• facebook
  • twitter
Wednesday, 19 March, 2025

ভারতীয় ফুটবলে আধিপত্য ফিরে পাক ইস্টবেঙ্গল এফসি

২০০৩ সালে আসিয়ানা কাপ জয়ের পর দীর্ঘ ২২টা বছর কেটে গেছে। আন্তর্জাতিক স্তরে সেই সাফল্যের পর জাতীয় স্তরে ইস্টবেঙ্গলের শুধুই ব্যর্থতা এসেছে।

২০০৩ সালে আসিয়ানা কাপ জয়ের পর দীর্ঘ ২২টা বছর কেটে গেছে। আন্তর্জাতিক স্তরে সেই সাফল্যের পর জাতীয় স্তরে ইস্টবেঙ্গলের শুধুই ব্যর্থতা এসেছে। তথাপি, দীর্ঘ প্রতীক্ষার মধ্যে গত মরশুমে সুপার কাপ জয়ে এএফসির টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ ঘটেছে। এএফসি চ্যাম্পিয়ান লিগ-টু এর কোয়ালিফাইং রাউন্ডের খেলায় ছিটকে গিয়ে এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগ খেলতে হচ্ছে। এএফসির তৃতীয় পর্যায়ের এই টুর্নামেন্টে তুর্কমেনিস্তানের ক্লাব আর্কাদাগ এফকের মুখোমুখি হচ্ছে ইষ্টবেঙ্গল এফসি।

আন্তর্জাতিক স্তরের এই ম্যাচে দেশের সম্মান রক্ষার দায়িত্ব এখন ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কাঁধে এসেছে। দেশের সম্মান রক্ষার পাশাপাশি টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব পরের মরশুমে এএফসি চ্যাম্পিয়ান লিগ-টু এর সরাসরি খেলার সুযোগ পাবে।

এবারের মরশুম ডুরান্ড কাপ দিয়ে শুরু হয়েছে। ডুরান্ডের গ্রুপ পর্যায়ে ভালো খেললেও নকআউটে আইলিগের টিম শিলং লাজংয়ের কাছে হেরে বিদায় নিতে হয়েছে।এরপর আইএসএলে পরপর ছটা ম্যাচে পরাজয় বরণ করতে হয়েছিল। এমন সময় কোচ কার্ল কুয়াদ্রাতের পদত্যাগের পর, বর্তমান কোচ অস্কার ব্রুঁজ ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের দায়িত্ব গ্রহণ করেই অস্কারকে এএফসি চ্যাম্পিয়ন লিগ খেলতে হয়। এবং গ্রুপে অসাধারণ ফুটবল খেলে চ্যাম্পিয়ন হয়। ইস্টবেঙ্গল ক্লাব প্লে-অফে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে।

গ্রুপের প্রথম ম্যাচ ভুটানের প্যারো ক্লাবের সাথে ড্র করলেও বাংলাদেশের বসুন্ধরা ও লেবাননের নেজমেহ ক্লাবকে হারিয়ে দেয়।
এএফসি চ্যাম্পিয়ন লিগ খেলার পরে অস্কারের প্রশিক্ষণে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব আইএসএলে তাদের পরের ম্যাচগুলোয় অংশগ্রহণ করে। নভেম্বর ও ডিসেম্বরের মোট ৭টা ম্যাচের মধ্যে তারা ৬টা ম্যাচই অপরাজিতা থাকে। এবং সাত ম্যাচ থেকে ১৪পয়েন্ট সংগ্রহ করে।

কিন্তু জানুয়ারি মাসে দলের একাধিক ফুটবলার চোটের কবলে ছিটকে গেলে, আইএসএলে ইস্টবেঙ্গল এফসির জঘন্য পারফরম্যান্স ঘটে। মোহাম্মদ রাকিপ, আনোয়ার আলী, ক্রেসপো ও মাহি তাতালের মত গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলারদের সার্ভিস জানুয়ারি মাসে পাওয়া গেলনা। জানুয়ারি মাসের পাঁচটা ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটা ম্যাচেই জয় আসে। এইসময় মুম্বাই এফসির বিরুদ্ধে দুটো ম্যাচ খেলে মাত্র এক পয়েন্ট ঘরে এসেছে। রিজার্ভ বেঞ্চের দুর্বলতা এই সময় ভীষণভাবে প্রকট হয়ে ওঠে। জানুয়ারি মাসে ৫ ম্যাচ থেকে ৪ পয়েন্ট তুলতে সক্ষম হয়। ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতেই ঘরের মাঠে চেন্নায়াইন এফসির কাছে অপ্রত্যাশিতভাবে ৩-০ গোলে হারের জন্য আইএসএলের সুপার সিক্সে যাওয়ার সম্ভাবনা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। তথাপি, ফেব্রুয়ারি মাসে চারটে ম্যাচ খেলে ৯ পয়েন্ট সংগ্রহ করা গেছিল। মার্চ মাসের শুরুতেই ব্যাঙ্গালুরু এফসির বিরুদ্ধে ড্র করে সুপার সিক্সে যাওয়ার ক্ষীণ সম্ভাবনাও বিলীন হয়ে যায়।

