• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

‘১০ দিনের মধ্যে দাম কমাতেই হবে’, শাক-সবজির অগ্নিমূল্য নিয়ে কড়া নির্দেশ মমতার

বাজারে নজরদারি চালাবে পুলিশ-প্রশাসন প্রশান্ত দাস: ভোট মিটতেই শাক-সবজির দাম বেড়েছে ব্যাপক ভাবে। আলু, পেঁয়াজ, লঙ্কা কিনতেই আগুন দামে হাত পুড়ছে জনসাধারণের। গরিব থেকে নিম্ন মধ্যবিত্তের মাথায় হাত! এবার কাঁচা সব্জির মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “দাম কমার লক্ষণ নেই। বাজারে যেতে ভয় পাচ্ছে মানুষ!” এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার নবান্নে মূল্যবৃদ্ধি সংক্রান্ত

বাজারে নজরদারি চালাবে পুলিশ-প্রশাসন

প্রশান্ত দাস: ভোট মিটতেই শাক-সবজির দাম বেড়েছে ব্যাপক ভাবে। আলু, পেঁয়াজ, লঙ্কা কিনতেই আগুন দামে হাত পুড়ছে জনসাধারণের। গরিব থেকে নিম্ন মধ্যবিত্তের মাথায় হাত! এবার কাঁচা সব্জির মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “দাম কমার লক্ষণ নেই। বাজারে যেতে ভয় পাচ্ছে মানুষ!” এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার নবান্নে মূল্যবৃদ্ধি সংক্রান্ত বাজার কমিটিগুলির সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘১০ দিনের মধ্যে দাম কমাতে হবে’, বৈঠক থেকে আবারও কড়া সুর মমতার। মঙ্গলেই মঙ্গলবার্তা দিয়ে মমতা সাফ জানান, “১০ দিনের মধ্যে দাম কমাতে হবে। কী করে করাবেন, কীভাবে করবেন, সেটা আপনাদের ব্যাপার। আমি সবাইকে দায়িত্ব দিচ্ছি। টাস্ক ফোর্সকে দায়িত্ব দিচ্ছি বিষয়টি দেখার জন্য।” উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার থেকেই পুলিশ-প্রশাসনকে বাজারে গিয়ে নজরদারির নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। টাস্ক ফোর্সকে প্রতি সপ্তাহে বৈঠকে বসারও নির্দেশ দিয়েছেন। বড়বাজারে চাল-ডালের পাইকারি এবং খুচরো দাম নিয়ন্ত্রণে রয়েছে কি না, মঙ্গলবারের বৈঠকে তা-ও জানতে চান মমতা। বেঁধে দিয়েছেন সময়, ১ মাস নয়, বরং ১০ দিনের মধ্যেই সবজির দামে নিয়ন্ত্রণ চান মমতা। কৃষিপণ্যের বেলাগাম মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে এদিন কেন্দ্রের বিরুদ্ধেও তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, “তিন মাস ধরে ভোট হয়েছে। নির্বাচনী বন্ডের টাকা তুলতেই সব্জির দাম বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে?”, প্রশ্ন মমতার।

