একুশের মঞ্চে যুবরাজের উপস্থিতি নিয়ে আশাবাদী দল
প্রশান্ত দাস: ভোটপর্ব মিটতেই জুনের মাঝামাঝিতে নিজ এক্স হ্যান্ডেলে সাময়িক রাজনৈতিক বিরতি নেওয়ার কথা নিজেই ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। গত ২৪-২৫ জুন লোকসভায় সাংসদ হিসেবে শপথগ্রহণের পর তিনি পাড়ি দিয়েছিলেন বিদেশ। অভিষেক ঘনিষ্ঠ মহলের মতে, মূলত চোখের চিকিৎসার জন্যই অভিষেক গিয়েছিলেন আমেরিকায়। তবে, শেষ হয়েছে তাঁর ছুটিপর্ব। অবশেষে তৃণমূল সেনাপতি কলকাতায় ফিরে এলেন। শুক্রবার সকালের বিমানে কলকাতা বিমানবন্দরে নামেন অভিষেক।
Advertisement
উল্লেখ্য, আগামীকাল অর্থাৎ ২১শে জুলাই রবিবার তৃণমূলের বার্ষিক সভা রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নির্দেশে, এদিন কেবল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনই হবে না, পাশাপাশি লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় তৃণমূলের জয়ের আনন্দও ভাগ করে নেবেন দলীয় নেতৃত্ব থেকে কর্মী-সমর্থকেরা। মুখ্যমন্ত্রী থেকে অভিষেক লোকসভা ভোট মিটতেই ঘোষণা করেছিলেন, এখনই কোনো বিজয় উৎসব নয়। বরং জয়ের আনন্দ ভাগাভাগি হবে প্রতিক্ষিত ২১শে জুলাইতেই। তৃণমূল সুপ্রিমোর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করবেন তৃণমূল বাহিনী। শহীদ দিবস উপলক্ষ্যে শুক্রবার থেকেই দূরবর্তী জেলার কর্মী-সমর্থকেরা কলকাতায় পৌঁছতে শুরু করেছেন। অভিষেককে ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে দেখা যাবে কি না, তা নিয়ে তৃণমূলের মধ্যে কৌতূহল ছিল। রাজনৈতিক মহলেও সেই প্রসঙ্গে জট বেঁধেছিলো। তবে শুক্রবার তিনি শহরে ফিরে আসায় গোটা তৃণমূল আশা করছে, রবিবারের সভায় থাকবেন অভিষেক এবং বক্তৃতাও করবেন।
Advertisement
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, জুনে অভিষেকের এক্স পোস্টটি রাজনৈতিক মহলের পাশাপাশি শাসকদলের মধ্যেও আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল। শুধু সংগঠন নয়, সামগ্রিক ভাবে রাজ্য প্রশাসনের মধ্যেও অভিষেকের পোস্টের আঁচ লেগেছিল। সেই পোস্টে অভিষেক জানিয়েছিলেন, তিনি চিকিৎসার জন্য সংগঠনের কাজ থেকে ছোট বিরতি নিচ্ছেন। ছুটিতে থাকাকালীন তিনি বিভিন্ন বিষয় একটু দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করবেন। কিন্তু সেই পোস্টের ভাষ্য দেখে তৃণমূলের প্রথম সারির অনেকেই মেনে নিয়েছিলেন, অভিষেকের বেশ কিছু বিষয়ে অসন্তোষ রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হল সরকারি কাজের ক্ষেত্রে একশ্রেণির মন্ত্রী-আমলাদের খামখেয়ালি মনোভাব। যার ফলে সময়ের কাজ সময়ে না হওয়া। পোস্টের ভাষ্যতেই অভিষেক আশা প্রকাশ করে লিখেছিলেন, রাজ্য সরকার নিজ দায়িত্ব পালন করবে। রাজনৈতিক মহলের মত ছিল, অভিষেক অত্যন্ত প্রাকটিক্যাল নেতৃত্ব। যার ফলে দলীয় খামখেয়ালিপনায় তিনি সামান্য বিরক্ত। উল্লেখ্য, অভিষেকের ওই পোস্টের পরবর্তী সময়ে গত দেড় মাস ধরে বিভিন্ন প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবান্ন। যাতে সরকারি কাজে গতি সঞ্চারের ইঙ্গিত স্পষ্ট বলেই মত আধিকারিকদের। তবে অভিষেক যে শারীরিক ভাবে অসুস্থ ছিলেন, তাও সত্য। সবমিলিয়ে অভিষেক কেন্দ্রিক যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল তাতে ইতি টানলেন যুবরাজ নিজেই।
গত ১৬ জুন বাইপাসের ধারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে অভিষেকের ছোট একটি অস্ত্রোপচার হয়েছিল। তার পরে লোকসভায় সাংসদদের শপথগ্রহণ অধিবেশনের সময়ে জাতীয় রাজনীতিতে নানা বিষয়ে দলনেত্রী মমতার নির্দেশক্রমেই সক্রিয়তা দেখিয়েছিলেন তৃণমূলের সেনাপতি। স্পিকার নির্বাচন নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়ার ফলে দেখা গিয়েছিল, রাহুল গান্ধী অভিষেককে ডেকে নিয়ে লোকসভায় বসে কথা বলছেন। রাহুল ফোনে কথা বলেছিলেন মমতার সঙ্গেও। সুতরাং রাজনীতি থেকে সাময়িক বিরতি নিলেও, একেবারে গায়েব হয়ে যাননি যুবরাজ। দূর থেকেই পালন করে গিয়েছিলেন নিজ দায়িত্ব। দিল্লির বুকে দাঁড়িয়েও আওয়াজ তুলেছিলেন। তারপরেই অবশ্য আমেরিকায় চলে যান অভিষেক। অবশেষে ফিরলেন শুক্রবার। রবিবার ২১শে জুলাইয়ের মঞ্চে তাঁকে কোন ভূমিকায় দেখা যাবে, আপাতত সে দিকেই তাকিয়ে গোটা বাংলা।
Advertisement



