চ্যাম্পিয়ন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিজয় উৎসবকে ঘিরে বুধবার ভয়াবহ ঘটনার সাক্ষী থাকল বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম। বিরাটদের বিজয়োল্লাস কার্যত পরিণত হয়েছে শোকে। পদপিষ্ট হয়ে মারা গেছেন ১১ জন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৪৭। তবে স্টেডিয়ামের বাইরে পরিস্থিতি যতই ভয়াবহ হোক না কেন ভেতরের জমকালো অনুষ্ঠান কোনও সময়েই বন্ধ করা হয়নি। সেই অনুষ্ঠানে সামিল হয়েছেন খেলোয়াড় থেকে শুরু করে নেতা-মন্ত্রী সকলেই। আর এর ফলেই সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে আরসিবি-র ম্যানেজমেন্ট এবং কর্ণাটক প্রশাসনকে।
এই ঘটনার পরেই বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার সৈয়দ কিরমানি। এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিকে প্রধানত আরসিবির কর্মকর্তাদের ব্যর্থতা বলেই তোপ দেগেছেন তিনি। বেঙ্গালুরুর এই উদযাপনকে ‘প্রাণঘাতী বিজয়োল্লাস’ বলে কটাক্ষও করেছেন তিনি। নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তিনি বলেন, একটা দল আইপিএল জয়ের জন্য ১৭ বছর অপেক্ষা করেছে। তাই বিজয় উৎসবের জন্য আরও কিছুটা অপেক্ষা করাই যেতে পারত। তাতে এই ঘটনা এড়ানো যেত বলে তিনি মনে করেন। ওইদিনের এই ভয়াবহ ঘটনার কথা উল্লেখ করে শোকপ্রকাশ করেছেন প্রাক্তন ক্রিকেটার শচীন তেণ্ডুলকর। তিনি বলেছেন, ‘চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে যা ঘটেছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।’ নিহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে, ঘটনাটি নিয়ে মুখ খুলেছেন প্রাক্তন ক্রিকেটার অতুল ওয়াসেন। এই ঘটনার জন্য তিনি সরাসরি দায়ী করেছেন ফ্রাঞ্চাইজি কর্তৃপক্ষকে। তিনি বলেন, বিষয়টিকে ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের থেকেও বড় করে দেখানো হয়েছে।
এরপরেই পুরো বিষয়টিকে ‘সস্তার প্রচার’ আখ্যা দিয়ে তাঁর বক্তব্য এবার আইপিএল জেতায় পরের বছর বিজ্ঞাপনের দাম আরও বাড়াতে পারবে ফ্রাঞ্চাইজি কর্তৃপক্ষ। আর সেই জন্যই তাদের এই উদ্যোগ বলে তাঁর মন্তব্য। বিষয়টি নিয়ে নিজেদের সামাজিক মাধ্যমে শোকবার্তা জানানো হয়েছে আরসিবির তরফে। তাদের দাবি ভয়াবহ এই ঘটনার কথা জানাজানি হতেই অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করে দিয়েছেন তারা। পাশাপাশি, নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনাও জানানো হয়েছে কর্তৃপক্ষের তরফে। সমবেদনা জানিয়েছেন দলের খেলোয়াড়রাও। বিরাট কোহলি থেকে শুরু করে দেবদত্ত পাডিক্কাল প্রত্যেকেই নিজেদের সামাজিক মাধ্যমে শোকবার্তা প্রকাশ করেছেন। এই প্রসঙ্গে বলা ভালো, বুধবারের পুরো অনুষ্ঠানেই নাকি আপত্তি ছিল বেঙ্গালুরু পুলিশের। প্রথমে তাদের তরফে নাকি অনুমতিও দেওয়া হয়নি। কিন্তু সেই আপত্তি শোনেনি আরসিবি। ফলে, একপ্রকার বাধ্য হয়েই অনুষ্ঠানের অনুমতি দেয় তারা।
বেঙ্গালুরুর স্টেডিয়ামের বাইরে পদপিষ্ট হয়ে ১১ জন ক্রিকেট ভক্ত প্রাণ হারান এবং ১৭ জন আহত হয়েছেন। এই ঘটনার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা শুনবে কর্নাটক হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ডি কামেশ্বর রাও ও বিচারপতি সি এম জোশীর বেঞ্চে বিচারবিভাগীয় হস্তক্ষেপ চেয়ে এক আইনজীবী বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে উল্লেখ করেছিলেন। রাজ্যের তরফ থেকে অ্যাডভোকেট জেনারেল শশীকিরণ শেট্টি আদালতকে জানিয়্ছেন, কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দেবে। কী ভুল হয়েছে, তা বোঝার জন্য রাজ্যের যে কোনও নাগরিকের মতো সরকারও উদ্বিগ্ন। তাই এই বিষয়ে যে কোনও পরামর্শকে স্বাগত জানানো হবে।