• facebook
  • twitter
Saturday, 13 December, 2025

তাতান ও টুবলুসোনা

(সত্যি ঘটনা অবলম্বনে)

কাল্পনিক চিত্র

শিখা সেনগুপ্ত

ছোট্ট তাতান ক্লাস টু-এ পড়ে। তাদের বাড়ির পিছনে পুরনো দরজা ভাঙা গ্যারেজের মধ্যে লালি কুকুর তিনটে বাচ্চা দিয়েছে। দুটো পাটকিলে রঙ আর একটা ধবধবে সাদা। তাতান রোজ স্কুল থেকে ফিরে ওদের দেখে আসে, তুলোর বলের মত ছোট্ট কুকুরছানাগুলো তাতানের দিকে পিটপিট করে তাকায়। কয়েকদিন পরে দেখা গেল সাদা ছানাটা নেই। তাতানের মা বলেন, ‘কাল একটা লোককে গ্যারেজের কাছে ঘুরঘুর করতে দেখেছি, নির্ঘাৎ ও-ই চুরি করেছে।’ বাবা বললেন, ‘মানুষ বড় নিষ্ঠুর, ছানাটা ওর মায়ের দুধ খায়, বাঁচাতে পারবে কি না কে জানে!’ তাতান বিছানায় শুয়ে কাঁদছিল। মা পিঠে হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিলেন— ‘অন্য দুটো ছানাকে নিয়ে খেলা করো। ওদের পাহারা দিতে হবে।’ ভালোই চলছিল দুই ছানা গোবলু আর টবলুকে নিয়ে। আবার ঘটল বিপর্যয়। তাতান স্কুল থেকে এসে দেখে রাস্তায় টবলুর পিছনের বাঁ পায়ের উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে, পালিয়ে গেছে এক অমানুষ। পায়ের একটা অংশ ঝুলছে। টবলু যন্ত্রণায় চিৎকার করছে। বাবা আর পাড়ার অন্য কাকুরা মিলে তাকে কুকুরের ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল। ঘন্টাখানেক পরে টবলুর পায়ে প্লাস্টার করে বাবা তাকে কোলে করে বাড়ির মধ্যে নিয়ে এলেন। তার প্লাস্টার করা পা নাড়া যাবে না। পা নাড়ালে জোড়া লাগবে না।

Advertisement

তাতানের ছোটবেলার যে দোলনাটা ছিল সেই খাঁচাটা এনে ভিতরে নরম কার্পেট বিছিয়ে মা টুবলুর থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। ছোট টুকরো করে চিকেন মাখা ভাত, বিস্কুট এইসব খেতে দিলেন টুবলুকে। তাতান টুবলুর চারপাশে ঘোরাফেরা করে, ওকে সান্ত্বনা দিয়ে কথা বলে। টুবলুও কুঁই-কুঁই করে উত্তর দেয়। ওরা দু’জনে ভালো বন্ধু হয়ে উঠল। দু’সপ্তাহ পরে টুবলুর পায়ে প্লাস্টার কাটার লোক এল। তাতানের বাবা টুবলুছানাকে কোলে করে বাইরে উঠোনে নিয়ে এলেন। সাবধানে প্লাস্টার কাটার সময় টুবলু, অসুবিধে হওয়াতে, জোরে জোরে কুঁই-কুঁই করে কাঁদছিল। তাই দেখে ওর মা লালি কুকুর ঘেউঘেউ করে উঠল। ভাবল, তার ছেলেকে বোধহয় মারছে। যা হোক, প্লাস্টার কেটে দেখা গেল পা জোড়া লেগে গিয়েছে। তাতান হাততালি দিয়ে উঠল। এরপর ক’দিন ওই পা জীবাণুশূন্য করার জন্য স্প্রে করতে হয়েছিল। টুবলু তখন ছটফট করে ওঠে। তাতান নেচেকুঁদে তাকে ভোলায়। মা টুবলুর খাবারের সঙ্গে ক্যালসিয়াম ওষুধ মিশিয়ে দেন যাতে কুকুরছানার ওই পা শক্ত হয়। এখন টুবলু ঘরের মধ্যেই ঘোরাফেরা করে, তাতানের সঙ্গে খেলা করে। মা বাইরে লালি কুকুর আর গবলুছানাকে খেতে দেন আর ঘরে খায় টুবলু। এইভাবে কিছুদিন যাবার পরে টুবলু কিছুটা বড় হলে মা বাবাকে বললেন, এবার টুবলুকে বাইরে ওর মা ভাইয়ের সঙ্গে দিয়ে দিই। তাতান জোরে জোরে মাথা নাড়ে— ‘না, টুবলু আমার বন্ধু, ওকে ঘরেই রাখবো।’ বাবা বললেন, ‘কুকুর স্বাধীন জীব, তুমি ওকে বন্দী করতে পার না। ও যদি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসে তবে তোমাকে ভুলবে না। বন্ধুর মত তোমার সঙ্গে খেলবে।’ পরদিন স্কুল থেকে ফিরে তাতান দেখে টুবলু ওর ভাই গবলু আর মা লালির সঙ্গে বাইরে আছে। তাতানকে দেখে টুবলু লাফাতে লাফাতে ঘরের মধ্যে এল।

Advertisement

আগের মত খেলতে লাগল। তাতান ওকে বিস্কুট খেতে দিল। বেশ কিছুক্ষণ পরে টুবলু নিজের থেকে ওর মা লালির কাছে চলে গেল। তাতানের মন খারাপ। মা বলল, ‘মন খারাপ করিস না, ও তোকে ভালোবাসে, মাঝে মাঝে ঠিকই তোর কাছে আসবে।’ সেদিন তাতান চেয়ার টেবিলে পড়তে বসেছে। হাতের লেখা শেষ করে সবে অঙ্ক ধরেছে, হঠাৎ দেখে পাশের চেয়ারে টুবলুসোনা উঠে বসেছে। তাতান হেসে ফেলল, টুবলুকে খুব আদর করে দিল। আবার ছুটির দিনে তাতান আর টুবলুসোনা বাইরে খেলাধুলো করে, নিজেদের মধ্যে খুনসুটি করে, ছুটোছুটি হুটোপাটি করে। পাড়ার লোকজন ওদের দেখে মজা পায়। তারা বলে, তাতান আর টুবলুসোনা খুব ভাল বন্ধু।

Advertisement