নিজস্ব প্রতিনিধি: হাত এবং পা ধরে রেখেছেন জনা চারেক মিলে। চ্যাংদোলা করে ঝুলিয়ে রাখা অবস্থাতেই চলছে বেধড়ক মারধর। কয়েক জনে মিলে ঘিরে ধরে, নানা দিক থেকে লাঠিপেটা করে চলেছেন অনবরত। সম্প্রতি এমনই এক ভিডিও সমাজ মাধ্যমে ভাইরাল হতেই সরগরম হয়েছে রাজ্য-রাজনীতি। ঘটনাটি কামারহাটির আড়িয়াদহ তালতলা স্পোর্টিং ক্লাবের। অভিযোগ শাসকদলের একাধিক ঘনিষ্ঠের বিরুদ্ধেই। যদিও, নেট দুনিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই অমানবিক ভিডিও দু-একদিন আগের নয়, বিষয়টি স্পষ্ট করলো ব্যারাকপুর পুলিশ। ব্যারাকপুর পুলিশের তরফে ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ করা হয়েছে। তারা ভিডিওটির বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশ আরও জানিয়েছে, ভিডিওটি পুরনো। ভিডিওতে যাঁদের দেখা যাচ্ছে, তাঁদের মধ্যে দু’জন ইতিমধ্যেই জেলে রয়েছেন এবং বাকিদের বিরুদ্ধেও আইনি পদক্ষেপ করা হবে। এই ঘটনায় তৎপর হয়েছে জাতীয় মহিলা কমিশনও। রাজ্য পুলিশের ডিজির কাছ থেকে এই সংক্রান্ত রিপোর্ট তলব করা হয়েছে।
বিজেপির অভিযোগ, স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব এই ঘটনার নেপথ্যে। ভিডিওতে দেখা গিয়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের, বলছে পদ্মশিবির। বিজেপির দাবি, তাঁরা সকলেই জয়ন্ত সিংহের লোক। কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্রের ঘনিষ্ঠ বলে এলাকায় জয়ন্তের পরিচিতি রয়েছে। সোমবার রাতে মারধরের ভিডিওটি পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির তরফে তাঁদের এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে লেখা হয়, “কামারহাটির তালতলা ক্লাবে মদন-ঘনিষ্ঠ জয়ন্ত সিংহ কিভাবে নিরস্ত্র মহিলাকে মারছেন, দেখা যাচ্ছে। দ্রুত তদন্ত এবং বিচার চাই।” এরপরই তৃণমূলের পাল্টা দাবি, ভিডিওটি তিন বছরের পুরনো। সেখানে যাঁদের দেখা গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে দু’জন এখন জেলে। রাজ্য সরকার অন্যায় বরদাস্ত করেনা, সেটি শাসকদলের নেতৃত্বই হোক না কেন! ভিডিও প্রসঙ্গে বিজেপির পাল্টা পোস্ট করেছে তৃণমূলও। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সাগরিকা ঘোষ এ প্রসঙ্গে এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, “অপরাধের প্রতি রাজ্য সরকারের কোনো সহনীয়তা নেই, এটি স্পষ্ট। বাংলায় হারার পর এমন অনেক পুরনো ভিডিওই বিজেপি ছড়িয়ে দিতে পারে বাংলা তথা তৃণমূলকে বদনাম করতে।” রাজ্য তৃণমূলের মুখপাত্র ঋজু দত্ত এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, “এটি ২০২১ সালের মার্চ মাসের ভিডিও। অভিযুক্তেরা জয়ন্ত সিংহ এবং তাঁর অনুগামী। ভিডিয়োতে যাঁদের দেখা যাচ্ছে, তাঁদের মধ্যে অন্তত দু’জন এখন জেলে। বাংলা বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাই তৃণমূলকে টার্গেট করতে এখন সব রকম ভিডিও ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ভাবে রাজ্যের বদনাম করার চেষ্টা চলছে।”
Advertisement
ভিডিওটি যে পুরনো, মানছেন এলাকাবাসীরাও। তাঁদের বক্তব্য, এলাকায় জয়ন্ত এবং তাঁর লোকজনের দাপট রয়েছে। নানা ভাবে এলাকায় তাঁরা ত্রাস সৃষ্টি করেন। ভাইরাল ভিডিওতে যাঁদের দেখা গিয়েছে, তাঁদের কয়েক জনকে শিবম গুপ্ত, রাজদীপ বর্মণ, লালু, গঙ্গা, লাল, দীপু, সুমন নামে চিহ্নিত করেছেন স্থানীয়রাই। সকলেই জয়ন্তের ঘনিষ্ঠ বলে এলাকায় পরিচিত। কেউ কেউ বলছেন, একটি চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে অভিযুক্তকে ক্লাবের ভিতরে এ ভাবে মারধর করা হয়েছিল। এর আগে গত রবিবার আড়িয়াদহে মা এবং ছেলেকে রাস্তায় ফেলে মারধরের যে ঘটনা ঘটেছিল, সেখানেও অভিযুক্ত ছিলেন জয়ন্ত এবং তাঁর অনুগামীরা। অভিযোগ, দুই যুবকের ব্যক্তিগত ঝামেলার মধ্যে জয়ন্তেরা ঢুকে পড়েন। মহিলা এবং তাঁর পুত্রকে হকি স্টিক, লাঠি, ইট দিয়ে মারধর করা হয়। এই ঘটনার পর জয়ন্ত-সহ একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সংশ্লিষ্ট ঘটনা বর্তমানে খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তবে ভাইরাল হওয়া ভিডিও যে পুরনো, তার ব্যাখ্যা দিয়েছে ব্যারাকপুর পুলিশ এবং তৃণমূল কংগ্রেস উভয়ই।
Advertisement
Advertisement



