স্নেহাশিস সুর
সুন্দরবন দেশের তথা বিশ্বের সবচেয়ে বিপর্যয় প্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত।
বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় যেসব পদক্ষেপ বা প্রকল্প নেওয়া হয় তা মূলত বিপর্যয়ের আগে,
বিপর্যয়ের সময় এবং বিপর্যয়ের পরে করা হয়। আর বিপর্যয়ের পরের কাজ মূলত পরিকাঠামোর উন্নয়্ন,
যেমন বাঁধ মেরামত বা নতুন বাঁধ গড়া, পড়ে যাওয়া বাড়ি, ঘরদোর বা ভেঙ্গে যাওয়া রাস্তা তৈরি, এইসবই বেশি
দেখা যায়। কিন্তু বিপর্যয়ে মানুষজনের শরীরের যে ক্ষতি হয় তার পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা সুন্দর বনের
গভীরে যে বেশ অপ্রতুল এবং এই ব্যাপারের দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ গ্রহনের প্রয়োজন সেটা বুঝেই
ইউনিসেফের পক্ষ থেকে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকায় এই ‘বোট ক্লিনিক’ এর ব্যবস্থা করা হয়।
বিভিন্ন ব্লকের প্রত্যন্ত এলাকায় কোনও আশ্রয় গৃহে বা বিদ্যালয়ে আগের থেকে জানান দিয়ে এই চিকিৎসা
শিবিরের আয়োজন করা হয়। সেখানে থাকেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী । এই শিবিরে বিনামূল্যে দেওয়া হয়
চিকিৎসা পরিষেবা এবং প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র। স্থানীয় আশা কর্মী এবং অন্যন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের
মারফৎ আগের থেকে খবর পেয়ে মা এবং শিশুরা যেমন আসেন, তেমনই বড়রাও আসেন এই স্বাস্থ্য শিবিরে।
সুন্দরবনের লাহিড়িপুরে রজতজুবিলি বিদ্যালয়ের সামনে এক আশ্রয়গৃহে দেখা গেল যে বহু বয়ষ্ক মানুষ
এসেছেন এইধরনের বিশেষ স্বস্থ্য শিবিরে যারা জীবনে এই প্রথম পাশ করা ডাক্তারকে দেখালেন। খুব সমস্যা
না হলে কেউ দূরের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেতেন না; কিন্তু নিজের গ্রামে এই স্বাস্থ্য শিবির হওয়ায় সুন্দরবনের
সাধারণ মানুষ এই ধরনের শিবিরে চিকিৎসার সুযোগ নিচ্ছেন।
রাজ্য সরকারের পরামর্শে, ইউনিসেফের উদ্যোগে, ইকো বা ইউরোপিয়ন সিভিল প্রোটেকশন এন্ড
হিউমেনিটেরিয়ান এইড অপারেশন্স সংস্থার অর্থ সাহায্যে এই শিবির সংগঠিত করা হচ্ছে। ঘুর্ণী ঝড় র্যামেল
পরবর্তী মোকাবিলা ও পুনর্গঠন সংক্রান্ত পদক্ষেপের অঙ্গ হিসেবে বিগত নভেম্বর থেকে এইবছরের
জানুয়ারি পর্যন্ত সুন্দরবনের ১০টি ব্লকে মোট ১৬৩টি এই ধরণের শিবির করা হয়েছে । ইউনিসেফের
পশ্চিমবঙ্গ দপ্তরের প্রধান ড.মনজুর হোসেন জানান, “বিপর্যয়ের প্রাথমিক আঘাত কাটিয়ে উঠলেও
প্রভাবিত মানুষরা বিপর্যয়ের ফলে যে শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তা মোকাবিলায় এই ধরণের স্বাস্থ্য
শিবির স্থানীয় মানুষদের মধ্যে বিশেষ সাড়া ফেলেছে। এই বিপর্যয় প্রবণ সুন্দরবন এলাকায় বিপর্যয়
মোকাবিলা ও পুনর্গঠনের দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা হিসেবে এই পদক্ষেপ স্থানীয় মানুষের খুবই কাজে আসছে”।