[সম্প্রতি সাব জুনিয়র ও জুনিয়র লিগ ফুটবলে মিনার্ভা অ্যাকাডেমি দারুণ সাফল্য পেয়েছে। বয়সভিত্তিক দু’টি প্রতিযোগিতায় তারা ফাইনালে উঠেছিল। জুনিয়র লিগে পাঞ্জাব এফসির কাছে হেরে গেলেও, সাব জুনিয়র লিগে মিনার্ভা অ্যাকাডেমি চ্যাম্পিয়ান হয়। জুনিয়র দলের সাফল্য নিয়ে একান্ত আলোচনায় রণজিৎ দাসের সঙ্গে মিনার্ভা অ্যাকাডেমির কর্ণধার রঞ্জিত বাজাজ।]
প্রশ্ন: আপনার জুনিয়র দলের সাফল্য নতুন নয়। কিন্তু সাফল্যের ধারাবাহিকতা কীভাবে সম্ভব?
বাজাজ: আমাদের অ্যাকাডেমি যে পরিকল্পনায় চলে, সাফল্য তারই অংশবিশেষ। আমরা পরিকল্পনাটা ফলো করে যাচ্ছি। স্বয়ংক্রিয়ভাবে সাফল্য ধরা পড়েছে তাতে।
প্রশ্ন: পরিকল্পনা বলতে কী বোঝাচ্ছেন?
বাজাজ: অ্যাকাডেমির জন্য সঠিক বয়সের খেলোয়াড় নির্বাচন করতে হবে। দীর্ঘক্ষণ মাঠে থাকার অভ্যাস করা প্রয়োজন। মাঠে ছেলেদের সঠিক ট্রেনিং দিতে হবে। সঠিক খাবারের দরকার। প্রি ও প্রো রিহ্যাবে নজর দিতে হবে। শক্তিশালী ও কন্ডিশনিং প্রক্রিয়ার সঠিক পথ বাছাই করতে হবে। প্রতিটি পদক্ষেপ সঠিকভাবে ফলো করার পাশে সর্বদা ফোকাসটা ধরে রাখতে হবে। এসব মেনে না চললে সাফল্য পাওয়া অসম্ভব।
প্রশ্ন: জুনিয়র লিগে এত ক্লাব অংশগ্রহণ করছে। সবাই নিজেদের অ্যাকাডেমিকে সেরা বলছে। টাটা ফুটবল অ্যাকাডেমির সঙ্গে আপনাদের অ্যাকাডেমিকে কেমন নম্বর দেবেন?
বাজাজ: টাটা ফুটবল অ্যাকাডেমির চাইতে দ্বিগুণ ফুটবলার আমাদের অ্যাকাডেমি ৯ বছরে দিয়েছে। কোনও অ্যাকাডেমি নিয়ে আলাদা কিছু বলতে চাই না। আমি বিশ্বাস করি আবাসিক অ্যাকাডেমি না হলে তার পরিপূর্ণতা হয় না। আমাদের অ্যাকাডেমির পরিচালনায় সবাই বিবাহিত। বিবাহিত মানুষ খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়। আমাদের অ্যাকাডেমিতে ৩৬৫ দিনের রুটিন এই রকম। সপ্তাহে ৬ দিন ১২ টাইমস্ ট্রেনিং হয়।সকাল, সন্ধ্যা এবং সকাল সন্ধ্যা। খেলা ছাড়া আমাদের অ্যাকাডেমির খোলাবার্তা–ভালো খাওয়াদাওয়া, সতেজ শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়া ও নির্ভেজাল ঘুমানো। এখন দেশে অধিকাংশ অ্যাকাডেমি লাভজনক ব্যবসার মত চলছে। কোচকে ঘন্টা ধরে কাজের ভিত্তিতে চুক্তি করা হচ্ছে। তিনিও ঘড়ি ধরে ট্রেনিং করিয়ে চলে যাচ্ছেন। সপ্তাহে তিনদিনের ট্রেনিং দিয়ে অ্যাকাডেমি চলে? সবকিছু খাতায়-কলমে আটকে রাখলে হবে না। বাস্তবের রূপটা দেখতে হবে। না হলে সবই হাসির খোরাক হয়ে যাবে।
প্রশ্ন: অনুর্ধ্ব-১৩ ও অনুর্ধ্ব-১৫ দুটো টুর্নামেন্ট একসঙ্গে চলল। এআইএফএফ জুনিয়র টুর্নামেন্ট দায়সারাভাবে শেষ করছে বলে মনে হয়না? তামিলনাড়ু থেকে ঝাড়খন্ড বিশাল দূরত্বে ক্লান্তি আসেনি?
