কুমকুম বৈদ্য
পিকলু এইবারের গরমের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল, সেখানে থাকে তার দুই কাকার পরিবার আর ঠাকুমা ঠাকুরদা। প্রায় দু’বিঘা ধানি জমি, একটা ফল গাছের বাগান— তাতে আম, জাম, লিচু, জামরুল, পেয়ারা কিছুই বাকি নেই। ক’দিন পুকুরে সাঁতার কেটে চান করে, বাগানের ফলপাকুড় পেড়ে খেয়ে, নষ্ট করে, দুটি ছোট ভাই আর একটি বোনের সঙ্গে খেলে বিস্তর মজা করেছে পিকলু। তবে সব থেকে মনে ধরেছিল দুটি জিনিস এক হলো ধান জমিতে দাঁড়িয়ে থাকা কাকতাড়ুয়া আর একটা হলো বাদুড় তাড়ানোর গুলতি কল। লিচু একটু বড়ো হলেই নাকি বাদুড় এসে মানুষের মতো খোলা ছাড়িয়ে খেয়ে যায়, তাই ছোটকা একখানি জবরদস্ত কল বানিয়েছে। একটা বন্দুকের মতো নলে গোটা পঞ্চাশ ছোট ছোট ঢিল পুরে দিয়েছে, আর একখানি চাকার সঙ্গে একটা তার দিয়ে ইলেকট্রিক দেবার বন্দোবস্ত, সুইচ দিলে চাকা ঘোরে আর চাকা ঘুরলে নলের মুখে লাগানো বেলুনের পর্দাতে চাপ দেয় একটা ছোট্ট লাঠি, অমনি মুখ দিয়ে ঢিল গুলির মতো ছুটে যায় গাছ তাকে করে, রাতে ঘুমাতে যাবার আগে চালিয়ে দেওয়া হয় ওই কল, বাদুড় ধারে পাশে ঘেঁষতে পারে না মোটে। বাড়ি ফিরে অব্দি গত তিনমাস বাবার পিছনে ঘুরে ঘুরে চাঁদনি মার্কেট থেকে জিনিস কিনে এনে একখান জব্বর তাড়ুয়া মেশিন বানিয়েছে পিকলু, ব্যাটারি চালিত। তাতে আবার একখানা বদখত দেখতে পুতুল বসিয়ে দিয়েছে, ঢিল ছোঁড়ার সঙ্গে সঙ্গে লুকোনো খোপ থেকে বেরিয়ে সে-ও দাঁত মুখ খিচিয়ে দিয়ে আবার লুকিয়ে পড়ে।
গতকাল পিকলুর মা আচারের বোতল রোদে দিয়েছিলেন, পাহারাতে পিকলুর তাড়ুয়া মেশিন। তখন সন্ধে সন্ধে হবে, ওবাড়ির তিন্নি এসেছিল আচার চাইতে। মা বললেন, ছাদে আছে নিয়ে আয় তো মা। যেই তিন্নি ছাদে গেছে, অমনি পিকলুর তাড়ুয়া ওর দিকে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে দেখিয়েছে, মেয়ে ভিরমি খায় আর কী! একটু আগে তিন্নি আর ঠাকুমাকে বাড়িতে ঢুকতে দেখে পিকলু ভয়ে ভয়ে ছিল, ভেবেছিল ঠাকুমা বকুনি দেবেন। কিন্তু তিন্নির ঠাকুমা একগাল হেসে বললেন, দাদুভাই আমার জন্যেও যে অমন একটা তাড়ুয়া বানিয়ে দিতে হবে। আমি যে আমসত্ত্ব রোদে দেব। তিন্নিও ফিক করে হেসে ফেলে বলল, আমি আর ভয় পাবো না।