• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

উত্তর কলকাতায় মমতার মিছিলে জনস্রোত

নিজস্ব প্রতিনিধি — একেই বলে পথ এক, মত আলাদা৷ এক যাত্রায় পৃথক ফল ফলল চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে৷ শ্যামবাজার থেকে স্বামীজির বাড়ি — মঙ্গলবার এই পথ দিয়েই গাড়ির ওপর উঠে রোড শো করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ তারপর চব্বিশ ঘন্টাও কাটেনি৷ সেই একই পথ ধরে শ্যামবাজার থেকে সিমলা স্ট্রিট ধরে পায়ে হেঁটে সেই একই গন্তব্যে স্বামীজির বাড়ি

নিজস্ব প্রতিনিধি — একেই বলে পথ এক, মত আলাদা৷ এক যাত্রায় পৃথক ফল ফলল চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে৷ শ্যামবাজার থেকে স্বামীজির বাড়ি — মঙ্গলবার এই পথ দিয়েই গাড়ির ওপর উঠে রোড শো করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ তারপর চব্বিশ ঘন্টাও কাটেনি৷ সেই একই পথ ধরে শ্যামবাজার থেকে সিমলা স্ট্রিট ধরে পায়ে হেঁটে সেই একই গন্তব্যে স্বামীজির বাড়ি পৌঁছলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এই মুহূর্তে যাঁরা যথাক্রমে কেন্দ্রের শাসক ও বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ দলের সদস্য৷ বুধবার সকালেই বারুইপুরের মঞ্চ থেকে মমতা স্পষ্ট করেছিলেন, শ্যামবাজারে সভা করার কথা ছিল না৷ মোদির মিথ্যাচারের জবাব দিতেই ওখানে যাব৷ এমনকী বুধবারের শেষ সভা মেটিয়াবুরুজের সভাতেও মমতা বার্তা দিয়েছেন, মোদিজি মঙ্গলবার যেখানে মিছিল করেছেন, সেখানে মিছিল করলাম৷ মোদিজি রাজনীতি করতে গিয়েছিলেন, আমি গিয়েছিলাম নেতাজিকে স্যালুট জানাতে আর মোদির মিথ্যাচারের প্রতিবাদ করতে৷ এদিন শ্যামবাজার থেকে পদযাত্রার শেষে সুদীপ-কুণালকে কিছু নির্দেশ দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো৷

বুধবার শ্যামবাজার থেকে পদযাত্রা শুরু করার আগে নেতাজির মূর্তিতে মাল্যদান করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সেখানেই তিনি কেন্দ্রীয় সরকার এবং নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে সরব হন৷ বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের সময়ে লোক দেখাতে শ্যামবাজার মোড়ে মাল্যদান করতে পারেন৷ কিন্ত্ত বারবার বলা সত্ত্বেও নেতাজির জন্মদিন ২৩ জানুয়ারি, জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেননি৷ নেতাজির পরিকল্পিত যোজনা কমিশন তুলে দিয়েছে মোদি সরকার৷

Advertisement

বুধবার উত্তর কলকাতা কেন্দ্রের প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড় থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে পথহাঁটার সঙ্গী হন শশী পাঁজা, মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন, রাজ্যসবার প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ, কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ প্রমুখ৷ তাঁদের এই পদযাত্রার গন্তব্য ছিল সিমলা স্ট্রিটে বিবেকানন্দের বাড়ি৷

Advertisement

এই পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদযাত্রার প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তায় শহরের মানুষের উচ্ছ্বাস চোখে পড়ে৷ পথের দু’ধারে যেমন মানুষ ভিড় করেছিল, তেমনই বাড়ির ছাদ-জানলা থেকেও মানুষের উচ্ছ্বাসের চিত্র চোখে পড়ে৷ পদযাত্রার সময়ে একজন মহিলা উৎসাহী হয়ে নিরাপত্তার দড়ি পেরিয়ে এগিয়ে আসার চেষ্টা করলে মমতা নিজেই এগিয়ে তাঁর দিকে চলে যান৷ আগামী ৪ জুন ভোটের ফলাফল কী হবে সেকথা বলা না গেলেও এখনও যে মমতা আবেগ মানুষের মধ্যে যথেষ্ট কাজ করে, সেকথা বোঝা গেল এদিনের পদযাত্রায়৷
সিমলা স্ট্রিটে বিবেকানন্দের বাড়ি পেঁৗছনো পর্যন্ত একইভাবে উৎসাহী জনতাকে দেখা যায়৷

এটাই মোদির রোড শো-এর সঙ্গে মমতার পদযাত্রার পার্থক্য৷ মমতার কথায়, মোদির রোড-শো’তে লোক ভরাতে হাওড়া, হুগলি এমনকী ঝাড়খণ্ড থেকেও লোক আনতে হয়৷ কিন্ত্ত বাস্তব চিত্র হল, বুধবার মমতার পায়ে হাঁটা পদযাত্রায় এলাকার মানুষের ভিড়েই পথের দু’ধার ভরে যায়৷ এদিন বিবেকানন্দের বাসভবনে পেঁৗছে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের মহারাজদের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন মমতা৷ স্বামীজির মূর্তিতে পুষ্পার্ঘ্য দেন৷ মহারাজদেরও ফুল এগিয়ে দেন শ্রদ্ধা জানানোর জন্য৷ স্থানীয় সমস্যা নিয়ে বিবেকানন্দের বা‌ি.ড়র মহারাজদের সঙ্গে কথা বলার ফাঁকে মেয়র ফিরহাদ হাকিমকেও ডেকে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেন৷

স্বামীজির বা.ড়ি থেকে গাড়িতে উঠে পরবর্তী সভার উদ্দেশে যাত্রা করার আগে মমতা জিজ্ঞেস করেন, কুণাল কই? কুণাল ঘোষ তখন রাস্তার উল্টো দিকে দলী৷ নেতাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন৷ মমতার ডাকে সামনে আসেন তিনি৷ এরপর তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কুণাল ঘোষের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ আলাদা করে কথা বলেন মমতা৷ উত্তর কলকাতায় তৃণমূলের বিরোধী তৃণমূলই৷ অর্থাৎ একটা গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে ফিসফাস আছেই দলের মধ্যে৷ উত্তর কলকাতায় সুদীপের প্রতিপক্ষ তৃণমূল দল ছেড়ে যাওয়া তাপস রায়ের সঙ্গে কুণাল ঘোষের হূদ্যতার কথা সবারই জানা৷ সূত্রের খবর, দু’জনের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলে সেই দু’জনের মধ্যে দূরত্ব মেটানোরই চেষ্টা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ জানিয়ে দেন, কলকাতা উত্তর আসনটা জিততে হবে আমাদের৷ সেটা তোমরা দেখে নিও৷ দুজনেই তাতে সম্মতিসূচক মাথা নাড়েন৷ কিছুদিন আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সাধু’ মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল৷ এদিন স্বামীজির বাসভবনে গিয়ে মহারাজদের সঙ্গে আলোচনায় বসে মমতা বুঝিয়ে দিলেন, বিবাদই হোক বা বিতর্ক — সব কিছুর ইতি টানতে পারেন তিনিই৷

Advertisement