Advertisement

এদিন টাক্স ফোর্সের কাজ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকে তিনি বলেন, “মূল্যবৃদ্ধি রুখতে টাস্ক ফোর্স গঠন করেছিলাম। শেষ কবে তারা বৈঠকে বসেছে জানি না। যত দিন দাম না কমে, তত দিন বৈঠকে বসতে হবে। আমি মুখ্যসচিব, ডিজিকে নির্দেশ দিচ্ছি। কতটা দাম কমল, তা নিয়ে প্রতি সপ্তাহে আমি রিপোর্ট চাই। ১০ দিনের মধ্যে দাম কমাতেই হবে।” এরপর তিনি বলেন, “দাম কেন বাড়ল? পাইকারি মালের জোগান কেন কমল? কিছু জিনিসের দাম আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম গোটা দেশে নাগালের বাইরে। এটা রাজ্যের বিষয় নয়। কেন্দ্রের বিষয়। যার জন্য সকলে সাফার করছি।” পাশাপাশি মুনাফাখোরেদের বিরুদ্ধে তোপ দেগে মমতা বলেন, “সব্জির দাম বাড়লেও কৃষকেরা কিছু পাচ্ছেন না। মুনাফা নিচ্ছেন মুনাফাখোরেরা।” এই পরিস্থিতিতে পুলিশকে বাজারে নজরদারি চালানোর নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাঁর আরও সংযোজন, “মুনাফা করার একটা লিমিট আছে। সবজির গাড়ি পুলিশ আটকায় না। বাজারে সিআইডি, পুলিশ, আইবি নজরদারি করুন। তার জন্য টাকা নেবেন না। আমি যদি কারও কাছে শুনতে পাই তোলাবাজি নেওয়া হয়েছে তাহলে অ্যাকশন নেব।” নিত্য প্রয়োজনীয় সবজির তালিকা থেকে যেই নাম বাদ দেওয়া যায়না তা হলো আলু। সেই আলুর দাম গড়িয়েছে ৩৫ টাকা প্রতি কিলোয়। এই চূড়ান্ত দামের কারণ? এ প্রসঙ্গে বড় ব্যবসায়ীদেরই দোষারোপ মমতার। বড় ব্যবসায়ীদের একাংশ হিমঘর বা কোল্ড স্টোরেজে আলু আটকে রাখছেন বলে অভিযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন রাজ্যের হিমঘরগুলিতে বিপুল পরিমাণ আলু পড়ে রয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। তথ্য পরিসংখ্যান দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, বর্তমানে এখনও ৪৫ লাখ মেট্রিকটন আলু হিমঘরে পড়ে রয়েছে, এদিকে বাজারে আলুর দামে আগুন! অন্যদিকে, পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির রেকর্ড পূর্বেও রয়েছে বাংলায়। আবারও সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি! এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের পরামর্শ মমতার। মহারাষ্ট্রের নাসিকের পরিবর্তে স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজ কেনার উপদেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর ভাষায়, “নাসিকের পেঁয়াজের উপরে ভরসা না করে, আমরা কেন চাষিদের থেকে আরও বেশি করে কিনছি না? তাহলে চাষিরা দামটা পায়। চাষিরা দামটা পাচ্ছে না। নাসিক থেকে কিনলে কি আপনারা কমিশন পান?” রাজ্যের চাষিরা যে পেঁয়াজ উৎপাদন করছেন, তা না কিনে কেন নাসিকের পেঁয়াজ কেনা হচ্ছে, সেই প্রশ্ন উত্থাপন করে ক্ষোভ উগড়ে দেন মমতা। এই প্রসঙ্গে সুখ সাগর ভ্যারাইটির পেঁয়াজের কথাও উল্লেখ করেন মমতা। তিনি জানান, প্রথমে এটি বাঁকুড়ায় চালু হয়েছিল। পরে তা মুর্শিদাবাদ সহ আরও কিছু জেলায় চালু হয়েছে।

Advertisement

এছাড়াও আলু-পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে রফতানি সন্দেহও করেছেন তিনি। আলু কিংবা পেঁয়াজ অন্য রাজ্যে রফতানি করা হচ্ছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর স্পষ্ট নির্দেশ, “আগে আমাদের রাজ্যের চাহিদা মিটবে, তারপর অন্য রাজ্যে জিনিস যাবে।” প্রয়োজনে রাজ্যের সীমানায় নজরদারির নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর। অন্যদিকে, তেলাপিয়া মাছ নির্ভয়ে খাওয়ার পরামর্শ মুখ্যমন্ত্রীর। মঙ্গলবারের বৈঠকে মমতা জানান, চলতি বছরেই ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হচ্ছে রাজ্য। মাছের ক্ষেত্রেও তা হবে না কেন, সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের কাছে সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি। জানতে চান, তেলাপিয়া মাছ খেলে সত্যিই কোনও রোগ বা শরীরে বিপরীত কোনও ক্রিয়া হতে পারে কি না। আধিকারিকেরা জানান, তেমন কিছুর প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তখন মমতা তেলাপিয়া মাছ খাওয়ার পরামর্শ দেন। ‘জল ভরো, জল ধরো’ প্রকল্পে কাটা পুকুরে তেলাপিয়া মাছ ছাড়ার কথাও বলেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, “তেলাপিয়া মাছ নিয়ে যারা মিথ্যা খবর রটিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কেন পদক্ষেপ করা হয়নি?”

Advertisement