• facebook
  • twitter
Sunday, 14 December, 2025

সেরেংগেটির সিংহ

বাবা ক্যামেরা অন করেই রেখেছে। ডোডো এবার মায়ের দিকে চেয়ে বলল, ‘মা, তুমি দেখো। ওই দেখো পিঙ্ক কালারের পাখিটা কেমন ডানা ঝাপটিয়ে উড়ে গেল!’

কাল্পনিক চিত্র

সুব্রত সরকার

ল্যান্ডক্রুজারটা ছুটছে হলুদ ঘাসের জঙ্গুলে পথ ধরে। এই হলুদ ঘাসের বিরাট ছড়ানো বনকে বলে সাভানা গ্রাস। সেরেংগেটির সাভানা খুব বিখ্যাত। এমন হলুদ বনেই লুকিয়ে থাকে হলুদ রাজা-রানিরা। ওরা সব সেরেংগেটির সিংহ-সিংহী। ওদের গায়ের রংয়ের সঙ্গে মিশে যায় সাভানার সোনালি রঙ। তাই হলুদ বনে গা ডুবিয়ে শিকার ধরতে ওদের খুব সুবিধা।
ডোডো চোখে দূরবীন দিয়ে খুঁজছে সিংহদের।

Advertisement

স্কুলের সামার ভ্যাকেশনের ছুটিতে ডোডোরা সেরেংগেটিতে এসেছে। আজ সকাল থেকে গেম ড্রাইভ চলছে। এই জঙ্গলের বিখ্যাত ‘বিগ ফাইভের’ তিনটের দেখা পেয়েছে। হাতি, কেপ বাফেলো ও লেপার্ড। কিন্তু সিংহ ও গণ্ডার দেখা হয়নি। গভীর জঙ্গলে ল্যান্ডক্রুজারে করে চষে বেড়ানোকে বলে গেম ড্রাইভ। ডোডো গেম ড্রাইভের কথা জানত। আসার আগে বাবা ওকে জঙ্গলের অনেক গল্প বলেছে।

Advertisement

ডোডোর মা ভিডিও করতে ভালোবাসে। নিজের চ্যানেলও খুলেছে মা। নাম দিয়েছে, ‘লেটস গো, উইথ ডোডো’। বাবার দায়িত্ব ক্যামেরা। মা বলার কথাগুলো সাজিয়ে দেয়। আর কথাগুলো বলে ডোডো। ডোডোর ছোটদের মত করে বলা কথাগুলো শুনতে খুব ভালো লাগে। তাই আস্তে আস্তে ডোডোর ভিডিওগুলো খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ভিউয়ার ও সাবস্ক্রাইবার বাড়ছে। মা তো ভীষণ খুশি। বাবারও খুব আনন্দ।
সেরেংগেটিতে কমবেশি তিন হাজার সিংহ আছে। সিংহদের জন্যই বিখ্যাত সেরেংগেটির জঙ্গল। বিখ্যাত কয়েকটা সিংহের নামও জানে ডোডো, তারা হলো— স্কারফেস, বব জুনিয়র, মুসাফা।

একটু আগেই ওয়াকিটকিতে খবর এসেছে, সিংহ দেখা গেছে। ল্যান্ডক্রুজারের ড্রাইভার ডেভিড গাড়ি ঘুরিয়ে ছুটতে ছুটতে চলে এলো ঠিক সেই জায়গায়। কী আশ্চর্য একদম সত্যি খবর। ডেভিড গাড়িটাকে পজিশন মত দাঁড় করালো আকাশিয়া গাছের তলায়। মাথা উঁচু করে দেখা যাচ্ছে গাছের মোটা ডালে এক সিংহমামা ল্যাজ ঝুলিয়ে সুখনিদ্রা দিচ্ছেন! চারপাশ শুনশান। নিস্তব্ধ। ধূ-ধূ করছে হলুদ সাভানা। ডোডো এত কাছ থেকে সিংহকে দেখতে পেয়ে ভীষণ রোমাঞ্চিত। বাবা ক্যামেরা অন করে রেখেছে। মা বলল, ‘ডোডো, তুই বল এবার কেমন লাগছে, সুন্দর করে বল।’ ডোডো বলতে শুরু করল, ‘আমরা সেরেংগেটির জঙ্গলে গেম ড্রাইভ করতে করতে এবার একটা গাছের নিচে চলে এসেছি। গাছটার নাম আকাশিয়া। এই জঙ্গলে এরকমই দেখতে অনেক থর্ন টি আছে। আকাশিয়া গাছের ডালে সিংহ কেমন লেজ ঝুলিয়ে ঘুমিয়ে আছে তোমরা সবাই দেখো।’
বাবা ক্যামেরা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সিংহের পুরো ছবিটা নেওয়ার চেষ্টা করছে। ডেভিড গাড়িটাকে এগিয়ে পিছিয়ে সাহায্য করছে। মা তো ভীষণ ছটফট করছে। এত কাছ থেকে এমন লেজ ঝোলানো সেরেংগেটির ঘুমন্ত সিংহ দেখা ভাবাই যায় না। ডোডো এবার কী বলবে, মা শিখিয়ে দিচ্ছে।

এমন সময় হঠাৎ ডেভিড ফিসফিস করে বলল, ‘লুক লুক, এ লায়নেস ইজ কামিং উইথ আ থমসন গ্যাজেল দ্যাট শি হ্যাজ হান্টেড!’

