নির্বাচন কমিশনের হয়ে বলতে গিয়ে বিজেপি ‘আত্মঘাতী’ হয়েছে, শুভেন্দুর মন্তব্যে পাল্টা তোপ অভিষেকের

Written by SNS April 16, 2024 2:46 pm

নিজস্ব প্রতিনিধি – ঝডে় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পথে অন্তরায় নির্বাচন কমিশন৷ বিগত কয়েকদিনে এই প্রসঙ্গে লাগাতার সুর চডি়য়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় থেকে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়৷ এবার পাল্টা দিতে আসরে নেমে পড়লেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী৷ এখানেই শেষ নয়, শুভেন্দু যে রাজ্যবাসীকে ‘ভুল বোঝাচ্ছেন’ তার প্রমাণও সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দিলেন তৃণমূল নেতৃত্বরা৷ এ নিয়ে আপাতত সরগরম রাজ্য রাজনীতি৷ গত ৩১ মার্চ ক্ষণিকের ঝডে় লন্ডভন্ড হয়ে যায় উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলা৷ সেই ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি নির্মাণ করে দেবে রাজ্য সরকারই, সেই দাবি নিয়ে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল দ্বারস্থ হয় নির্বাচন কমিশনের৷ রাজ্যপালের সঙ্গেও এই বিষয়ে কথা বলেন অভিষেক৷ শেষপর্যন্ত নির্বাচনের কমিশনের তরফ থেকে জানানো হয়, রাজ্য সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে পারবে৷ তবে সেই ক্ষতিপূরণের পরিমান হবে সর্বাধিক কুড়ি হাজার টাকা৷ মুখ্যমন্ত্রী এই নির্দেশকে অমান্য করেই সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্তদের এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং গত ১২ এপ্রিল সেই ঘোষণাই করেছিলেন অভিষেক৷

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৫ই এপ্রিল শুভেন্দু এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, “আপনি কিছু লোককে সব সময় বোকা বানাতে পারেন, এবং সব মানুষকে কিছু সময় বোকা বানাতে পারেন, কিন্ত্ত আপনি সব সময় সব মানুষকে বোকা বানাতে পারবেন না৷” শুভেন্দুর দাবি, নির্বাচন কমিশন ৯ এপ্রিল এক্স গ্রেশিয়া এবং হাউস বিল্ডিং অনুদান প্রদানের জন্য ছাড় মঞ্জুর করেছে৷ এই বার্তা ৯ এপ্রিলই রাজ্য সরকারকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল৷ ময়নাগুডি় এবং জলপাইগুডি়র মানুষ যারা বিধ্বংসী টর্নেডোতে তাদের ঘরবাডি় হারিয়েছিল, তারা যত তাড়াতাডি় সম্ভব বাডি় তৈরির জন্য অনুদান পেতে পারে সে কারণেই কমিশন এই পদক্ষেপ করেছিল৷ অর্থাৎ শুভেন্দুর মতে, দুর্যোগ বিধ্বস্ত অবস্থায় ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই৷ যার একটি বড় অংশ কেন্দ্রীয় সরকার এনডিআরএফ-এর মাধ্যমে দিয়ে থাকে৷ তাঁর এই বক্তব্যের সাথেই শুভেন্দু এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেছেন মমতা ও অভিষেকের ছোট্ট দুটি ভিডিও ক্লিপ এবং নির্বাচন কমিশনের একটি বিজ্ঞপ্তি৷

তবে, শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য যে ভিত্তিহীন তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন অভিষেক বন্দোপাধ্যায় থেকে একাধিক তৃণমূল নেতৃত্বরা৷ তমলুকে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এ প্রসঙ্গে পাল্টা জবাব দিয়ে অভিষেক বলেন, নির্বাচন কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে ‘এক্সিস্টিং রেট’ এর কথা বলা হয়েছে৷ এর অর্থ হলো যারা আংশিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের পাঁচ হাজার টাকা এবং যারা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের কুড়ি হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া যাবে৷ কিন্ত্ত নতুন বাড়ির ক্ষেত্রে তো রাজ্য সরকার এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা দিতে চায়৷ সেখানে পাঁচ বা বিশ হাজারে কি হবে! এটিই ছিল তৃণমূলের দাবি৷ সুতরাং নির্বাচন কমিশনের হয়ে কথা বলতে গিয়ে বিজেপি ‘আত্মঘাতী’ হয়েছে৷
পাল্টা তোপ দেগেছেন রাজ্য তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ৷ শুভেন্দুর পোস্ট শেয়ার করে পাল্টা নিশানা করে কুণাল লেখেন, “পোস্টে ২০০ শব্দের বেশি রয়েছে৷ কিন্ত্ত কোনও শব্দই অর্থবহ নয়৷ এক্স গ্রেশিয়া মানে ঘর তৈরির জন্য অনুদান নয়৷ বাংলার মানুষ আর আপনার মিথ্যার জালে আটকা পড়বে না৷ ” রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজাও শুভেন্দুকে পাল্টা আক্রমণ করে বলেন, “দ্বিতীয়বার যখন রাজ্যপালের সাথে অভিষেক বন্দোপাধ্যায় দেখা করেছিলেন সেদিনই স্পষ্ট করে তিনি বলেছিলেন এ বিষয়ে৷ নতুন করে বাড়ি নির্মাণের জন্য নয়, বাড়ি সারানোর জন্য রাজ্য সরকারকে সর্বাধিক কুড়ি হাজার টাকা ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে৷ এই বিষয়টিকেই কেন্দ্র করে বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করে ভুল বোঝাচ্ছেন শুভেন্দু অধিকারী৷ আবাস প্লাসকে কেন্দ্র করেও বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করেছিলেন তিনি৷ সুতরাং এর থেকে বিরত থাকতে হবে৷ জলপাইগুড়িতে বিজেপি হারছে, সেই ভয় থেকেই বিজেপি নেতারা ভুল বোঝাচ্ছেন সাধারণ মানুষকে৷ ” তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়প্রকাশ মজুমদার এ প্রসঙ্গে বলেন, “শুভেন্দু অধিকারী নিজে থেকে নির্বাচন কমিশনের হয়ে বলছেন কেন? কমিশন যদি নির্দিষ্ট আর্থিক সাহায্য দেওয়ার ব্যাপারে অনুমতি দিয়েই থাকে, তাহলে তারা নিজেরাই সেটা প্রকাশ্যে বলুক৷ ” এ প্রসঙ্গে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়া পেজে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়ে পোস্টও করা হয়েছে৷ নির্বাচন কমিশনের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ‘এক্স গ্রেশিয়া’ এর অর্থ আদতে কেবল ক্ষতিপূরণ বাবদ পাঁচ হাজার এবং কুড়ি হাজার টাকা, ‘নতুন ভাবে বাড়ি নির্মাণের অনুদান নয়’ সেটিই বোঝানো হয়েছে তৃণমূলের পোস্টে৷