• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

কবিতা গুচ্ছ

রাত্রি গভীর হলে ঘন কুয়াশায় প্রতিটি বানভাসির মতো আমিও একা,বিষাদ এঁকে দিই—অপ্রত্যাশিত প্রত্যাগমন ভেবে...

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

শেষ প্রহরের দিকে
সজল দে

লক্ষ লক্ষ গাছ কেটে ফেলে
নাগরিক পার্ক বানালে
ফলবান বৃক্ষের সমূহ নষ্ট করে
বহুতল প্রাসাদ ওঠালে
গ্রীষ্মের ছায়া যে কমে যাবে
তাপমাত্রা যাবে বেড়ে
তা কি আমরা জানতাম না?
জানতাম।
অরণ্য দহন করে রাস্তা বাড়ালে
সহস্রাধিক ডিজেল গাড়ি ছুটলে
ততোধিক পেট্রোল গাড়ি গেলে
বাতাস দূষিত হবে
চোখ-নাক-ফুসফুস যাবে জ্বলে
তা কি আমরা জানতাম না?
জানতাম।
মিলিয়ন মিলিয়ন প্লাস্টিকের বোতল
বিলিয়ন বিলিয়ন পলিথিনের প্যাক
থার্মোকলের থালা-বাটি-গ্লাস
ব্যবহার করলে, করতেই থাকলে
হ্রদ-নদী-সাগরের শ্বাস রুদ্ধ হবে
জলজ প্রাণীদের নাভিশ্বাস উঠবে
পানি আর পানযোগ্য থাকবে না
তা কি আমরা জানতাম না?
জানতাম।
তবু আমরা বানিয়ে যাচ্ছি
কেন্দ্রীয় ভিস্টা ও কয়লাখাদান,
স্মার্ট সিটি তথা নেক্রোপোলিস
অভ্র, লোহা, তেল, পাথরের খনি
খুঁজতে খুঁজতে খুঁড়তে খুঁড়তে
উচ্ছেদ করছি আদিবাসী বসতি
ক্রমশ বাড়াচ্ছি
রেফ্রিজারেটর ও শীতাতপযন্ত্র
তদুপরি বাড়িয়ে যাচ্ছি
শেয়ার আর ফিক্সড ডিপোজিট
বিবেকের দিকে এক চোখ টিপে দিয়েছি
আরেক চোখে তাকিয়ে আছি
শেষ প্রহরের দিকে

Advertisement

 

Advertisement

মন্ত্র 
কানাইলাল জানা
মড়ার মতো খাটে শুয়ে আছে আমাদের বিবশ ভাবনাচিন্তা।
জাগাতেই হবে খড়কুটো জ্বেলে।
এতোটাই ঠাসবুনন মনখারাপের চাদর বিষণ্ণ বাতাস তাকে নড়াতে অক্ষম।
চৈতন্যকে জখম করতে মশগুল হাওয়ায় ভাসা দৈত্য দানব।
হাতে সেলাই কাঁথার ওপর সারি দিয়ে বসে থাকে
    নিজস্ব দুঃখবোধ যেন চড়ুই পাখির দল।
ভ্রমকে রেখে আসতে হবে বিলাসিতার বাইরে।
হত্যাদৃশ্যকে লঘু করতে চায় মনকেমনের বিকেল…
একটা বেড়ালের স্বপ্ন যেমন মাছ শিকার
           উদভ্রান্ত আচরণের স্বপ্ন তেমনি বিপর্যয়কে কাছে টানা।
শীতঘুমে চলে গেছে দহন। ফেরাতে হবে বৈকুন্ঠের আলোয়।
না হলে অনিবার্য উদাসীনতার শীতল জলে স্নান করে
      আমাদের ভাবগতিক হয়ে পড়বে ক্লান্ত ফেরিওয়ালার নিষ্ফলা আশ্বিন….

জলের মতো মানুষ
কল্যাণ গঙ্গোপাধ্যায়

আমি মানুষের মুখের দিকে তাকাই
তারা কত কথা বলে! অথচ শব্দ করে না,
ঠোঁট নড়ছে, চঞ্চল চোখগুলি অদ্ভুত নীরব,
তবু কেন চারিদিকে ভাষার যুদ্ধ থামে না?

