বাবলু কাজি
কলকাতার নোয়াপাড়ায় বাড়ি মিলির। পাড়ার মেইন রোডের উপর সুন্দর দেখতে ওদের বাড়িটা। বাড়িটা চেনে না এমন একজনও নেই এ পাড়ায়। নতুন কেউ বাড়ির পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে একবারের জন্য হলেও তাকাবেই ওদের বাড়ির দিকে। চেনার বা তাকিয়ে দেখার বিশেষ কারণ ওদের বাঘু। কুকুরটা বাঘের মতোই বিশাল দেহের, গর্জন শুনে বুক কেঁপে উঠবে কুস্তিগির লোকেরও। পথের দুটো নেড়ি কুকুর মাঝে মাঝে ওকে মুখ ভেংচে রাগাতে আসে যখন সে পথের ধারের গ্রিলবারান্দায় এসে চেঁচায়। সে এক মজার দৃশ্য।
নেড়িগুলো দূর থেকেই কিংবা খুব জোর গ্রিলের থেকে হাত দুয়েক দূরে দাঁড়িয়ে বাঘুকে যেন ঠাট্টা করে বলে, ‘খাও…দাও… আরররররর ঘু…উউউ মাও, দাও না.. পাহা..রাও? খাও…. শুধু খাও… গতর বাড়াও।’ বাঘুও ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে বলতে থাকে— ‘ওওওররররে.. ভ্যাগাবন্ডেররর দললল… নেড়ি কুত্তার দল… খাস তো পথে ফেলা এঁটোকাঁটা আআ.. আররর লোওওওকের লাথি ঝাঁটা… ধিক… ও জীবনননন।’ মিলি ওদের কথোপকথন বোঝে না ঠিক কিন্তু অনুমান করে এসব ওদের পরস্পরের তরজা লড়াই। আরো মজা পায় যখন বাঘু প্রচণ্ড জোরে ওদের ধমকে গ্রিল ভেঙে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিমায় দু-পায়ে ভর দিয়ে লম্বা হয়ে দাঁড়ায় আর ভীতু দুটো তিন হাত পিছিয়ে যায়, আর বাঘু রক্তচক্ষু দেখিয়ে গরররর, গররররর করে।
একদিন মিলি একটা দৃশ্য দেখলো। ওদের বাড়ির বেশ কয়েকটা বাড়ির পরেই বেনিয়ান ট্রি কমপ্লেক্সের এক ফ্ল্যাটের ডালিয়া পিসি ও ওঁর ডাক্তার বর মানে সবুর পিসেমশাই পথের নেড়ি কুকুরগুলোকে কিছু খাওয়াচ্ছেন। বাঘুও বেশ কৌতূহল নিয়ে তা দেখছে। মিলি দূর থেকে বুঝতে পারছে না হাতের খাবারটি কোন বস্তু। কিন্তু দৃশ্যটি বেশ সুন্দর৷ আর একটু কাছে হলে মিলি মোবাইল ক্যামেরায় ছবি তুলে রাখতো। কেমন সুন্দর, না বললে কেউ বুঝবে না। পিসেমশাই হাতের প্যাকেট থেকে খাবারের একটা টুকরো বের করে হাত উঁচুতে তুলে হাতটা ডাইনে বাঁয়ে করছেন আর দুটো কুকুর দু-পায়ে ভর দিয়ে ওটার নাগাল পাবার চেষ্টা করছে।
হঠাৎ এক কাণ্ড ঘটে গেল। কোত্থেকে অন্য একটা কুকুর ছুটে এসে সবুর পিসেমশাইয়ের বাঁ হাতে ঝুলে থাকা খাবারের প্যাকটটা ছিনিয়ে ছুটতে লাগল। যেই ও মিলিদের বাড়ির কাছে এসেছে অমনি বাঘু বাঘের মতো গর্জন করে উঠতেই সে ওটা ফেলে ক্যাঁও করে নাকি কান্না দিয়ে ল্যাজটা ধুতির কোঁচা করার মতো পরেই পগার পার। মিলির হাসি আর থামে না কুকুরটার ধুতির কোঁচার বিষয়টা ভেবে। আরে ফেলে যাওয়া প্যাকেটটায় ওগুলো কী? ও মা, লেড়ুয়া বিস্কুট। সবুর পিসেমশাই তাহলে পথের কুকুরগুলোকে লেড়ুয়া খাওয়াচ্ছিলেন। দূর থেকে ওই কুকুরগুলো সব দেখে ছুটে এসে ওগুলো মহানন্দে খেতে লাগলো। কেন জানি না বাঘু অভাবী পথকুকুরগুলোর প্রতি আজ কোনো রাগ দেখালো না বা ঘৃণা প্রকাশ করলো না। একমনে ওদের খাওয়া দেখে যাচ্ছে সে। চোখে সহানুভূতির দৃষ্টি। ওর ধমকের জন্যই আবার ওই বিস্কুটগুলো খাবার সুযোগ পেয়ে কুকুরগুলোও খুব খুশি বাঘুর উপর, তা বোঝা গেল খাওয়ার শেষে বাঘুর দিকে তাকিয়ে কুঁই ই ই ই… ওঁয়াউ বলে যেন ধন্যবাদ জানানোয়। বাঘুও বন্ধুত্বের হাত বাড়ালো গ্রিলের ফাঁক দিয়ে।
মিলি আজ খুব খুুশি। মনে মনে ঠিক করলো কাল বাঘুর সঙ্গে ওদেরকেও লেড়ুয়া বিস্কুট খাইয়ে এমনই আনন্দ করবে।