বাবা সঙ্গে সঙ্গে ক্যামেরাটা ঘুরিয়ে দিল সেইদিকে। মা ডোডোকে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে পড়েছে গাড়ির হুড খোলা ছাদে। সিংহীটা ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। ওর মুখে থমসন গ্যাজেলের ঘাড়টা কামড়ে ধরা। টাটকা রক্ত চুঁইয়ে পড়ছে। রোদ মরে এসেছে। জঙ্গলের চারপাশ কেমন নিঝুম। গেম ড্রাইভের কোনও গাড়ি এদিকে দেখা যাচ্ছে না। ডেভিড আবার বলল, ‘দিস ইজ এ রেয়ার সিন!’

শিকার করে আনা মৃত গ্যাজেলটাকে মাটিতে রেখে সিংহী এবার মাটিতে গড়াগড়ি খেয়ে নিল একটু। মনে হলো ক্লান্ত শরীরটা আদর কুড়িয়ে নিল ঘাসের বন থেকে। বাবা ক্যামেরা অন করেই রেখেছে। মা ফিস ফিস করে বলল, ‘ডোডো, বল, স্টার্ট…’

ডোডো কোনও কথা বলে না। চুপ করে চেয়ে থাকে সিংহীর দিকে। মৃত গ্যাজেলটাকে দেখে ওর বড় কষ্ট হয়।
মা আবার ফিসফিস করে বলল, ‘ডোডো, সে সামথিং। ক্যামেরা অন। প্লিজ!’

ডোডো এবারও কিছু না বলে শিকার করে আনা সিংহীর দিকে চেয়ে রইল। মৃত থমসন গ্যাজেলটা মাটিতে পড়ে রয়েছে। ওর চোখদুটো কেমন উল্টে গেছে। করুণ দৃশ্য। ডোডো এবার বলল, ‘মা, চলো অন্যদিকে যাই।’
বাবা অবাক হয়ে বলল, ‘কেন তুই দেখবি না, সিংহটা কেমন লাফ দিয়ে এবার নামবে গাছের ডাল থেকে গ্যাজেলটাকে খাবে বলে!’
‘না। ভালো লাগছে না। চলো।’ ডোডোকে খুব আনমনা দেখায়।
মা একটু বিরক্ত হয়ে বলল, ‘জঙ্গলে এসে শিকার দৃশ্য না দেখে কেউ যায়!’
‘আমার জঙ্গল ভালো লাগে। শিকার দেখতে ভালো লাগে না।’ ডোডো কেমন স্পষ্ট করে বলল।

ল্যান্ডক্রুজারটা এগিয়ে চলেছে। দূরে একটা জলাশয় চোখে পড়ল। জল চিকচিক করছে। সেই জলের চারপাশে পাখিদের ভিড়। ডোডো খুব আনন্দ পেয়ে ডেভিডকে বলল, ‘আঙ্কল, তুমি ওখানে নিয়ে চলো। আমি ওই পাখিদের দেখব।’

ডেভিড হেসে বলল, ‘ওরা সব পেলিক্যান। মাইগ্রেট করে এসেছে। সাম আদার বার্ডস আর অলসো দেয়ার।’
বাবা ক্যামেরায় চোখ রেখে বলল, ‘ডোডো বল… বলতে শুরু কর…’

ডোডো বলছে, ‘জঙ্গলে এসে আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে জঙ্গলকে দেখতেই। বনের পশুপাখিদেরও দেখতে ভালো লাগে। তোমরাও যখন জঙ্গলে আসবে ওদের দেখবে। পশুদের মধ্যে শিকার করা আছে। কিন্তু আমরা কেন শিকার দৃশ্য দেখার জন্য ছটফট করব!.. ছবি তুলব!.. ওই দেখো, পেলিক্যানগুলো কেমন জলখেলা করছে। দেখো দেখো।’

বাবা ক্যামেরা অন করেই রেখেছে। ডোডো এবার মায়ের দিকে চেয়ে বলল, ‘মা, তুমি দেখো। ওই দেখো পিঙ্ক কালারের পাখিটা কেমন ডানা ঝাপটিয়ে উড়ে গেল!’ মা হেসে বলল, ‘ওই পাখিটার নাম ফ্লেমিংগো।’

ডোডোর খুব আনন্দ। ঝাঁকঝাঁক ফ্লেমিংগো দেখে ও খুব হাসছে। ফ্লেমিংগোগুলোর গায়ের রং দুধে আলতা। তাই খুব সুন্দর লাগছে। অনেক ফ্লেমিংগো চোখের সামনে। ডেভিড আরও কাছে এগিয়ে নিয়ে চলেছে ল্যান্ডক্রুজারটাকে। ডোডো আনন্দে হাসতে হাসতে বলল, ‘আমরা এখন এক পাখিপুকুরের দিকে এগিয়ে চলেছি। তোমরা সবাই দেখো… সঙ্গে থাকো…’
মা হেসে বলল, ‘লেটস গো উইথ ডোডো…।’

Advertisement