দেওয়ালে কতদিন থেকে সময় ঝুলে আছে,
সে একবার গেলে আর ফিরে আসবে না
বেঁচে থাকাটাও ইদানীং বোঝা মনে হয়,
কথাটা ঘন্টার মতো মাথায় আঘাত করল!

মানুষ এখন আর মানুষের জন্য কাঁদে না,
তারা চোখ বুজে থেকে, জল মাপতে থাকে
কান্নাও খুব ব্যস্ত, ডায়েরিতে লিখে রাখে,
কখন নামতে হবে, তাল বুঝে সময়ের হাত ধরে!

একটা প্রাচীন গাছের কাছে জানতে চেয়েছিলাম
তোমার কখনো হাঁটার ইচ্ছে হয়নি?
গাছ চুপ করে ছিল, পাতাদের খিলখিল হাসি!
সারাক্ষণ এক শব্দহীন দুঃখে থাকে গাছ

চারিদিকে ঘুরছে কত রঙের মানুষ
সকলেই যে যার আলাদা রোদ্দুরে জ্বলে,
আজকাল সম্পর্ক, ভালোবাসাগুলি থাকে
ফাইলবন্দি হয়ে, প্রতিদিন ধুলো জমে যায়!

আয়নার সামনে আর নিজেকে দেখি না
আমার মনের কথা ছবি হয়ে ওঠে,
মানুষ জলের মতো স্বচ্ছ, নিরাকার, সহজ
না হয়ে, এখন সব যেন শুকিয়ে যাওয়া নদী!

 

সিমুই
বিমল দেব

মনিহারি ঘাটে
দাঁড়িয়ে ছিল সিমুই
হাওয়া দিচ্ছিল পূর্ব থেকে পশ্চিমে
বাতাসে মৌরি ফুলের গন্ধ
সেই কবেকার কথা
গত জন্মের স্মৃতি মনে হয়

পাণ্ডবাণীর মুদ্রা
কলাবতীর মূর্ছনা
সব উপমাকে ছাড়িয়ে
সিমুই মারোয়াঁ আর পুরিয়ার
মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে

 

ছায়ামানুষ
রবীনা মিত্র
আমার বুকের দীঘিতে চোখ রেখো
এমন গভীর অবগাহনে,
কাচ-জলে কম্পন তীব্র হলে,
ছুঁয়ে দেখো চোখের পাতার শিশির…
অচেনা ফুলের শরীরে বন্ধক রাখা উত্তাপ
ফেরত পেলে,
শিকল শিথিল হবে!
দীঘির নিচে, ঠান্ডা, ভিজে শ্যাওলাদের
নিঃশ্বাস থেকে উঠে আসা
সজীবতায় ডুব দেবে ঘুমন্ত পৃথিবী…
জাগরূক আঙুলেরা খুঁজে নেবে সুর,
জলে, এই যে!
এবার দেখা যাচ্ছে,
মোলায়েম ছায়া,
এখনো ভোরের নিষ্পাপ লাল, বহুদূর…

প্রত্যাগমন
শ্যামাশ্রী মুখোপাধ্যায়

এতো বড় উৎসবের পর
তুমি আমায় মনে রাখবে কিনা জানি না!

তবুও তোমার বলা
‘আমরা তো রইলাম’
কথার ওপর ভরসা করতে ইচ্ছে করছে খুব…

দূরে পাহাড় থেকে ভেসে আসছে বানভাসি হাহাকার…
এরা কখন আমার যন্ত্রণার সাথে মিশে গেছে…

তুমি কি অনুভব করতে পারছো!
ছুঁতে পাচ্ছো নৈঃশব্দ্য!

রাত্রি গভীর হলে
ঘন কুয়াশায় প্রতিটি বানভাসির মতো আমিও একা,
বিষাদ এঁকে দিই—
অপ্রত্যাশিত প্রত্যাগমন ভেবে…

 

মা আজও বলে
মো. লিয়াকত আলি

ঘুম ঠোঁটে ছুঁয়ে ছিলাম তোমার অধর স্তন
তখন কে জানত
তুমি কে?
আমিই বা কে?

পুরনো বাড়িটা আজও সজনে গাছের পাশে
আর আমি বিশ্রাম-চেয়ারে হিসাব কষি হাজার বর্গফুটে

ক্যালসিয়ামের প্রয়োজনে
আজও পুরনো বাড়িতে যাই
মা বলে, দুটো সজনে ডাঁটা পেড়ে নিয়ে যা

Advertisement