বাজাজ: টানা একমাস দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে ছুটেছি। মির্নাভা অ্যকাডেমি আমার প্রাণ, আমার টার্গেট ছুঁতে হবে । জুনিয়রদের লিগ ও এআইএফ নিয়ে যা বলবো, তার কম বলা হবে। আমাদের মির্নাভা অ্যাকাডেমির ক্ষেত্রে গ্রুপ স্টেজে ৪টি খেলা। জুনিয়রদের দুটো বিভাগেই একই ফরম্যাটে খেলতে হলো। আমাদের টিম ফাইনাল রাউন্ডে না গেলে ৪ মাচেই মরশুম হয়ে যেত। সারা বছর মাত্র ৪টি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ। কত ক্লাবকে এটা মেনে নিতে হয়েছে। একেকটা টিমের স্কোয়াডে অন্তত ৩০ জন করে জুনিয়র ফুটবলার থাকে। খেলে ১১ জন। বাকি ছেলেদের অবস্থা বুঝতে পারা যাচ্ছে? সম্পূর্ণ ভুল পথে আমাদের ফেডারেশন চলছে। প্রাইভেট কোম্পানির মালিকের একটা লিগ চলছে। দেশের হয়ে খেলার জন্যও প্রস্ততির সঠিক সময় পাওয়া যায় না। আইলিগ খেলে এএফসি কাপে খেলার সুযোগ কেড়ে নেওয়া হলো। পরিকল্পনাহীনভাবে চলার জন্য ভারতীয় দলের এমন শোচনীয় পরাজয়।
প্রশ্ন: দু’টি জুনিয়র লিগ খুব কাছ থেকে দেখলেন। দলের দুর্বলতা সম্পর্কে আপানার অভিমত?
বাজাজ: শারীরিকভাবে আমরা পিছিয়ে আছি। আমরা কখনও ইউরোপ বা আফ্রিকানদের মতো চেহারার হবো না। কিন্ত জাপানি বা কোরিয়ানদের মত ছোটখাটো হলেও সামনে এগিয়ে যাওয়া যায়। গ্রাসরুট ফুটবলে জোর দেওয়া হচ্ছে না। অনুর্ধ্ব-৯ ও ১১ বছরের লিগ দেশে চালু হওয়া প্রয়োজন। লিগ বলতে যা বোঝায় সেভাবেই চালাতে হবে। ভারতীয় ফুটবলে নতুনত্ব চাই।
প্রশ্ন: ভারতীয় ফুটবলে ম্যাচ ফিক্সিং এখন তো তৃণমূল স্তরে পৌঁছচ্ছে? এর থেকে বাঁচার উপায় কী?
বাজাজ: আমাদের সামনে কঠিন কাজ এসে হাজির হয়েছে। সরকার বিষয়টা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে। ম্যাচ ফিক্সিং ও স্পট ফিক্সিংয় বন্ধের আইন নিশ্চয়ই খুব তাড়াতাড়ি আসবে। তবে বিভিন্ন রাজ্য সরকারের কাছেও বিষয়টা বিচারাধীন আছে। হরিয়ানা সরকার ম্যাচ ফিক্সিংয়ের বিরুদ্ধে বিধানসভায় আইন এনেছে।
প্রশ্ন: ভবিষতে বাংলায় ফুটবল নিয়ে আপনার কাজ করার ইচ্ছে আছে?
বাজাজ: আমি বাংলাকে ভালোবাসি। বাংলার ফুটবল ঐতিহ্য ভারতকে গর্বিত করেছে। আমাকেও প্রেরণা দেয়। কাজে উৎসাহ পাই। কাজ করার সুযোগ মিললে নিশ্চয়ই চেষ্টা করবো বাংলার ফুটবলের অগ্রগতিতে।