন। বলটি পেয়েছিলেন জেসন কামিংসের কাছ থেকে। গোল করার পর পেত্রাতোস কোনও উচ্ছ্বাস দেখাননি। আসলে কয়েকদিন আগে দর্শকদের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে গিয়েছিলেন। পাশাপাশি, কোচের সঙ্গেও একটা মনোমালিন্য তৈরি হয়েছিল। হয়তো সেই কারণেই নীরবতা পালন করেই অস্ট্রেলিয়ার এই স্ট্রাইকার বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, গোল করাটা তাঁর কাছে একটা অভ্যাস।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই টম অলড্রেডের জায়গায় মাঠে নামান আলবার্তো রদ্রিগেসকে কোচ মোলিনা। ৪৯ মিনিটের মাথায় বক্সের ডানদিক থেকে রবসনের ফ্রিকিক উড়ে আসে কামিংসের কাছে। কামিংস সঙ্গে সঙ্গে শট নেন। ওই শটটি ইউনাইটেডের গোলরক্ষকের গায়ে লেগে চলে আসে অঙ্কন ভট্টাচার্যের কাছে। অঙ্কনের পায়ে লেগে বলটি গোলে প্রবেশ করে। হয়তো অনেকেই বলবেন, মোহনবাগনের দ্বিতীয় গোলটি আত্মঘাতী। ফুটবলের পরিভাষায় এই গোলটিকে আত্মঘাতী বলে চিহ্নিত করা যাবে না। তার প্রধান কারণ হল কামিংসের শট গোলমুখী ছিল এবং দুই খেলোয়াড়ের গায়ে লেগে বলটি গোলের জালে জড়িয়ে যায়। কোনওভাবেই ইউনাইটেডের নির্দিষ্ট ফুটবলার ইচ্ছাকৃতভাবে গোলে বল ঠেলে দেননি। তাই কামিংসের নামেই এই গোলটি লেখা হবে। খেলার ৬০ মিনিটের মাথায় কোচ ম্যাকলারেনকে পরিবর্ত খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামান। সঙ্গে সুহেল ভাট ও দীপেন্দু বিশ্বাসকেও মাঠে আনা হয়। মোহনবাগানের ফুটবলাররা গোলের ব্যবধান বাড়াতে সেইভাবে এগিয়ে আসার কথা হয়তো ভাবেননি বলে হালকা চালে খেলেছেন। খেলার ৮২ মিনিটে ম্যাকলারেন একটি গোল করেছিলেন। কিন্তু রেফারি অফসাইডের কারণে তা বাতিল করে দেন।
দ্বিতীয় পর্বের সংযুক্তি সময়ে অভিষেকের শট গোললাইন থেকে বাঁচিয়ে দেন ইউনাইটেডের গোলরক্ষক সেইলা তোরে। খেলার শেষে কোচ হোসে মোলিনা বলেছেন, দলের প্রতিটি খেলোয়াড় এই মুহূর্তে আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। আগামী শনিবার ডার্বি ম্যাচে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে প্রতিপক্ষ ইস্টবেঙ্গলকে চাপে রাখবে। তাই এখন সবার পাখির চোখ আইএফএ শিল্ডের ফাইনাল।