অর্থাৎ আইএসএলে ইস্টবেঙ্গল এফসি এবারও তাদের আধিপত্য দেখাতে পারলনা। বিগত পাঁচ বছর ধরে আইএসএলে খেললেও লীগ চ্যাম্পিয়ন হওয়া তো দূরের কথা,সুপার সিক্সেও ইস্টবেঙ্গল এফসি পৌঁছতে পারছে না। আইএসএলের আগে ১৩ বছর আই লিগে থাকাকালীন ইস্টবেঙ্গল এফসি একবারও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। আইলিগের আগে ১১ বার জাতীয় লিগে অংশগ্রহণ করে তারা মাত্র তিনবার চ্যাম্পিয়ন হয়। বিগত ৩০ বছরে দেশের জাতীয় লীগে ইস্টবেঙ্গল এফসি মাত্র তিনবার চ্যাম্পিয়ন হতে পেরেছে। এর আগে দেশের কোন পর্যায়ের টুর্নামেন্টে ইস্টবেঙ্গল এফসির এমন ধারাবাহিক ব্যর্থতা ছিলনা। দেশীয় লিগ চালু হওয়ার পরে ইস্টবেঙ্গল এফসি তার আধিপত্য ভারতীয় ফুটবলে দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।অথচ লোকাল লীগে অর্থাৎ কলকাতা ফুটবলে অংশগ্রহণ করে ইস্টবেঙ্গল এফসি গত ৩০ বছরের মধ্যে ১৬ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে ইস্টবেঙ্গল এফসির মতন ঐতিহ্যশালী ক্লাবের এমন পারফরমেন্স হতাশাজনক।

এই সময়কালে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের টেন্ট অনেক আধুনিক হয়েছে। কিন্তু মাঠের পারফরম্যান্সে চূড়ান্ত সাফল্য আসছে না। এখন ইস্টবেঙ্গল এফসির কাছে এএফসি চ্যাম্পিয়ন লিগের প্লে-অফে ভালো ফল করাই প্রধান লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে অস্কার ব্রুঁজ তার দলের সব খেলোয়াড় সম্পর্কেই সম্যক ধারণা করে ফেলেছেন। তুর্কমেনিস্তান ফিফার ক্রমতালিকায় ভারতের থেকে অনেক নিচে অবস্থান করে। বিপক্ষের আর্কাদাগ ক্লাবের বাজেট ইষ্টবেঙ্গল ক্লাবের তুলনায় অনেক কম। প্রধানত দেশীয় ফুটবলারদের নিয়ে গড়া তুর্কমেনিস্তানের ক্লাবটি ৫ মার্চ ইস্টবেঙ্গল ক্লাবকে কতটা বেকায়দায় ফেলতে পারে, ম্যাচেই তা বোঝা যাবে। তবে,ইস্টবেঙ্গল ক্লাবকে ঘরের মাঠের খেলায় বিপক্ষ আর্কাদাগ দলকে হারাতেই হবে। কারণ ১২ই মার্চ ফিরতি লেগে ইস্টবেঙ্গল এফসিকে বিপক্ষের ঘরের মাঠে গিয়ে খেলতে হবে।

চোট আঘাতের পাশাপাশি মরশুমের ত্রিশটা ম্যাচ হয়ে যাওয়ার পরও, ইস্টবেঙ্গল এফসি তাদের রক্ষণভাগকে সাজিয়ে উঠতে পারেনি। রক্ষণের নির্দিষ্ট চারজন ফুটবলার টানা চারটা ম্যাচও খেলতে পারেনি। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, মাঝমাঠের জিকসনকে এখন রক্ষণে খেলতে হয়। রিজার্ভ বেঞ্চের অবস্থা এমন করুন যে, কোচ অস্কার তার সবকটা পরিবর্তন কোন ম্যাচেই নিতে পারছেন না।
আন্তর্জাতিক স্তরে এএফসি চ্যাম্পিয়ন লিগে ভালো ফলাফল, ইস্টবেঙ্গল ক্লাবকে ভারতীয় ফুটবলে তাদের আধিপত্য ফিরে পাওয়ার আত্মবিশ্বাস এনে দিতে পারে।