প্রবল বিরোধিতার মধ্যেও লোকসভায় পাশ হয়ে গেল জিরামজি বিল। বৃহস্পতিবার ধ্বনিভোটে বিলটি পাশ হওয়ার পর, এইদিনের জন্য লোকসভার অধিবেশন মুলতুবি করে দেন স্পিকার ওম বিড়লা। ১০০ দিনের কাজ বা মহাত্মা গান্ধী জাতীয় কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা আইন তথা মনরেগার নাম পরিবর্তন করার কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এদিন উত্তাল হয়ে ওঠে সংসদ চত্ত্বর। মোদী সরকারের এই প্রস্তাবিত বিলের বিরোধীতায় সোচ্চার হয় তৃণণূল কংগ্রেস-সহ ইন্ডিয়া ব্লকের শরিক দলগুলি।
বৃহস্পতিবার কলকাতার ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহে শিল্প ও বাণিজ্য সম্মেলনে এই নামের পরিবর্তন নিয়ে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি বলেছেন, ‘মনরেগা থেকে গান্ধীর নাম বাদ দেওয়া লজ্জার। জাতির জনককে আমরা ভুলতে বসেছি।’ মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘রাজ্যের কর্মশ্রী প্রকল্পের নাম বদলে মহাত্মা গান্ধীর নামে রাখছে তাঁর সরকার। বিজেপি সরকারকে কটাক্ষ করে মু্খ্যমন্ত্রী বলেন, আপনারা গান্ধীকে সম্মান না দিলেও আমরা দেব। আমরা সম্মান দিতে জানি।’
Advertisement
মঙ্গলবার লোকসভায় পেশ করা হয় ‘বিকশিত ভারত গ্যারান্টি ফর রোজগার অ্যান্ড আজীবিকা মিশন (গ্রামীণ)’, অর্থাৎ ‘জিরামজি’। এতদিন পর্যন্ত এই প্রকল্পের নাম ছিল ‘মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপাওয়ারমেন্ট গ্যারান্টি অ্যাক্ট, ২০০৫’, অর্থাৎ ‘মনরেগা’। প্রস্তাবিত বিলে মহাত্মা গান্ধীর নাম না থাকায় সরব হয়ে ওঠে বিরোধী দলগুলি। এই বিলে বছরে ১০০ দিনের বদলে ১২৫ দিন কাজ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রকল্পের ৪০ শতাংশ ব্যয়ভার বহন করতে হবে রাজ্যগুলিকে। কেন্দ্রীয় বরাদ্দ ৯০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬০ শতাংশ করা হয়েছে। এই নিয়েও আপত্তি রয়েছে বিরোধী সাংসদদের।
তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই পদক্ষেপ শুধুমাত্র একটি নাম পরিবর্তন নয়, এটি গ্রামীণ অর্থনীতির উপর পরিকল্পিতভাবে আদর্শগত আঘাত। গত কয়েক বছর ধরেই এই প্রকল্পে বাধা সৃষ্টি করে আসছে কেন্দ্র। কখনও টাকা আটকে রাখা হয়েছে, কখনও শ্রমিকদের মজুরি মেটাতে দেরি করা হয়েছে। এবার নাম পরিবর্তন করে সেই প্রকল্পের আসল উদ্দেশ্যকে সংকটে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের।
Advertisement
প্রস্তাবিত জিরামজি বিল নিয়ে বুধবার আলোচনা হয় সংসদে। অধিবেশন বন্ধের সময়ও বিতর্কের অবসান হয়নি। শাসক ও বিরোধী মিলিয়ে মোট ৯৮ জন এই বিল নিয়ে বক্তব্য রাখেন। আলোচনা, বিতর্ক চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। রাত দেড়টার পর অধিবেশন মুলতুবি ঘোষণা করেন স্পিকার।
বৃহ্স্পতিবার প্রস্তাবিত বিল নিয়ে সংসদ চত্ত্বরে মিছিল করেন বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার সাংসদরা। এরপর অধিবেশন শুরু হলে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান বিরোধীদের প্রশ্নের জবাব দিতে উঠলে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিলের কাগজ ছিঁড়ে সরকারবিরোধী স্লোগান দেওয়া শুরু হয়। গান্ধীর ছবি নিয়ে ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখান অনেকে। বিলের বিরোধিতা করে বিস্তারিত আলোচনার জন্য সেটি সংসদীয় কমিটিতে পাঠানোর দাবি জানান বিরোধীরা। শিবরাজ সিং চৌহানের সঙ্গে বিতর্ক হয় প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর। বিতর্কে অংশ নেন ডিএমকে-র টিআর বালু, এসপি-র ধর্মেন্দ্র যাদবের। এই বিরোধিতার মধ্যেই ধ্বনিভোটে বিলটি পাশ করানো হয়।
শুক্রবার শীতকালীন অধিবেশনের শেষ দিন। বিরোধীদের অভিযোগ, তাড়াহুড়ো করে শুক্রবারই বিলটি রাজ্যসভায় পাশ করানো হতে পারে। তবে বিরোধী শিবির থেকে বলা হয়েছে, এই বিলের বিরুদ্ধে তারা তাদের লড়াই জারি রাখবে।
শুধু সংসদের অন্দরে নয়, এই ইস্যুতে রাজপথে নেমেও বড়সড় আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। কারণ পশ্চিমবঙ্গের পরিপ্রেক্ষিতে এই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্যের ১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাত জারি রয়েছে তৃণমূলের। সম্প্রতি সংসদের অভিষেক জানতে চেয়েছিলেন, ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১০০ দিনের কাজে কোন রাজ্যের কত টাকা বকেয়া রয়েছে, বকেয়া মেটাতে কতটা সময় নেওয়া হয়েছে। অভিষেকের প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী কমলেশ পাসওয়ান জানান, ২০২৪-২৫ পর্যন্ত সব বকেয়া পরিশোধ করা হয়েছে বাংলা ছাড়া। অর্থাৎ, বাংলার টাকা যে মেটানো হয়নি, তা স্বীকার করে নেয় কেন্দ্র। কেন্দ্র জানিয়েছে, বাংলা বাদে অন্য সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মোট ৬৯ হাজার কোটিরও বেশি টাকা পেয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে বাংলা নেই। শুধু তাই নয়, ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের বাকি অংশের জন্য যে বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে, তাতেও বাংলার নাম নেই। গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ডিসেম্বরের ৩ তারিখ পর্যন্ত কাজের জন্য আরও প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও বাংলার নাম নেই। রাজ্যের শাসকদলের দাবি, সব মিলিয়ে এই খাতে বাংলার প্রাপ্য প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা।
Advertisement



