নিজের এবং অভিষেকের প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কা প্রকাশ মুখ্যমন্ত্রী মমতার

Written by SNS April 22, 2024 1:08 pm

নিজস্ব প্রতিনিধি— মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দোপাধ্যায় প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করলেন বালুরঘাট প্রার্থী বিপ্লব মিত্রের সমর্থনে আয়োজিত নির্বাচনী সভা থেকে৷ রবির দুপুরে তাঁর এমন আশঙ্কা প্রকাশেই কার্যত নড়েচড়ে বসেছে বঙ্গীয় রাজনৈতিক মহল৷ উল্লেখ্য, কেবল তাঁর নিজের নয়, পাশাপাশি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়েরও প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করলেন তিনি৷ এদিন নাম না করে বিজেপিকে ‘ডেঞ্জারাস’ বলে আখ্যা দিলেন মমতা বন্দোপাধ্যায়৷

এদিন নিজের সভা থেকে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী -এর ‘বোমা’ সংক্রান্ত মন্তব্যের পাল্টা জবাব দেন মমতা বন্দোপাধ্যায়৷ ‘বোমা’ পড়তে চলেছে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন শুভেন্দু৷ সেই প্রসঙ্গেই পাল্টা আক্রমণ শানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এই যে বোমা ফাটানোর কথা বলছে, আমিও টার্গেট অভিষেকও টার্গেট৷ এরা আমাদের জীবন পর্যন্ত নিয়ে নিতে পারে, এত ডেঞ্জারাস এরা৷ মনে রাখবেন, নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা কখনও ভাবি না৷ আমরা মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবি৷ এইসব চালাকি, নানারকম চক্রান্ত, যেমন পুলওয়ামায় করেছিল৷ এগুলো হচ্ছে চক্রান্ত, এই চক্রান্ত ভেঙে দেবই আমরা৷ ” নাম না করে শুভেন্দুকে নিশানা করে বলেন, “বলে বোমা ফাটাব৷ একটা কালিপটকা ফাটিয়ে দেখো৷ বোমা তোমাদের বিরুদ্ধে ফাটাব৷ কালো টাকা কোথায় গেল? গদ্দার জবাব দাও৷ সব চেয়ে বড় ডাকাত, সব চেয়ে বড় গদ্দার, উনি মাঝেমধ্যেই ইডি, এনআইএকে দিয়ে গ্রেফতার করান৷ মনে হয় যেন কেন্দ্রের সরকারটা উনিই চালান৷ কাকে কখন গ্রেফতার করা হবে, বদলি করা হবে, খুন করা হবে, উনিই বলছেন৷ বলছে নাকি বোমা ফাটাবে৷ বোমটা কি মেরে ফেলার বোম? সাহস থাকলে আজই বলো৷ ” পাশাপাশি এদিন স্মৃতিচারণা করে মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেন কিভাবে কুমারগঞ্জের পুলিশের কাছ থেকে প্রায় শখানেক ছেলেমেয়েকে ছাড়িয়ে এনেছিলেন যখন পার্থ সিংহ রায় কুমারগঞ্জের পুলিশের গুলিতে মারা যান৷

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শনিবার দক্ষিণ মালদার ইংরেজবাজারে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “কাল রবিবার, আগামী সপ্তাহ শুরু হতে চলেছে, আপনারা দেখবেন, আমি বলব না বিস্তারিত, আগামী সপ্তাহের শুরুতে এমন একটা বোমা পড়বে, তৃণমূল বেসামাল হয়ে যাবে৷ তৃণমূল কূলকিনারা পাবে না৷ সেই ব্যবস্থার দিকেই যাচ্ছে, আপনারা অপেক্ষা করুন৷ ” তারই পাল্টা জবাব মুখ্যমন্ত্রী দেন রবিবারের বালুরঘাটের সভা থেকে৷

রবিবার উত্তরবঙ্গের বালুরঘাটের কুমারগঞ্জের চকরাম রায় গ্রাউন্ডে সভা করে একদফা বিজেপিকে তুলোধোনা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এদিন বালুরঘাট টাউন ক্নাবে দ্বিতীয় সভা করে বিজেপির ভাঙার ডাক দিলেন তিনি৷ সাধারণ মানুষের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, ”বিজেপিকে ভাঙুন, নাহলে ওরা দেশ ভেঙে দেবে৷ ” পাশাপাশি কেন সুকান্ত মজুমদারকে ভোট দেওয়া উচিত হবে না সেই ব্যাখ্যাও দেন মমতা৷ নির্বাচনী প্রচারের প্রায় প্রতিটি সভা থেকেই কেন্দ্রীয় বঞ্চনা এবং এনআরসি-সিএএ বিরোধী আওয়াজ তুলছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ রবিবারের বালুরঘাটের সভাও তার ব্যক্তিক্রম নয়৷ এই বিষয় নিয়েই কথা বলতে গিয়ে তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, কেন বিজেপি তথা তাদের প্রার্থী সুকান্ত মজুমদারকে ভোট দেওয়া উচিত নয়৷ প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে মমতা বলেন, ”২ কোটি বেকারদের চাকরি দেবেন বলেছিলেন, একজনকেও চাকরি দেননি৷ শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দেশে সবথেকে বেশি৷ ১৫ লক্ষ করে টাকা দেবে বলেছিল বিজেপি৷ কিন্ত্ত আজ পর্যন্ত ৫০ হাজার টাকাও কেউ পাননি৷ তাহলে কেন সুকান্তকে ভোট দেবেন? কেন বিজেপিকে ভোট দেবেন?” একই সঙ্গে, কালোটাকা-নোটবন্দি, পিএম ফান্ডের টাকার ইসু্য নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তৃণমূল নেত্রী৷

সাম্প্রতিক সময়ে জ্বালানির দাম কিছুটা কমানো হলেও মমতার দাবি, ভোটের পরই সেই দাম বেড়ে যাবে৷ ১০০০ টাকার গ্যাস ১৫০০ টাকা হয়ে যাবে৷ ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি নিয়েও তিনি অভিযোগের আঙুল তুলেছেন মোদী সরকারের দিকে৷ মমতা বলেন, হার্টের ওষুধ থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব ওষুধের দাম বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার৷

বালুরঘাটে বিমানবন্দরের প্রসঙ্গ টেনেও সরাসরি প্রধানমন্ত্রী মোদীকে নিশানা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তাঁর সংযোজন, ”বালুরঘাট বিমানবন্দরের কাজ হয়েছে কি হয়নি? আমরা তো বেলুরঘাট নয়, বালুরঘাটে এসে বলছি৷ বিমানবন্দর পুরো তৈরি, কিন্ত্ত আপনি বিমান দিচ্ছেন না৷ তাই চালু হচ্ছে না৷ ” মমতার আক্রমণ, ”বিজেপির কিছু গদ্দার বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী করেছে? এটা কি বাংলার নির্বাচন যে আমার কাছে কৈফিয়ত চাওয়া হচ্ছে? এটা দিল্লির নির্বাচন৷ তাই কৈফিয়তও মোদীকে দিতে হবে৷ ” বাংলার মানুষের কাছে মমতার আবেদন, এই ভোটে গদ্দারদের জবাব দিন৷ তাঁদের জবাব দিতেই হবে৷