আরও বেআব্রু মোদি

Written by SNS March 22, 2024 12:54 pm

একদিকে মোদি ‘গ্যারান্টি’, অন্যদিকে আরও ‘বেআব্রু’ মোদি শাসন৷ আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ব্যাঙ্কার সংস্থা ‘নোমুরা’ জানিয়েছে, ভারতে দারিদ্র্য আদৌ কমেনি৷ উল্টে দারিদ্র্য বেড়ে চলায় প্রতিটি পরিবারের খরচ করার ক্ষমতা মোদি জমানায় কমে প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে৷ সম্প্রতি একটি সর্বভারতীয় ইংরাজি দৈনিকে এই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে৷ মাথাপিছু পরিবার খরচ (এইচসিইএস) নিয়ে সম্প্রতি কেন্দ্রের জাতীয় নমুনা সংস্থা যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তা বিশ্লেষণ করেই নোমুরা রিপোর্ট জানিয়েছে, ইউপিএ আমলের থেকে মোদি আমলে পরিবারের খরচ বৃদ্ধির হার কমে প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে৷ সাধারণ মানুষের খরচ করার ক্ষমতা কমে যাওয়া বা দারিদ্র্য বৃদ্ধির কারণে খরচ বৃদ্ধির হার কমেছে বলে জানাচ্ছে ‘নোমুরা’৷ নোট বাতিল, পণ্য পরিষেবা কর, মহামারিতে দু’বছর লকডাউনের মতো ঘটনা মোদির আমলে দেশের অর্থনীতিকে বিধ্বস্ত করে দিয়েছে৷ বহু মানুষ কাজ হারিয়েছেন, অনেকের আয় কমে অর্ধেক হয়ে গিয়েছে৷ ফলে পরিবারের খরচ করার ক্ষমতাও হ্রাস পেয়েছে৷

সম্প্রতি এইচসিইএস সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, দেশে দারিদ্র্যসীমার নীচে থাকা মানুষের হার কমে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে৷ দেশে আর্থিক স্বাচ্ছল্য বেড়ে চলায় দারিদ্র্যের সংখ্যা কমে তা উধাও হয়ে গিয়েছে৷ এই দাবি করেছে আবার নীতি আয়োগ৷ এতে ‘দারিদ্র্যমুক্ত ভারত’ বলে নরেন্দ্র মোদি তাঁর নির্বাচনী প্রচারে নেমে পড়েছেন৷ মোদির দাবি উড়িয়ে নোমুরার সমীক্ষা জানিয়েছে, বিধ্বস্ত অর্থনীতিতে দারিদ্র্য কমে না, বরং বেড়েই চলে৷

নোমুরার রিপোর্টে কেন্দ্রের জাতীয় নমুনা সমীক্ষার তথ্য উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ২০১০-১২ সালে ইউপিএ আমলে গ্রামীণ মানুষের পরিবারে খরচ বৃদ্ধির হার ছিল ৬.৬ শতাংশ৷ ২০১২-২৩ সালে মোদির আমলে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩.১ শতাংশ৷ একইভাবে শহরে এই খরচের হার ছিল ৫.২ শতাংশ, তা কমে হয়েছে ২.৬ শতাংশ৷ ফলে গ্রাম এবং শহর দুই ক্ষেত্রেই খরচ বৃদ্ধির হার কমে অর্ধেক হয়ে গিয়েছে৷

নোমুরা যে রিপোর্টের ভিত্তিতে দেশের দারিদ্র্য, অভাব, অনটন বাড়ছে দেখিয়েছে কেন্দ্রের সেই এনএসএসও প্রকাশিত এইচসিইএস সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, দেশের ৫ শতাংশ মানুষ আছেন সারাদিনে যাঁদের ৪৬ টাকার বেশি খরচ করার উপায় নেই৷ এই খরচের মধ্যে খাবার ছাড়াও নিত্যপ্রয়োজনীয় যাবতীয় পণ্যের দাম ধরা হয়েছে৷ এতেই বোঝানো হয়েছে ৫ শতাংশ মানুষ আসলে দারিদ্র্যসীমার নীচে রয়েছে৷ বাকিরা দারিদ্র্যসীমার উপরে চলে এসেছে৷ ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনকালকেও হার মানিয়েছে নরেন্দ্র মোদির রাজত্বকালে ভারতের আয় ও সম্পদের বৈষম্য৷ একারণেই এখনকার সময়কালকে ‘কোটিপতি-রাজ’ চলছে বলে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ বিভিন্ন অর্থনৈতিক সমীক্ষার মতো এক গবেষণাপত্রেও বলা হয়েছে বৈষম্যের কথা৷ নজর কাড়ার মতো বিষয় হল, ২০১৪-১৫ সালের পর থেকে ভারতে সবচেয়ে বেশি সম্পদ কেন্দ্রীভূত হয়েছে কতিপয়ের হাতে৷

স্পষ্টতই, মোদির আমলেই সম্পদের কেন্দ্রীভবন চরম আকার নিয়েছে৷ সম্প্রতি প্যারিসভিত্তিক ‘ওয়ার্ল্ড ইনইকু্যইলিটি ল্যাব’ প্রকাশিত গবেষণাপত্রে তথ্য-পরিসংখ্যান দিয়ে ভারতের এই বৈষম্যের ছবি বেআব্রুও করে দিয়েছে আরও৷ বলা হয়েছে, এই সময়কালেই এদেশের ওপরের সারির ১ শতাংশের হাতেই রয়েছে আয়ের ২২.৬ শতাংশ এবং সম্পদের ৪০.১ শতাংশ৷ এমনকী ভারতীয় ধনীদের শীর্ষ ১ শতাংশের আয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিলের ধনীদের থেকেও বেশি, বলা হয়েছে গবেষণাপত্রে৷ একারণে ভারতের এই বৈষম্যকে ‘ঐতিহাসিকভাবে সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়েছে’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে৷ প্রকৃতপক্ষে, এদেশে কর্পোরেট-সাম্প্রদায়িক অাঁতাত লুট করেছে চলেছে জাতীয় সম্পদ৷ যার জেরে ধনী আরও ধনী হচ্ছে এবং গরিবকে আরও গরিব করে দেওয়া হচ্ছে৷ চরম এই অর্থনৈতিক বৈষম্যের মধ্যেই মোদির মুখে শোনা যাচ্ছে, ভারত হবে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ৷ মোদি ‘জুমলা’র এ এক নতুন দৃষ্টান্ত৷