সন্দেশখালির অস্ত্র উদ্ধার ছিল কেন্দ্রীয় এজেন্সির কৌশল

Written by SNS May 4, 2024 4:43 pm

প্রবীর ঘোষাল

সেদিন দুপুরে টিভি খুলে বেশ হকচকিয়ে গেলাম৷ কোথাও যুদ্ধ লেগেছে নাকি? টেলিভিশনের পর্দায় কার্গিলের মতো ছবি দেখছি৷ যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্যবাহিনীর জওয়ানদের যেমন তৎপরতা দেখি৷ তাঁদের হাতেও অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র৷ না, কিছুক্ষণের মধ্যেই ভুল ভাঙল৷

সন্দেশখালির ছবি! জাতীয় নিরাপত্তারক্ষীদের (এনএসজি) দাপাদাপি৷ সঙ্গে যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুর মোকাবিলায় ব্যবহূত স্বয়ংক্রিয় (রোবট) যন্ত্রপাতি৷ বন্দি শেখ শাহজাহানের ডেরায় মজুত অস্ত্রশস্ত্রের তল্লাশি৷ ভাবলাম, কেন্দ্রীয় এজেন্সির কাছে নিশ্চয়ই খবর আছে, এই অপরাধীর ঘাঁটিতে আরডিএক্সের মতো ভয়ঙ্কর কোনও বিস্ফোরক হয়তো লুকনো আছে৷

কিন্ত্ত পরবর্তীকালে টিভিতেই দেখলাম, কয়েকটি পিস্তল, ৪০০-র মতো কার্তুজ আর হাতে বানানো বোমা ছাড়া তেমন কোনও অস্ত্র এনএসজি উদ্ধার করতে পারেনি৷ কাশ্মীরে জঙ্গী থেকে দেশের বিভিন্ন জঙ্গলে মাওবাদীদের মোকাবিলায় সেনা-আধাসেনার অপারেশনের ঘটনা জেনেছি৷ কিন্ত্ত সেখানেও বোধহয় এইরকম তল্লাশি অভিযান দেখা যায়নি৷

সন্দেশখালি কাণ্ডকে আড়াল করার কোনও অভিপ্রায় নেই৷ যে কোনও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিই বলবে, শাহজাহানের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হোক৷ যে ধরনের অপরাধ কয়েক বছর ধরে সে নিজের খাসতালুকে সংগঠিত করেছে, তা ক্ষমার অযোগ্য৷ এমন অপকর্ম দিনের পর দিন শাহজাহান করে গেছে, অথচ পুলিশ প্রশাসন কিছু জানত না, সেটাও বিশ্বাসযোগ্য নয়৷ তাই তার কাজের প্রকৃত শাস্তিই প্রাপ্য৷

কিন্ত্ত যেভাবে শাহজাহান এবং সন্দেশখালির ঘটনাকে বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকার দেখছে, সেটা কি মেনে নেওয়া যায়? গেরুয়া শিবিরেই কানাকানি হচ্ছে, এটা বাড়াবাড়ি হচ্ছে না তো? তল্লাশির নামে যে দৃশ্য মানুষ দেখছে, সেটা বড্ড চোখে লাগছে৷ নির্বাচনকে প্রভাবিত করার এ যে পদ্মফুলের প্রাণান্তকর প্রয়াস, সেটা আরও বেশি প্রকট হয়েছে, সন্দেশখালিতে এনএসজি’র অপারেশনের দিনক্ষণ! সেদিন ছিল দ্বিতীয় দফার লোকসভার ভোটের দিন৷ বুথে যাওয়ার আগে ভোটাররা যাতে সন্দেশখালির তল্লাশি দেখে প্রভাবিত হন, যেন সেটাই ছিল কেন্দ্রীয় এজেন্সির কৌশল৷

রাজ্যে সন্ত্রাস প্রসঙ্গে বিশেষ করে সন্দেশখালি কাণ্ডে সিপিএমের কর্তাব্যক্তিদের কথাবার্তা শুনে হাসব না কাঁদবো ভাবছি৷ পশ্চিমবঙ্গে নাকি নজিরবিহীন সন্ত্রাস চলছে৷ শাসক দলের এই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রাজ্যবাসীকে রুখে দাঁড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের বেড়াল তপস্বীরা৷ আগমার্কা মার্কসবাদীরা বাম রাজত্বে সন্ত্রাস-রিগিংয়ের কাহিনি কি ভুলে মেরে দিয়েছেন? নাকি তাঁরা ঝড়ের সময় উটের বালিতে মুখ গুঁজে থাকার মতো অভিনয় করছেন?

বাম জমানায় বিভিন্ন জেলায় গ্রামের পর গ্রাম হার্মাদরা নিজেদের দখলে রাখত৷ সারা বছর তারা সেখানে সমান্তরাল প্রশাসন চালাত৷ বুথ পর্যন্ত ভোটের দিন যাওয়ার অধিকারও সাধারণ মানুষের ছিল না৷ পঞ্চায়েত, পুরসভা, বিধানসভা এবং লোকসভা, অর্থাৎ সব ভোটেই সন্ত্রাস-রিগিংয়ের চেহারা ছিল এক৷ একটা উদাহরণ দিলেই, সেই সময়ের ছবি সকলের সামনে দিনের আলোর মতো ফুটে উঠবে৷

২০০৪ সালে লোকসভার নির্বাচনে আরামবাগ কেন্দ্রে সিপিএম জিতেছিল ৬ লক্ষেরও বেশি মার্জিনে৷ দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল সেই মার্জিন৷ আরামবাগের জয়ী প্রার্থী অনিল বসু জিতে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে যখন এসেছিলেন, তাঁকে সিপিএমের রাজ্য নেতারা ‘বীরের সম্মান’ দিয়েছিলেন৷ অথচ, ভোটের ফলাফলে দেখা গিয়েছিল, আরামবাগ কেন্দ্রের বিভিন্ন বুথে বিরোধীরা যেখানে প্রাপ্ত ভোটের দু’অঙ্কে অর্থাৎ দশের মধ্যে পৌঁছতে পারেনি, সেখানে সিপিএম পেয়েছিল ৫০০ থেকে ১৫০০ ভোট৷ বহু বুথে বিরোধীরা শূন্যও ছিল৷ তাহলে সিপিএম এখন কোন মুখে রিগিংয়ের কথা বলে?

আর এই রিগিংয়ের সঙ্গেই যুক্ত ছিল হার্মাদদের লাগাতার সন্ত্রাস৷ সেই সন্ত্রাসে বারাসতের শাসন থেকে শুরু করে মেদিনীপুরের কেশপুর-গড়বেতার মতো বহু জায়গার নাম শিরোনামে থাকত৷ আরামবাগেও আতঙ্কের অন্ধকার বাম রাজত্বে দস্ত্তর ছিল৷

সুতরাং সন্দেশখালির মতো ঘটনায় যারা গেল গেল রব তুলেছে, তারা কি রাজ্যবাসীকে বোকা ভাবছে? অতীতের সন্ত্রাস-রিগিংয়ের সেই ভয়ঙ্কর যুগকে কি এত সহজে ভোলা যাবে?